খাদ্যগুদাম নির্মাণে দুর্নীতি-শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
খাদ্যগুদাম নির্মাণে বড় ধরনের দুর্নীতির খবর জানা গেছে। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছিল নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। খাদ্য বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এই দুর্নীতির কথা। তদন্ত কর্মকর্তারা দুর্নীতির নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। এই দুর্নীতির কারণে খাদ্যগুদামগুলো ভবিষ্যতে দেশের জন্য সম্পদ না হয়ে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।
দেশের খাদ্য-চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। খাদ্য আগামী দিনে বিশ্বের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য-চাহিদা মেটাতে হলে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। আমাদের দেশের প্রচুর খাদ্যশস্য শুধু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। সরকার খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য নতুন ৯১টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই খাদ্যগুদাম নির্মাণ করতে গিয়েই পুকুরচুরির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, সরকারের টাকা দেদারসে তছরুপ করা হচ্ছে নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের নামে। গুদাম নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট। কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের রড। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তে এসব প্রমাণিত হয়েছে। উঠে এসেছে দুর্নীতির নানা চিত্র। খাদ্য বিভাগের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, 'অতিরিক্ত মহাপরিচালকের প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরই ঠিকাদাররা ইট সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে দেয়ালে ব্যবহার করা ইট সরানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি গুদাম নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের মান পরীক্ষার জন্য ইটের কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ইটের গাঁথুনি ভেঙে উৎকৃষ্ট মানের ইট দিয়ে নতুন করে গুদাম নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।' জানা গেছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশে গুদামের মেঝে মাটির বদলে ভিটি বালু দিয়ে ভরাট করার বিষয়টিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ভিটি বালু ছাড়াই গুদামের ভেতরের মাটি ছড়িয়েই নির্মাণকাজ করার প্রমাণ পেয়েছে বলেও প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী গুদামগুলোর গ্রাউন্ডলেভেল থেকে মেঝে পর্যন্ত ভিটি বালু দিয়ে পূর্ণ করার কথা। অন্যদিকে টেন্ডার শিডিউলে পাইলিং নির্মাণে ৬০ হাজার পিএসআই গ্রেডের রড ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কিছু গুদামে প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ডের রড ব্যবহার করা হলেও অনেক গুদামে ব্রান্ডবিহীন রড ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারের জন্য নির্মাণ স্থলে নেওয়া সব চালানের রডের কারিগরি পরীক্ষা করা হয় না বলেও প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গেছে।
আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা জরুরি। কিন্তু সেই খাদ্যগুদাম নির্মাণের কাজে এ ধরনের অসততা ও দুর্নীতি মেনে নেওয়া যায় না। এই দুর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে তদন্ত
করা হোক।
No comments