তারেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা-এফবিআই কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেবেন আজ

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার বন্ধু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার মামলার বাদীর জেরা গতকাল শেষ হয়েছে। আজ এ মামলায় সাক্ষ্য দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইর এজেন্ট ডেবরা লেপ্রিভট। গতকাল সকালে মামলার শুনানি শুরু হলেও মামুনের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে উপস্থিত হতে দেরি হওয়ায় মামুনের অন্য আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া শুনানি মুলতবি রাখার অনুরোধ জানান।


রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবীরা এ সময় আদালতে সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। বিচারক উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য আদালতে আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল, খন্দকার দিলিরুজ্জামান, এবিএম আলতাফ হোসেন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, বিশেষ পিপি আনিসুল হক, মোশারফ হোসেন কাজল প্রমুখ।
গতকাল খন্দকার মাহবুব বাদীকে প্রশ্ন করেন, যে অর্থ পাচারের কথা বলা হয়েছে ওই অর্থ বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে কি-না। জবাবে বাদী বলেন, না। মাহবুব জানতে চান, সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা হয়েছে তা কোথা থেকে এসেছে সে ব্যাপারে বাদী জানেন কি-না। উত্তরে বাদী বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে ওই অর্থ এসেছে। খন্দকার মাহবুব আরও জানতে চান, মামুন কোনো
টাকা বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন কি-না। জবাবে বাদী বলেন, না। খন্দকার মাহবুব প্রশ্ন করেন, 'বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে টাকা পাচার করলেই মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়, অন্য কোনোভাবে নয়, তা আপনি জানেন কি-না।' জবাবে বাদী বলেন, 'জানি।' পরে খন্দকার মাহবুব আদালতে বাদীর জেরা শেষ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় বাদী আদালতে প্রথম সাক্ষ্য দেন।
এরপর দুদকের আইনজীবী আনিসুল হক আদালতে এক আবেদন দিয়ে এফবিআই এজেন্ট ডেবরা লেপ্রিভটের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। মামুনের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব আদালতে এ আবেদনের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি জানান। তিনি আদালতকে লিখিত আবেদনে জানান, চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অতিরিক্ত সাক্ষী নেওয়া যায়; কিন্তু মামলার এ পর্যায়ে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে এফবিআই এজেন্টকে সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা মামুনের পক্ষে এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। তাই সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রাখা হোক। পরে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ওই আবেদন মঞ্জুর করে এফবিআই এজেন্টের সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে আসামি গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ৮ আগস্ট একই আদালত এ মামলায় তারেককে পলাতক দেখিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, একই সঙ্গে মামুনের বিরুদ্ধে ২০০২ সালের মুদ্রা পাচার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন। আদালতে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরুজ্জামান তপন, সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, আবদুল খালেক মিলন প্রমুখ আইনজীবী।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করেন। গত বছরের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী এবং তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম চার্জশিট (অভিযোগ) দাখিল করেন ।
এফবিআই কর্মকর্তা ঢাকায় : অর্থ পাচারের মামলায় সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) দুই কর্মকর্তা রোববার ঢাকায় এসেছেন। তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের করা ওই মামলায় এফবিআইয়ের ওই দুই কর্মকর্তা মার্কিন ডলারে কীভাবে ঘুষ লেনদেন হয়েছে আজ আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তার বর্ণনা দেবেন। ঢাকায় তাদের অবস্থান গোপন রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.