জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী-তাঁর আরব্ধ কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে
জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর জ্যোতির্ময় উপস্থিতি আমাদের আলোকিত করত। গতকাল মঙ্গলবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। খবরটি শোনা মাত্রই গোটা জাতি শোকস্তব্ধ হয়েছে। তাঁর অন্তর্ধানে জাতির এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো। যে মানুষটি ছিলেন মনে-প্রাণে একজন বাঙালি, বাঙালি জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে যাঁর উপস্থিতি আমাদের উজ্জীবিত করত, সেই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই, এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। বহু গুণে গুণান্বিত, সব অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সদা প্রতিবাদী ভূমিকার এই
কবীর চৌধুরী ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষাসচিব। সচিব হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন সরকারি-বেসরকারি, গ্রাম-শহরে শিক্ষার যে ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়, তা থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত করতে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষার আলো বিস্তারের ব্রত নিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করে যান। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিনি জাতীয় অধ্যাপকও নিযুক্ত হন। প্রবন্ধসাহিত্যে কবীর চৌধুরী ছিলেন অতুলনীয়। একইভাবে অনুবাদসাহিত্যেও তাঁর তুলনা শুধুই তিনি। যেমন ইংরেজি থেকে বাংলায়, তেমনি বাংলা থেকে ইংরেজিতে তিনি সহজ ও প্রাঞ্জল অনুবাদ করেছেন। অনূদিত ও রূপান্তরিত_দুই ধরনের গ্রন্থই রয়েছে তাঁর। বিশ্বসাহিত্যের সেরা কর্মগুলোকে তিনি যেমন বাঙালি পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন, তেমনি বাংলা সাহিত্যের সেরা সম্পদগুলোকেও বিশ্ব পরিসরে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। ছোট ভাই শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার শহীদ মুনীর চৌধুরীকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ক্ষণজন্মা মুনীর চৌধুরীর নাটকগুলোও কবীর চৌধুরী ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।
কবীর চৌধুরীর পরিচয় কেবল শিক্ষাবিদ কিংবা সাহিত্যিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ব্যক্তিজীবনে প্রগতিশীল এবং বাম রাজনীতির একজন অনুসারী ছিলেন। মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক কবীর চৌধুরী বরাবরই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে গেছেন। তিনি ছিলেন স্বৈরাচার ও সামরিক শাসনের ঘোর বিরোধী। শুধু লেখায় নয়, সভা-সমাবেশে বক্তৃতায়ও তিনি সোচ্চার ছিলেন সদা সর্বদা। অসাম্প্রদায়িক কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। নারীদের কিংবা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে তিনি বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। শিশুদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরিতে ছিলেন সক্রিয়। তাঁর স্ত্রী মেহের কবীর ছিলেন অধুনালুপ্ত 'মুকুল ফৌজ'-এর একসময়কার প্রধান সংগঠক। খেলাঘর ও কচিকাঁচার সঙ্গে কবীর চৌধুরীর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন, তা হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যখন বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে, তাতেও তাঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল।
বর্তমান রাজনীতির কিছু নেতিবাচক দিক আরো অনেকের মতো তাঁকেও যথেষ্ট পীড়া দিত; এবং তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন, রাজনীতি এসব কলুষমুক্ত হোক। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আরব্ধ অনেক কাজই অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। সংগত কারণেই আমরা মনে করি, আজ আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো দ্রুততার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা। আর সেটাই হবে তাঁর প্রতি আমাদের যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন। আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
কবীর চৌধুরীর পরিচয় কেবল শিক্ষাবিদ কিংবা সাহিত্যিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ব্যক্তিজীবনে প্রগতিশীল এবং বাম রাজনীতির একজন অনুসারী ছিলেন। মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক কবীর চৌধুরী বরাবরই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে গেছেন। তিনি ছিলেন স্বৈরাচার ও সামরিক শাসনের ঘোর বিরোধী। শুধু লেখায় নয়, সভা-সমাবেশে বক্তৃতায়ও তিনি সোচ্চার ছিলেন সদা সর্বদা। অসাম্প্রদায়িক কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। নারীদের কিংবা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে তিনি বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। শিশুদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরিতে ছিলেন সক্রিয়। তাঁর স্ত্রী মেহের কবীর ছিলেন অধুনালুপ্ত 'মুকুল ফৌজ'-এর একসময়কার প্রধান সংগঠক। খেলাঘর ও কচিকাঁচার সঙ্গে কবীর চৌধুরীর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন, তা হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যখন বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে, তাতেও তাঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল।
বর্তমান রাজনীতির কিছু নেতিবাচক দিক আরো অনেকের মতো তাঁকেও যথেষ্ট পীড়া দিত; এবং তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন, রাজনীতি এসব কলুষমুক্ত হোক। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আরব্ধ অনেক কাজই অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। সংগত কারণেই আমরা মনে করি, আজ আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো দ্রুততার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা। আর সেটাই হবে তাঁর প্রতি আমাদের যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন। আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
No comments