নির্বাচন নয় আন্দোলনে জোর দিন : খালেদা by আবুল কাশেম হৃদয়,

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য নির্বাচনের চেয়ে আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য কুমিল্লার নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আকস্মিক বৈঠকে সম্ভাব্য দুই প্রার্থী ও জেলার নেতাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।


বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এসব নির্দেশনার কথা নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, কুমিল্লার নেতাদের বলা হয়েছে, ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচনের ফলে কারচুপি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন হবে। এরপর জেলা নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কেন্দ্রের ওপর ছেড়ে দেন।
গতকাল রাত সোয়া ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৈঠকটি চলে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, কুমিল্লা জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হাজি আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গেজেটে একটি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মামলা হচ্ছে_এমন একটি গুঞ্জন গতকাল দিনভর কুমিল্লা শহরে শোনা গেছে। মামলা করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড বিভক্তির গেজেট সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানা যায়। আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, স্রেফ ষড়যন্ত্রের মানসিকতা থেকেই এ মামলার চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, এলাকাবাসীর পক্ষে একটি মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক মৈশান। বিষয়টি স্বীকার করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর গ্রামটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর পর থেকে আর এ গ্রামটি কোনো গেজেটে নেই। তিনি জানান, ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ গ্রামের মানুষ ভোটার ছিল। মামলা করার উদ্যোগের কথা স্বীকার করে মনিরুল হক বলেন, 'আমার আইনজীবী মামলাটি প্রস্তুত করছেন। রবিবার উচ্চ আদালতে তা দায়ের করা হতে পারে।'
মঙ্গলবার দিনভর কুমিল্লাবাসীর মধ্যে মামলা নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। মামলা প্রস্তুতির বিষয়টি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দীর্ঘদিন পর জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশন ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন দিচ্ছেন। কিছু ষড়যন্ত্রকারী এ উদ্যোগ নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এটা কুমিল্লার মানুষের জন্য দুর্ভাগ্য।'
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মো. ওমর ফারুক বলেন, 'ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা কুমিল্লার মানুষের কাছে ঘৃণিত। কারণ কুমিল্লার মানুষ নির্বাচন চায়।' আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, 'আশা করি, উচ্চ আদালত কুমিল্লার মানুষের আবেগ অনুধাবন করবেন।'
গতকাল রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিষয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার পতনের আন্দোলনকে আরো জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, শেয়ারবাজার_সব ধ্বংসের মুখে চলে গেছে। এ জন্য বৃহত্তর আন্দোলন করতে হবে।
সূত্র জানায়, জেলা নেতারা কুমিল্লার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেন। এ সময় খালেদা জিয়া নির্বাচনের বিষয়ে তাঁদের মতামত দিতে বলেন। সব নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, নির্বাচন করলে বিএনপিই জয়ী হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কুসিক নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নেতারা কেন্দ্রের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
 

No comments

Powered by Blogger.