কেবল চাষি নন, ভোক্তারাও ঠকছেন লবণ মিলমালিকদের কাছে-* ৫০ পয়সায় কেনা লবণ বিক্রি হয় ২৩ টাকায় * আয়োডিন আইনে আছে, লবণে নেই * কেজিপ্রতি খরচ ২৫ পয়সা তাতেও ভর্তুকি by ফারজানা লাবনী
ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। আর বেশি দাম দিয়ে কিনলেও স্বাস্থ্যসম্মত লবণ পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এভাবেই লবণ মিলমালিকদের কাছে ঠকছেন উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়েই। বাজারজাত করা লবণে আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক। এতে খরচ পড়ে কেজিপ্রতি মাত্র ২৫ পয়সা। এ জন্য ভর্তুকিও দেওয়া হচ্ছে। তবু বেশির ভাগ লবণেই আয়োডিন নেই। তা দেখারও কেউ নেই।
লবণচাষি ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, লবণের চাষ হয় মাঠ ও পলিথিন পদ্ধতিতে। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে মাঠপদ্ধতিতে চাষির ব্যয় হয় দুই টাকা। পলিথিনপদ্ধতিতে খরচ পড়ে কেজিতে তিন টাকা। সেই কাঁচা লবণ মিলমালিক বা মধ্যস্বত্বভোগীরা কিনছেন ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা কেজিতে। মিলমালিকরা ওয়াশিং ও আধুনিকপদ্ধতিতে লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করেন। ওয়াশিং পদ্ধতিতে কেজিতে সাত-আট টাকা এবং আধুনিকপদ্ধতিতে ১০ থেকে ১২ টাকা খরচ পড়ে। বাজারে উভয় পদ্ধতির লবণই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২৩ টাকায়।
গলগণ্ড রোগ নিরোধের জন্য আইন করে লবণে আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কিন্তু সেই আইন মানা হচ্ছে না। আয়োডিন ছাড়াই সুদৃশ্য মোড়কে বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লবণ। অথচ আয়োডিন মেশাতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে মাত্র ২৫ পয়সা। চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার লবণচাষি আজিজুল হক বলেন, গত বছর মিলমালিক ও ফড়িয়ারা মৌসুমের শুরুতে চাষিদের কাছ থেকে এক টাকায় এবং ভরা মৌসুমে ৫০ পয়সা থেকে ৭০ পয়সায় লবণ কিনেছেন। লোকসানে লবণ বিক্রি করায় সারা বছর পরিবার নিয়ে প্রায় না-খেয়েই থাকতে হয়। তিনি আরো বলেন, সংসার খরচ চালাতে চাষিরা মৌসুমের ছয়-সাত মাস আগেই লবণ মিলমালিক বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা (দাদনের টাকা) নিয়ে থাকেন। দাদনের সময় যে দামে লবণ বিক্রির কথা হয়, মৌসুমে তার চেয়ে কমে বিক্রি হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যা দাম পান, তাতেই লবণ বিক্রি করে দেন চাষিরা। এভাবে লোকসান দিয়ে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান আজিজুল হক। কঙ্বাজারের ইসলামপুর এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, 'আমার ৫০ একর জমি চাষিরা বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করে। অন্যান্য বছর এ সময় লবণ চাষ শুরু হয়। অথচ এ বছর এক ছটাক জমিও কোনো চাষি বর্গা নেয়নি।'
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিগত বছরগুলোয় লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চলতি বছর আশঙ্কাজনক হারে কমেছে লবণ চাষ। অক্টোবর থেকে এপ্রিল লবণ চাষের মৌসুম হলেও চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার এলাকায় লবণ চাষের জন্য নির্ধারিত অনেক জমিই খালি পড়ে আছে। লবণ চাষে বিরাজমান সমস্যার সমাধান না হলে অচিরেই দেশের লবণ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অনেক দেশে সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় সমবায়ের মাধ্যমে কারখানা তৈরি করে তৃণমূল পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত লবণ সরবরাহ করা হয়। আমাদের দেশেও এ ব্যবস্থা করা যায়। এতে চাষিরা লাভবান হবেন। ভোক্তারাও কম দামে লবণ পাবেন। একই সঙ্গে লবণনীতি বাস্তবায়নসহ বাজার তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। কঙ্বাজারের লবণচাষি একরাম আলী বলেন, পাঁচ বছর ধরে লবণ চাষ করছি। এ পর্যন্ত কোনো সরকারি লোক দেখিনি, যার কাছে আমাদের সমস্যা জানাতে পারি। ব্যাংকে গেলেও ঋণ পাই না।
লবণে আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশ মিলমালিক তা মেনে চলছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএসটিআইয়ের অভিযানে স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের লবণে আয়োডিন পাওয়া গেছে। আয়োডিনের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন বাজারে লবণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দুই-এক জন।
এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (কনজ্যুমার ব্র্যান্ড) সৈয়দ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, অত্যন্ত সর্তকর্তার সঙ্গে লবণে আয়োডিন মিশাতে হয়। বাজারে লবণ সরবরাহকারী খুব কম প্রতিষ্ঠানই লবণে আয়োডিন মিশিয়ে থাকে। তাদের উৎপাদিত লবণের মানও ভালো নয়। এ ব্যাপারে বিএসটিআই থেকে আরো নজরদারির সুপারিশ করেন তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিসেফ ও গেইনের সহায়তায় ২৮৪টি মিলকে আয়োডিন সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পটাশিয়াম আয়োডাইড দুই হাজার ৯০০ টাকা দাম ধরা হলেও মিলমালিকরা তা পাচ্ছেন ৯০০ টাকায়। বাকি দুই হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের জুনে এ চুক্তির মেয়াদ শেষে তহবিল সংকটে পড়ে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাই পটাশিয়াম আয়োডাইড কিনতে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মিলমালিকরা পুরনো চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় সরকার মণপ্রতি ৯০০ টাকা করে ভর্তুকি দেবে।
তবে বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মোনাফ জানিয়ে দেন, পটাশিয়াম আয়োডাইড কিনতে তাঁদের খরচ বেশি পড়ায় বাজারে লবণের দাম বেড়ে যাবে। বিসিকে নিবন্ধিত লবণ কারখানার সংখ্যা ৩০২টি। এর মধ্যে আধুনিকপদ্ধতিতে ৪৫টি কারখানায় লবণ উৎপাদন হয়। সারা দেশে বছরে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ টন। গত বছরের আগের বছর ১৫-১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদন হলেও গত মৌসুমে ১৩ লাখ টন উৎপাদন হয়। দাম না পেয়ে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহী না হওয়ায় চলতি বছর আট লাখ টন লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার লবণচাষি রয়েছেন। অধিকাংশ লবণ চাষ হয় চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার এলাকায়।
গলগণ্ড রোগ নিরোধের জন্য আইন করে লবণে আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কিন্তু সেই আইন মানা হচ্ছে না। আয়োডিন ছাড়াই সুদৃশ্য মোড়কে বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লবণ। অথচ আয়োডিন মেশাতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে মাত্র ২৫ পয়সা। চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার লবণচাষি আজিজুল হক বলেন, গত বছর মিলমালিক ও ফড়িয়ারা মৌসুমের শুরুতে চাষিদের কাছ থেকে এক টাকায় এবং ভরা মৌসুমে ৫০ পয়সা থেকে ৭০ পয়সায় লবণ কিনেছেন। লোকসানে লবণ বিক্রি করায় সারা বছর পরিবার নিয়ে প্রায় না-খেয়েই থাকতে হয়। তিনি আরো বলেন, সংসার খরচ চালাতে চাষিরা মৌসুমের ছয়-সাত মাস আগেই লবণ মিলমালিক বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা (দাদনের টাকা) নিয়ে থাকেন। দাদনের সময় যে দামে লবণ বিক্রির কথা হয়, মৌসুমে তার চেয়ে কমে বিক্রি হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যা দাম পান, তাতেই লবণ বিক্রি করে দেন চাষিরা। এভাবে লোকসান দিয়ে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান আজিজুল হক। কঙ্বাজারের ইসলামপুর এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, 'আমার ৫০ একর জমি চাষিরা বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করে। অন্যান্য বছর এ সময় লবণ চাষ শুরু হয়। অথচ এ বছর এক ছটাক জমিও কোনো চাষি বর্গা নেয়নি।'
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিগত বছরগুলোয় লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চলতি বছর আশঙ্কাজনক হারে কমেছে লবণ চাষ। অক্টোবর থেকে এপ্রিল লবণ চাষের মৌসুম হলেও চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার এলাকায় লবণ চাষের জন্য নির্ধারিত অনেক জমিই খালি পড়ে আছে। লবণ চাষে বিরাজমান সমস্যার সমাধান না হলে অচিরেই দেশের লবণ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অনেক দেশে সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় সমবায়ের মাধ্যমে কারখানা তৈরি করে তৃণমূল পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত লবণ সরবরাহ করা হয়। আমাদের দেশেও এ ব্যবস্থা করা যায়। এতে চাষিরা লাভবান হবেন। ভোক্তারাও কম দামে লবণ পাবেন। একই সঙ্গে লবণনীতি বাস্তবায়নসহ বাজার তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। কঙ্বাজারের লবণচাষি একরাম আলী বলেন, পাঁচ বছর ধরে লবণ চাষ করছি। এ পর্যন্ত কোনো সরকারি লোক দেখিনি, যার কাছে আমাদের সমস্যা জানাতে পারি। ব্যাংকে গেলেও ঋণ পাই না।
লবণে আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশ মিলমালিক তা মেনে চলছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা বিএসটিআইয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএসটিআইয়ের অভিযানে স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের লবণে আয়োডিন পাওয়া গেছে। আয়োডিনের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন বাজারে লবণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের দুই-এক জন।
এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (কনজ্যুমার ব্র্যান্ড) সৈয়দ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, অত্যন্ত সর্তকর্তার সঙ্গে লবণে আয়োডিন মিশাতে হয়। বাজারে লবণ সরবরাহকারী খুব কম প্রতিষ্ঠানই লবণে আয়োডিন মিশিয়ে থাকে। তাদের উৎপাদিত লবণের মানও ভালো নয়। এ ব্যাপারে বিএসটিআই থেকে আরো নজরদারির সুপারিশ করেন তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিসেফ ও গেইনের সহায়তায় ২৮৪টি মিলকে আয়োডিন সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পটাশিয়াম আয়োডাইড দুই হাজার ৯০০ টাকা দাম ধরা হলেও মিলমালিকরা তা পাচ্ছেন ৯০০ টাকায়। বাকি দুই হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের জুনে এ চুক্তির মেয়াদ শেষে তহবিল সংকটে পড়ে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাই পটাশিয়াম আয়োডাইড কিনতে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মিলমালিকরা পুরনো চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় সরকার মণপ্রতি ৯০০ টাকা করে ভর্তুকি দেবে।
তবে বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মোনাফ জানিয়ে দেন, পটাশিয়াম আয়োডাইড কিনতে তাঁদের খরচ বেশি পড়ায় বাজারে লবণের দাম বেড়ে যাবে। বিসিকে নিবন্ধিত লবণ কারখানার সংখ্যা ৩০২টি। এর মধ্যে আধুনিকপদ্ধতিতে ৪৫টি কারখানায় লবণ উৎপাদন হয়। সারা দেশে বছরে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ টন। গত বছরের আগের বছর ১৫-১৬ লাখ টন লবণ উৎপাদন হলেও গত মৌসুমে ১৩ লাখ টন উৎপাদন হয়। দাম না পেয়ে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহী না হওয়ায় চলতি বছর আট লাখ টন লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার লবণচাষি রয়েছেন। অধিকাংশ লবণ চাষ হয় চট্টগ্রাম ও কঙ্বাজার এলাকায়।
No comments