রেশমা কাপাডিয়া-বাজারের উত্থান মানচিত্র পাল্টে হিসাব করতে হবে

তাইজো ইশিদা যখন প্রথম বাংলাদেশকে দেখেন, তখন তিনি সেখানকার চেহারা দেখে মনে করেছিলেন, এ চিত্র আর পরিবর্তনের নয়। আশির দশকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই দেখেছেন চরম দারিদ্র্য অবস্থা। বিদ্যুতের অভাব, সরকারের কোনো সেবা নেই জনগণের জন্য। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি ছিল স্বল্পোন্নত দেশের দুর্দশার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।


এমন চিন্তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে ইশিদার ছিল অন্তত গত এক বছর আগ পর্যন্ত। জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে ইশিদা এখন শীর্ষ তালিকায় অবস্থানরত ম্যাথিউজ এশিয়া গ্রোথ ফান্ডের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘের চাকরি ছাড়ার পর তিনি বর্তমান দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশে এই প্রথম প্রবেশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের চেহারা দেখে রীতিমতো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। এই প্রথম তিনি দেখলেন বিনিয়োগ কেমন বিস্ফোরণ হতে পারে!
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চারদিকে নির্মাণকাজের শব্দ। শহরটি নিজেকে বিশ্বের বস্ত্র তৈরির প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। ঢাকায় আবাসনমূল্য এখন ম্যানহাটন শহরের আশপাশের মতো। এক দশক আগে ইশিদার এক বন্ধু একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন ৬০ হাজার মার্কিন ডলারে। এখন সেটির মূল্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার। ইশিদা এখন বিনিয়োগের আগে মূল্য অবলোকন করছেন।
বাংলাদেশ? সিরিয়াসলি? প্রথমেই গুগল আর্থে ভেসে ওঠার মতো দেশ এটি নয়। কিন্তু ভুল করবেন না : বিশ্বের বিনিয়োগের মানচিত্রটি গত দুই বছরে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। অনেক সাহসী বিনিয়োগকারীই এখন বলছেন, প্রতি সপ্তাহে বাজার বিশাল আকারে দিক পরিবর্তন করছে। ব্রাজিল, চীন, ভারত ও রাশিয়া বিস্ময়করভাবে উঠে এসেছিল। এ দেশগুলোকে এখন মনে হচ্ছে অন্যদের তুলনায় প্রায় মরতে চলেছে। প্রচুর ভ্রমণ করা এই দেশগুলোতে আয়ের পথ কয়েক বছর আগেও যা ছিল, তা নেই। বরং তার বদলে যে দেশগুলোকে 'উন্নয়নশীল' বলে পরোক্ষভাবে বাতিলের খাতায় হিসাব করা হয়েছিল, সে দেশগুলোই দ্রুতগতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে এসেছে।
মার্ক মোবিয়াস, এক উঠে আসা মার্কেট পাইওনিয়ার, যিনি দেশের বাইরে ফ্রাঙ্কলিন টেমপ্লেটনে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। তিনি রোমানিয়ায় জায়গা কিনেছেন, নাইজেরিয়ায় ব্যাংকের শেয়ার এবং কাজাখস্তানে তেলের শেয়ার কিনেছেন। ওয়াসাচ ইমার্জিং মার্কেটস স্মল ক্যাপ তহবিলের কো-ম্যানেজার হলেন লরা গেরিৎস। তিনি এই গ্রীষ্মে বেশ কয়েকজন সিইও এবং ঘানার স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ন্যাশনাল এঙ্চেঞ্জে ঘানার এখন ৩০টি সরকারি কম্পানি রয়েছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। চীন ও ভারতের অর্থনীতি মন্থর হওয়ার পর বাজারে নতুন গ্রাহক প্রবেশ করে।
দীর্ঘকালের বড় বড় বিনিয়োগকারী আপনাকে বলবে, একটি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তা হলো ঝুঁকি ও বিশৃঙ্খলা। কিন্তু নতুন উঠে আসা বাজারের ব্যবস্থাপকরা এ ভয়কে দূরে সরিয়ে রাখছেন নতুন এলডোরাডো বিনিয়োগের আশায়। তথাপি একটি নতুন বিশ্বের নতুন করে গতিবেগ পরিবর্তনের একটি ধারা তৈরি হয়েছে। সম্পদশ্রেণীর ব্যাপারে পুনরায় বিবেচনা করতে হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, ক্লায়েন্টরা ঘুরছেন, অর্থ ঘুরছে চারদিকে। সুতরাং কোথায় এখন বড় বড় সম্পদ শিকারিরা ভিড় করবে আজকের দিনে?
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের মতে, ২০১০ সালে মার্কিন সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৯২ শতাংশ, যেখানে ব্রাজিলের ছিল ৬৬ শতাংশ। আর চিলির? মাত্র ৯ শতাংশ। গোল্ড সাকস ইকোনমিস্ট ও'নেইল বলেছেন, 'ঋণসংকটে আমরা উন্নত বিশ্ব যেভাবে নিচের দিকে নামছি, ঠিক তেমনিভাবে ওপরের দিকে উঠছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এই বিশেষ কারণেই বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সরকারের বন্ডের বিকল্প পথ খুঁজছেন। যেমন_ব্রাজিলিয়ান ১০ বছরের বন্ড সম্প্রতি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ২ শতাংশ। কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য ব্রাজিলের বন্ডে বিনিয়োগ করা কোনো সহজ কাজ নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ জন্য অভিজ্ঞ তহবিল ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাসরত ফিন্যানশিয়াল জার্নালিস্ট। স্মার্ট মানি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধের কিয়দংশ ভাষান্তর করেছেন মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.