শেয়ার নেই, তবু কম্পানির মালিক by নাজমুল আলম শিশির

শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক এ এস এফ রহমানের কাছে কম্পানিটির দুটি শেয়ার রয়েছে। অপর দুই পরিচালক সালমান এফ রহমান এবং নাজমুল হোসেন প্রত্যেকের কাছে আছে একটি করে শেয়ার। কম্পানিটির ১১ কোটি ১১ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৩টি শেয়ারের মধ্যে সাকুল্যে এই চারটি শেয়ারের মালিক উদ্যোক্তা পরিচালকরা! শাইনপুকুর সিরামিকসের পরিচালকদের তাও একটি করে শেয়ার আছে।


পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর পরিচালকদের মধ্যে অন্তত ২০ জন আছেন, যাঁদের হাতে একটিও শেয়ার নেই। আর ২ শতাংশের নিচে নিজ কম্পানির শেয়ার রয়েছে- এমন পরিচালকের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। পরিচালকদের মালিকানার সর্বশেষ হিসাব করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানিয়েছে, বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অর্ধেকের কাছেই ২ শতাংশ শেয়ারও নেই। ২০২টি কম্পানির পরিচালক আছেন তিন হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৪৯১ জনের কাছে ২ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে। আর ০.১ শতাংশ শেয়ারও নেই- এমন পরিচালকের সংখ্যা ৪১৩ জন। ০.৫ শতাংশের নিচে শেয়ার হাতে আছে- এমন পরিচালক আছেন ৭৭১ জন। কম্পানির মোট শেয়ারের ১ শতাংশও নেই- এমন পরিচালক আছে ১০৯২ জন।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কম্পানির পরিচালকরা তাঁদের কাছে থাকা ১০ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩টি শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকরা সর্বোচ্চ ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর পরেই রয়েছে ম্যাকসন স্পিনিং। এ কম্পানির পরিচালকরা বিক্রি করেছেন ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার। যমুনা ব্যাংকের পরিচালকরা ছেড়ে দিয়েছেন ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩২১টি শেয়ার। আর প্রাইম ব্যাংকের পরিচালকরা বিক্রি করেছেন ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ১৭৮টি শেয়ার।
শেয়ারবাজারে যখন পতনের ধারা, তখন বিভিন্ন কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে। এতে বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। গত ২১ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর সর্বশেষ কম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন করে। যাঁদের কম রয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাঁদেরকে বাজার থেকে শেয়ার কিনে ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
ডিএসইর তথ্য অনুসারে, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং লিমিটেডের তিন পরিচালক ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফারুক এ চৌধুরী এবং কিউ এম শরিফ আলার হাতে রয়েছে একটি করে শেয়ার। দেশবন্ধু পলিমারের আবদুল খালেক, গোলাম রসুল পুতুল, আখিরুজ্জামান, মইনুল ইসলাম লাল এবং প্রভাষ চক্রবর্তীর কাছে আছে ১০০টি করে শেয়ার।
খুলনা পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডর (কেপিসিএল) ১৪ জন পরিচালক নিজেদের কাছে পাঁচ হাজার ১৭৪টি করে শেয়ার রেখেছেন।
বিওসি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক আইয়ুব কাদরীর কাছে ১০টি, ইরফান শাহাবুল মতিনের কাছে ১২টি, লতিফুর রহমানের কাছে ১০টি, নাজমুল হোসেনের হাতে তিনটি এবং পারভীন মাহমুদের হাতে ৫০টি শেয়ার রয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালক এ এস এম মাহমুদ রেখেছেন ২৬৬টি, ফারুক এ চৌধুরী ২৬৬টি, ফজলে হাসান আবেদ ৩১৮টি, আমিনুল ইসলাম ৪৩৯, শিবনারায়ণ কৌরী ২৪২টি, সৈয়দ হুমায়ুন কবীর ৩১৮টি এবং তামারা হাসান আবেদ ২৬৬টি শেয়ার।
একটিও শেয়ার নেই ২০ পরিচালকের কাছে তালিকাভুক্ত ১৪টি কম্পানির ২০ জন পরিচালকের হাতে একটিও শেয়ার নেই। এর মধ্যে রয়েছেন- এসিআই ফরমুলেশনের পরিচালক সি এম মোর্শেদ, অনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ উল্লাহ এবং আবুল কালাম মজুমদার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কম্পানির পরিচালক মফিজউদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেডের আহমেদ শফি চৌধুরী, ইস্টার্ন ব্যাংকের অরমান নিজাম, ফুওয়াং ফুডের বেগম রোকেয়া আশরাফ ও এ এম নাঈমুর রহমানসহ শিরিন সিদ্দিক, গ্রামীণ ফোনের জামাল উদ্দিন আহমেদ ও লার্স এরিক টেলমেন, আইএফআইসি ব্যাংকের মো. আবদুল্লাহ, যমুনা ব্যাংকের আরবিনা ফারহাদ, কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্সের মফিজুর রহমান, মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের আবদুর রহমান খান, প্রাইম ব্যাংকের ড. আইনুন নিশাত ও লিনস্ লিসহ মনজুর মোর্শেদ, রহিম টেঙ্টাইলের সেকেন্দার আলী এবং ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্সের সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান।
২০২টির মধ্যে ৩৮টি কম্পানির পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করছেন। এর মধ্যে পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে সবচেয়ে কম শেয়ার ধারণ করছে- এমন কম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সাইনপুকুর সিরামিকস। পরিচালকদের কাছে ১০ শতাংশ শেয়ারও নেই এমন কম্পানির মধ্যে রয়েছে ইনটেক অনলাইন লি. (২.৫৬), বেঙ্মিকো ফার্মাসিটিক্যালস (২.৭০), এপেঙ্ এডলচি ফুড ওয়্যার লি. (৫.১৯), ফুওয়াং ফুড (৬.১৫), ইস্টার্ন ব্যাংক (৬.৭৪), উত্তরা ব্যাংক (৮.১৯), ফাইনফুড (৮.৩৭) এবং মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স (৯.২৬)।
উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের তথ্য চেয়ে গত ২৩ নভেম্বর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কম্পানির পরিচালকদের মোট শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যাঁদের কাছে মোট শেয়ারের ৫ শতাংশের বেশি আছে, তাঁদের তথ্য চাওয়া হয়েছিল চিঠিতে। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছিল ডিএসই। ২০২টি কম্পানি তথ্য পাঠালেও ৩০টি কম্পানি এখনো সাড়া দেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.