হজ ও কোরবানি-পরবর্তী সময়ে করণীয় by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
গত সপ্তাহে মুসলিম বিশ্ব একযোগে ঈদুল আজহা ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর কোরবানি পালন করেছে। অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান হজব্রত পালন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এ বছর এক লাখেরও বেশি মুসলি্ল হজ পালনার্থে সৌদি আরব গমন করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'হজ সমাপনকারী সদ্যোজাত ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ।' হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য এক হাদিসে আরও বলেন, 'হজের বিনিময় একমাত্র জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।'
হজ প্রতিটি মুসলমানকে সাম্য, মৈত্রী, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ন্যায়নীতি, একতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়। নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঠেকায় এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে। মনকে উদার ও বড় করতে শেখায়। হজ মুসলমানদের উজ্জীবিত করে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে, নিজের জানমাল আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করতে, মনের পশুপ্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিতে। যাতে পৃথিবী সুখ-শান্তির স্বর্গে পরিণত হয়। এমন আদর্শকে আঁকড়ে ধরেই একসময় স্বল্পসংখ্যক মুসলমানের হাতে ছিল গোটা পৃথিবীর আধিপত্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও রাজত্ব। আজ পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের বসবাস। কিন্তু মুসলমানদের পরস্পরে ঐক্য নেই, বন্ধুত্ব নেই, ভালোবাসা নেই। রয়েছে নীতিবোধের যথেষ্ট অভাব। ফলে আজকের মুসলিম বিশ্ব এক প্রকার দিশেহারা, অসহায়, নির্যাতিত, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনুন্নত, অসংখ্য ফিরকা ও মতবাদে বিভক্ত। এমতাবস্থায় হজ-ওমরাহ করা যেন আজ আমাদের অনেকের জন্যই প্রাণহীন ও প্রথাগত ইবাদতে পরিণত হয়েছে। নিয়তের পরিশুদ্ধতা, অন্তরাত্মার পবিত্রতা এবং হালাল টাকায় এসব পবিত্র ইবাদত সম্পাদন না হওয়ায় আমরা পদে পদেই আল্লাহর রহমত ও সানি্নধ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। মক্কা-মদিনার প্রকৃত আলো নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। হজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হজ-পরবর্তী সময় নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারছি না। এ জন্যই শত শত বছর ধরে কোটি কোটি হাজির পক্ষেও সারাবিশ্বে ইসলামের শান্তির ঝাণ্ডা ওড়ানো সম্ভব হয়নি। হজের আলো বিশ্বময় সত্য ও ন্যায়ের আলো জ্বালাতে পারেনি। যার ফলে আজও উপহার দেওয়া সম্ভব হয়নি হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ ও পাপাচারমুক্ত পৃথিবী।
মানুষের মনে সাধারণত আশা ও প্রত্যাশা থাকে, প্রত্যেক হাজি হজের নীতি অনুসরণে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে সর্বপ্রকার পাপাচার-কামাচার, ভোগবিলাস, হিংসা, অহঙ্কার, ক্ষোভ, সন্ত্রাস, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদপান, ধূমপান, দুর্নীতি, গিবত, শেকায়াত, অপচয় ও খেল-তামাশাসহ মিথ্যা কথা ইত্যাদি বিষয় পরিহার করে চলবেন। সর্বপ্রকার পাপকাজ থেকে বিরত থেকে শয়তানের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা-ধিক্কার ও উপেক্ষাই হবে তাদের জীবনের ব্রত। কিন্তু বাস্তবে এসব আচরণ অনেকের কাছ থেকেই পাওয়া যায় না। ফলে হজ আমাদের সমাজে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনছে না।
অন্যদিকে হাজিরা মিনায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন, অন্য মুসলমানরা কোরবানি দিয়ে থাকেন নিজ নিজ জায়গায়। মনে রাখতে হবে, এই পশু কোরবানি করা একটি প্রতীকী কাজ। আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিমকে (আ.) স্বপ্নের মাধ্যমে আদেশ করেছেন তাঁর প্রিয় বস্তুটি কোরবানি করার জন্য। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে শেষ বয়সে প্রাপ্ত একমাত্র সন্তান হজরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। হজরত ইবরাহিম (আ.) সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশে আত্মত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খলিল উপাধি লাভ করেন। ফলে আল্লাহতায়ালা তার কাজে খুশি হয়ে তার একমাত্র সন্তানের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানির জন্য ছুরির নিচে হাজির করে দেন। এ ঘটনাটি আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছে বিধায় আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রতি আত্মোৎসর্গের স্মৃতিটুকু ধরে রাখার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সব সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন।
পশু কোরবানি করা প্রতীকী আমল। আল্লাহ বলেন, 'হে মানব সকল! জেনে রেখো কোরবানির গোশত ও রক্ত কিছুই আমার কাছে পেঁৗছে না। কেবল পেঁৗছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া, আমি দেখতে চাই তোমরা কে কতটুকু আমাকে ভালোবাস এবং ভয় কর।' আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী খরচ করাই কোরবানির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আজ সারাবিশ্বের মানুষ যখন সমস্যা ও জটিলতার আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে, বিভেদ ও অনৈক্যের শিকার হয়ে অশান্তি ও দুর্দশা পোহাচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ যখন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাইরের দুশমনদের চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন হজের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ এবং কোরবানির আত্মত্যাগ তাদের জন্য হতে পারে পরম পথনির্দেশ।
হজ সমাপনান্তে প্রত্যেক হাজির মন, দেহ, বিবেক ও বুদ্ধি হয় পূত-পবিত্র এবং আল্লাহর গুণে গুণান্বিত। তাই প্রত্যেক হাজিকে শাণিত এই চেতনা ধারণ করে আলোকময় সমাজ গড়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এ চেষ্টা করাটাই হবে হজের পরম সার্থকতা। পাশাপাশি কোরবানিকারী পশুর জবাইয়ের সময় যেভাবে আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে থাকে, চেষ্টা করে থাকে পাপাচারমুক্ত থাকতে, ঠিক সেভাবে হজ পালনকারী ও কোরবানিকারীর একান্ত কর্তব্য হলো ইসলামের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে পালন করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক জীবন অতিবাহিত করেছেন সেভাবেই প্রত্যেক হাজি ও কোরবানিকারীকে তাদের নতুন জীবন শুরু করতে হবে। নতুবা হজ ও কোরবানির আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না।
মানুষের মনে সাধারণত আশা ও প্রত্যাশা থাকে, প্রত্যেক হাজি হজের নীতি অনুসরণে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে সর্বপ্রকার পাপাচার-কামাচার, ভোগবিলাস, হিংসা, অহঙ্কার, ক্ষোভ, সন্ত্রাস, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদপান, ধূমপান, দুর্নীতি, গিবত, শেকায়াত, অপচয় ও খেল-তামাশাসহ মিথ্যা কথা ইত্যাদি বিষয় পরিহার করে চলবেন। সর্বপ্রকার পাপকাজ থেকে বিরত থেকে শয়তানের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা-ধিক্কার ও উপেক্ষাই হবে তাদের জীবনের ব্রত। কিন্তু বাস্তবে এসব আচরণ অনেকের কাছ থেকেই পাওয়া যায় না। ফলে হজ আমাদের সমাজে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনছে না।
অন্যদিকে হাজিরা মিনায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন, অন্য মুসলমানরা কোরবানি দিয়ে থাকেন নিজ নিজ জায়গায়। মনে রাখতে হবে, এই পশু কোরবানি করা একটি প্রতীকী কাজ। আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিমকে (আ.) স্বপ্নের মাধ্যমে আদেশ করেছেন তাঁর প্রিয় বস্তুটি কোরবানি করার জন্য। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে শেষ বয়সে প্রাপ্ত একমাত্র সন্তান হজরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। হজরত ইবরাহিম (আ.) সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উদ্দেশে আত্মত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খলিল উপাধি লাভ করেন। ফলে আল্লাহতায়ালা তার কাজে খুশি হয়ে তার একমাত্র সন্তানের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানির জন্য ছুরির নিচে হাজির করে দেন। এ ঘটনাটি আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছে বিধায় আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রতি আত্মোৎসর্গের স্মৃতিটুকু ধরে রাখার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সব সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন।
পশু কোরবানি করা প্রতীকী আমল। আল্লাহ বলেন, 'হে মানব সকল! জেনে রেখো কোরবানির গোশত ও রক্ত কিছুই আমার কাছে পেঁৗছে না। কেবল পেঁৗছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া, আমি দেখতে চাই তোমরা কে কতটুকু আমাকে ভালোবাস এবং ভয় কর।' আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী খরচ করাই কোরবানির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আজ সারাবিশ্বের মানুষ যখন সমস্যা ও জটিলতার আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে, বিভেদ ও অনৈক্যের শিকার হয়ে অশান্তি ও দুর্দশা পোহাচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ যখন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাইরের দুশমনদের চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন হজের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ এবং কোরবানির আত্মত্যাগ তাদের জন্য হতে পারে পরম পথনির্দেশ।
হজ সমাপনান্তে প্রত্যেক হাজির মন, দেহ, বিবেক ও বুদ্ধি হয় পূত-পবিত্র এবং আল্লাহর গুণে গুণান্বিত। তাই প্রত্যেক হাজিকে শাণিত এই চেতনা ধারণ করে আলোকময় সমাজ গড়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এ চেষ্টা করাটাই হবে হজের পরম সার্থকতা। পাশাপাশি কোরবানিকারী পশুর জবাইয়ের সময় যেভাবে আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে থাকে, চেষ্টা করে থাকে পাপাচারমুক্ত থাকতে, ঠিক সেভাবে হজ পালনকারী ও কোরবানিকারীর একান্ত কর্তব্য হলো ইসলামের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে পালন করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক জীবন অতিবাহিত করেছেন সেভাবেই প্রত্যেক হাজি ও কোরবানিকারীকে তাদের নতুন জীবন শুরু করতে হবে। নতুবা হজ ও কোরবানির আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না।
No comments