মামলামুক্ত প্রকৌশলী খুঁজছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ by ভূঁইয়া নজরুল

ট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলীর পদ খালি। এ পদে নিয়োগ দিতে প্রয়োজন এমন একজন প্রকৌশলী, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো মামলা নেই। তাই মামলামুক্ত প্রকৌশলীর খোঁজে নেমেছে সিডিএ। গত কয়েক বছরে দুদকের ২৬ মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ১১ প্রকৌশলীর (প্রধান, তত্ত্বাবধায়ক, নির্বাহী ও সহকারী) মধ্যে ১০ প্রকৌশলী আসামি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ট্রুথ কমিশনে দোষ


স্বীকার করা প্রকৌশলীও রয়েছেন। দুদকের মামলার আসামিদের পদোন্নতি দিতে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখন প্রধান প্রকৌশলীর শূন্যপদে মামলামুক্ত পরবর্তী প্রকৌশলী খুঁজছে সিডিএ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) শিরিন আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, '২০১১ সালের ৪ মে জারি করা সরকারের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুদক মামলায় কেউ আসামি থাকলে তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে এবং সিডিএ থেকে কাউকে পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থা থেকে প্রেষণে যোগ্য কাউকে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হবে।'
অপর এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কারো বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতেও মন্ত্রণালয়ের আপত্তি রয়েছে। এর আগে সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও দুদকের ২৬ মামলা ও ট্রুথ কমিশনে স্বীকারোক্তি ছিল। এতে সিডিএ ও মন্ত্রণালয়কে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।
নতুন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব কাকে দেওয়া হচ্ছে_এ প্রশ্নের জবাবে সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, 'বিধি অনুযায়ী সিডিএতে কাউকে পাওয়া না গেলে অন্যান্য সংস্থা থেকে প্রেষণে আনতে হবে। তবে আমরা সিডিএ থেকে কাউকে দেওয়ার চেষ্টা করছি।'
জানা যায়, সিডিএতে বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর নিচের সারিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে রয়েছেন প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ও কাজী হাসান বিন শামস। উভয়েই এ পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন। প্রধান প্রকৌশলীর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার আগে কাউকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে নিয়মিত হতে হয়। আর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সাত বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সিডিএতে কর্মরত দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মধ্যে এ অভিজ্ঞতা একমাত্র জসিম উদ্দিনের থাকলেও তিনি দুদকের মামলার আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে কালুরঘাট রোড সম্প্রসারণ ও অনিয়মের অভিযোগে দুদক গত বছরের সেপ্টেম্বরে মামলা করেছে। অপর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সাত বছর পূর্ণ হয়নি। ২০০৮ সালে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কে ৮০ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে আসামি করে মামলা করেছিল দুদক। এতে তিনি ট্রুথ কমিশনে দোষ স্বীকার করে অব্যাহতি নেন। এর ফলে তিন বছর ধরে তাঁর এসিআর (বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন) ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে কাজী হাসান বিন শামসের সঙ্গে একই তারিখ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়েছেন কাজী ফজলুল করিম। তাঁকে প্রেষণে সিডিএ থেকে প্রথমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং পরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (কেডিএ) বদলি করা হয়। কিন্তু অন্যান্য নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম এন হাবিবুর রহমান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে বদলি করা আশরাফুল ইসলাম ও অথরাইজড অফিসার মনজুর হাসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মামলামুক্ত রয়েছেন শুধু নির্বাহী প্রকৌশলী এ জি এম সেলিম। তবে তাঁদের কেউ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সাত বছরের সীমা পূরণ করতে পারেননি। নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়া সহকারী প্রকৌশলীদেরও অনেকে দুদকের মামলায় আসামি রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অক্সিজেন-কুয়াইশ রোডে ৮০ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগে দুদক চারটি মামলা করে। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কালুরঘাট রোডে দুর্নীতির বিষয়ে ১৯ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুই দফায় ২২টি মামলা করে।

No comments

Powered by Blogger.