মাদক বহনে নিত্যনতুন কৌশল by আতাউর রহমান

গ্রেফতার এড়াতে মাদক বহনে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে তাদের এসব কৌশলের কাছে প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ দমনে পুরনো আমলের সোর্সই তাদের ভরসা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীরা যতই কৌশলী হোক, আইনের হাতে তারা ধরা পড়বেই। নিয়মিত অভিযানে তাদের মাদক বহনের


নিত্যনতুন কৌশলও হার মানছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে মাদক ব্যবসায়ীরা এক সময় শরীরের সঙ্গে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেঁধে গন্তব্যে নিয়ে গেলেও এখন তা করছে না। শিশু ও নারীদের দিয়ে মাদক বহনের পথ থেকেও অনেকটা সরে আসছে। নিত্যনতুন কৌশলের অংশ হিসেবে তারা এখন অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী কফিন, শিশুদের স্কুলব্যাগ, বড় ধরনের মিষ্টি কুমড়া, পত্রিকার গাড়ি_ এমনকি কোরবানির পশুর মাংসের ভেতরেও মাদক বহন করছে। এ ছাড়া নিজের শার্টের কলারের ভেতর ভরে আর বাউলের বেশ ধরে সীমান্ত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে হেরোইন পেঁৗছে দিচ্ছে বলেও তথ্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, ১৮ নভেম্বর গাজীপুরের জয়দেবপুর বোর্ডবাজার এলাকা দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স রাজধানী ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতর রাখা কফিন ঘিরে বিষণ্ন হয়ে বসা ছিলেন তিন ব্যক্তি। এমন দৃশ্য দেখে যানজটে আটকাপড়া আশপাশের গাড়ি থেকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাধারণ মানুষ। তবে র‌্যাব সদস্যরা বোর্ডবাজারে হঠাৎ করেই ঘিরে ধরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। ভেতরে রাখা কফিন থেকে লাশের পরিবর্তে র‌্যাব সদস্যরা উদ্ধার করে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল!
ওই অ্যাম্বুলেন্স থেকে চালক দেলোয়ার হোসেন, নীরব, বিপ্লব ও খোকন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে ফেনসিডিল ভর্তি দুটি কফিন উদ্ধার করা হয়। কফিনে ভরে ওই মাদকগুলো স্পটে পেঁৗছে দেওয়ার কথা ছিল মাদক ব্যবসায়ীদের। গোপন খবরের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা সেগুলো আটক করে।
এ ছাড়া ১৩ নভেম্বর গেণ্ডারিয়া এলাকা থেকে কয়েকটি নারকেলসহ আবু তাহের নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে নারকেলগুলোর ছোবড়া তুলে বিস্মিত হয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। ছোবড়ার ভেতর পাওয়া যায় ১ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট!
১৯ নভেম্বর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় ঘটে আরও অবাক করা ঘটনা। ওইদিন বিকেলে র‌্যাব-১-এর একটি দল সজীব (১২) ও আকলিমা (১০) নামে দুই শিশুকে মাংসের পাতিলসহ আটক করে। পরে এর ভেতর পাওয়া যায় পাঁচ কেজি গাঁজা! র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা ওই দুই শিশুকে ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় মাদক বহন করছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কুলসুম নামে এক নারীর কাছ থেকে একটি বড় আকারের মিষ্টি কুমড়া উদ্ধার করা হয়। পরে কুমড়াটি কেটে এর ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কেজি গাঁজা। এর আগে একই এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কারের সিডি প্লেয়ারের পেছনের ফাঁকা জায়গা ও গাড়ির হেডলাইটের পেছনের ফাঁকা জায়গা থেকে ৩৪১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। রাজধানীতে প্রায়ই এভাবে মাদক পাচারের ঘটনা ধরা পড়ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদক পাচারকারীরা বড় চালানসহ রয়ে যায় অগোচরে। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিতে প্রতিদিনই কৌশল পাল্টাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এক কৌশলে দু'একবারের বেশি মাদকদ্রব্য বহন করে না তারা। সাধারণত দেশের সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে মাদকের চালান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব এলাকা থেকে মাদক বহনের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেন ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমেও মাদকদ্রব্য রাজধানীতে আনা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ঢাকা মেট্রো অঞ্চল) মজিবুর রহমান পাটোয়ারী সমকালকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা জাতীয় সংসদের ভুয়া স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে মাদক বহন করে থাকে। তারা লাশের কফিনের মধ্যে মাদক বহনের মতো ঘৃণ্য কাজও করছে। তবে প্রতিনিয়ত অভিযানের মুখে মাদক ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন সব কৌশল ভেস্তে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.