প্রশাসন-সবার ওপরে দলীয় স্বার্থ!

বাংলাদেশ ব্যাংকে সিবিএ নেতাদের শাস্তি মওকুফ সংক্রান্ত খবরটি বৃহস্পতিবার সমকালসহ একাধিক দৈনিকে গুরুত্বসহ প্রকাশিত হয়েছে। একইদিনে সমকালে রয়েছে 'জনপ্রশাসনে প্রতিমাসেই ওএসডি বাড়ছে_ দলীয়করণসহ কারণ অনেক' শিরোনামে আরেকটি খবর। এতে বলা হয়, ওএসডির কারণে প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। কয়েকশ' কর্মকর্তাকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।


শুধু প্রশাসন নয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডার এবং পুলিশ বাহিনীতেও রয়েছে ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটির খড়্গ। এক সময়ে প্রশাসনের অতি দক্ষ ও চটপটে অফিসারদের নির্দিষ্ট দায়িত্বে সীমাবদ্ধ না রেখে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মভার প্রদানের জন্য ওএসডি করার বিধান চালু ছিল। কিন্তু এখন ওএসডি মানেই শাস্তি ও হয়রানি। বর্তমানে প্রায় চারশ' কর্মকর্তা এ দুর্ভাগ্যের শিকার। তাদের অনেকের সম্পর্কে অভিযোগ, পূর্বতন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারা বিশেষ সুবিধাভোগী ছিলেন এবং অনেকে কাজ করেছেন অতি উৎসাহী দলীয় কর্মীর মতো। সে সময়ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি সহানুভূতিশীল বিবেচনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছিল। বলা যায়, 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে' কিংবা শঠে শাঠ্যং। প্রশাসনের দক্ষতা ও কার্যকারিতা এবং সুশাসন বাড়িয়ে চলা নয়, কেবলই দলীয় স্বার্থ! বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ১০ জন সিবিএ নেতার শাস্তি 'কিছু শর্তসাপেক্ষে' মওকুফ করে দিয়েছে কিংবা বলা যায় দিতে বাধ্য হয়েছে তার মূলেও কিন্তু এই দলীয় স্বার্থ। তাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল গত আগস্ট মাসে উপ-পরিচালক মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে। এ নিয়ে মতিঝিল থানায় মামলাও রয়েছে। এ ঘটনা ছাড়াও সিবিএর এসব নেতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। চাকরিতে পুনর্বহাল করে ঢাকা থেকে বাইরের কয়েকটি অফিসে বদলির 'শর্তে' বাধ্যতামূলক অবসরের মতো শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সিবিএ নেতারা আরও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন, এমন শঙ্কা অমূলক নয়। তাদের কারণে দৈনন্দিন কাজের পরিবেশ বিঘি্নত হবে এবং কর্তৃপক্ষকে থাকতে হবে সন্ত্রস্ত। ভবিষ্যতের সিবিএ নেতাদের জন্যও এটা হয়ে উঠতে পারে 'অনুপ্রেরণা'। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য মামলার ফলের জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুসারে মামলা চলাকালে কাউকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা যায় না। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রণীত বিধিবিধান অনুসরণ করবে এবং দণ্ড মওকুফের আদেশ প্রত্যাহার করে নেবে। শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, সার্বিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে এবং তাদের কাছে আরও বেশি বেশি স্বাধীন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করার ঘটনা এ গুরুদায়িত্ব পালনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবেই। প্রশাসনে ওএসডি জট খোলার জন্যও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। দিনবদলের সনদ নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের অঙ্গীকার ছিল স্পষ্ট_ রাজনৈতিক কারণে প্রশাসনে কাউকে হয়রানি করা হবে না কিংবা কেউ পাবে না বিশেষ সুবিধা বা আনুকূল্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিচ্যুতি সবার চোখের সামনেই রয়েছে। অনিয়মের এ ধারা থেকে সরে আসতে না পারলে আগামীতে নিশ্চিতভাবেই আঘাত আসবে আরেক দল কর্মকর্তার ওপর, যদিও তা আদৌ প্রত্যাশিত হবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.