তাঁর শেষ ইচ্ছেগুলো
নীরবেই চলে গেলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। তিনি ছিলেন দেশের কীর্তিমান এক মানুষ। অথচ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন একেবারেই সাদামাটা। জীবনের বিদায় বেলাতেও সাদামাটাভাবেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেয়েছেন। খুব সাধারণভাবে, নিভৃতে ও দ্রুততার সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিদায় পর্ব সারার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর আগে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
কবীর চৌধুরী ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট চিঠিটি লিখেছেন। চিঠিতে মৃত্যুর পর মরদেহ সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে না নেওয়ার ইচ্ছার কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করে গেছেন তিনি। তবে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের টেলিফোন করে মৃত্যুর খবর জানাতে বলেছেন। চিঠির শেষ অংশে তিনি লিখেছেন তাঁর এই চাওয়ার পেছনের কারণ। 'শেষ ইচ্ছাগুলো' শিরোনামে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে চারটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন ইংরেজি সাহিত্যের এই শিক্ষক। এই ইচ্ছার পেছনের কারণও তিনি উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে মৃত্যুর পর খুব দ্রুত কবরে শোবার ইচ্ছা প্রকাশ করে কবীর চৌধুরী লিখেছেন, 'আমি চাই আমাকে খুব দ্রুত কবর দেওয়া হোক। অবশ্যই মারা যাওয়ার সাত থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে।'
বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ চেয়েছেন তাঁর জানাজা একবারের বেশি হবে না। আর তা অনুষ্ঠিত হবে সবচেয়ে কাছের মসজিদে। তাঁর কবরের ওপর যাতে ভবিষ্যতে অন্যদেরও কবর দেওয়ার সুযোগ থাকে সে জন্য তিনি আজিমপুর বা বনানী কবরস্থানের মতো সাধারণ কবরস্থানে সমাহিত হতে চেয়েছেন।
কবীর চৌধুরী লিখেছেন, 'মৃত্যুর পর আমার জন্য যেন কোনো মিলাদ, কুলখানি বা চলি্লশার আয়োজন করা না হয়। একান্ত প্রয়োজন হলে নাগরিক শোকসভা বা স্মরণসভার আয়োজন করা যেতে পারে।' তবে এগুলোও তিনি এড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
এ নির্দেশনার কারণ হিসেবে এই জাতীয় অধ্যাপক লিখেছেন, 'হয়তো লোকদেখানো অনুষ্ঠান এবং শবযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আমার হৃদয় বিতৃষ্ণায় ভরে উঠছে। আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, তলস্তয়ের মতো গাঁয়ের কোনো রেললাইনের ধারে না হোক, অন্তত ঢাকার প্রান্তে কোনো এক ঝিলের পাশে যদি আমার মৃত্যু হতো!' আর বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের মতো মৃত্যু হবে না- এমনটা জেনেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'আমার শেষ ইচ্ছাগুলো আমি মনেপ্রাণে অনুভব করি। আশা করি, আমার এ শেষ ইচ্ছাগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো হবে।'
No comments