নান্দনিক স্থাপনা

ইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফুইত বায়োজিনির ইচ্ছা হলো জন্ম শহর ইয়ামোসোকরোকে রাজধানী বানাবেন। কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো হবে না। তার প্রতিফলন ঘটাতে হলে সেখানে বিশাল একটা কিছু করা দরকার। তিনি মনস্থির করলেন, ইয়ামোসোকরোতে গড়ে তুলবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গির্জা। শুরু হলো কাজ। কিন্তু সারাবিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের কাছে তার এ কাজ মোটেও পছন্দের ছিল না।


ফলে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। সমালোচনার যুক্তিসঙ্গত কারণও ছিল। ওই শহরে খুব বেশি ক্যাথলিক খ্রিস্টানের বসবাস ছিল না। এছাড়া সেখানে বিশপের আসনযুক্ত বিশাল এক ক্যাথিড্রাল তো ছিলই। তবে সমালোচকদের যুক্তি ছিল, অনুন্নত শহরটিতে অধিক খরচ করে গির্জা তৈরি করা অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। তবে বিশ্বের অনেক রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু প্রেসিডেন্টের এ মহৎ কাজকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা পাঠান এবং গর্ববোধ করেন বিশাল এ চার্চের নির্মাণ কৌশল দেখে। তাই প্রবল সমালোচনা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি সে ব্যাসিলিকার নির্মাণ কাজ। আর ইয়ামোসোকরোকেও প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফুইত বায়োজিনি আইভরি কোস্টের প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেই ছেড়েছেন। প্রায় ৩শ' মিলিয়ন ডলার খরচ করে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট শুরু হয় এ চার্চের নির্মাণ কাজ। শেষ হয় ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর এক সাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পোপ জন পল এর উদ্বোধন করেন। উৎসর্গ করেন কুইন অব পিস বা মাতা মেরির উদ্দেশে।
ভ্যাটিকান সিটির বিখ্যাত ব্যাসিলিকা অব সেন্ট পিটার্সের মডেল অনুসরণ করেই মূলত তৈরি করা হয়েছে এ চার্চটি। ইতালির মার্বেল পাথর আর ফ্রান্সের রঙিন কাচের তৈরি গির্জাটির মিনারের উচ্চতা ১৫৮ মিটার। গির্জার মূল অংশে একই সঙ্গে সাত হাজার ভক্ত অংশ নিতে পারেন উপাসনায়। আর আশপাশে আরও এগারো হাজার অর্থাৎ মোট আঠারো হাজার ভক্ত একই সঙ্গে উপাসনায় অংশ নিতে পারেন। চার্চটির সঙ্গে যুক্ত আছে আরও দুটি ভবন, যা চার্চের অন্তর্ভুক্ত নয়। একটিকে ব্যবহার করা হয় দাফতরিক কাজে, অন্যটি পোপের বাসস্থান হিসেবে।
ধরা হয়, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গির্জা। মজার ব্যাপার হলো, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ হিসেবে গণ্য করা হলেও সেখানকার ভক্তরা এটিকে ক্যাথিড্রাল বলতে মোটেও রাজি নন। কারণ, এখানে বিশপের কোনো স্থায়ী আসন নেই। তাই ইয়ামোসোকরোর প্রধান উপাসনার স্থান হিসেবে বিশপের আসনযুক্ত ক্যাথিড্রাল অব সেন্ট অগাস্টিনই তাদের কাছে প্রিয়। তবে ভক্তরা গির্জাটি যেভাবেই নিক না কেন, এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.