চূড়ান্ত হলো বাংলাদেশের মানচিত্র by মিজানুর রহমান
বাংলাদেশ-ভারত
যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দু’দিনের বৈঠকে দুই দেশের স্থলসীমানা চূড়ান্ত হয়েছে।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্রও। গতকাল রাতে বৈঠকটি শেষ হয়েছে।
প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের নির্দেশনা মতে ভবিষ্যতের
আইনি ঝামেলা এড়াতে সেখানে রেকর্ডপত্রেও সই করেছেন স্থলসীমান্ত চুক্তি
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ঢাকা ও দিল্লির কর্মকর্তারা। আনুষ্ঠানিক
কোন ঘোষণা আসেনি এখন পর্যন্ত। তবে বৈঠকে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা
বলে জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত ৩১শে জুলাই মধ্যরাতেই বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল
বিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হবে ৬৮ বছরের
পুরনো ছিটমহল সমস্যার। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল বিকালে যৌথ
ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক চলার এক ফাঁকে কথা হয় সরকারি এক কর্মকর্তার সঙ্গে।
তিনি মানবজমিনকে বলেন, দু’দিনের আলোচনায় অনেক বিষয় সামনে এসেছে। ২০১১ সালের
ছিটমহলে সর্বশেষ জরিপ হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি
ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর এবং জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৩ জন এবং
ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন ৭ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ২ একর
এবং লোক সংখ্যা ১৪ হাজার ৯০ জন পাওয়া গিয়েছিল। চলতি মাসে একটি জনগণনা
হয়েছে। সেখানে জনসংখ্যা বেড়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে
১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অধিকারে আসবে। আর ভারতের কাছে বাংলাদেশ হস্তান্তর
করবে ৫১টি। ভারতের হাত থেকে ১৭ হাজার একর জমি বাংলাদেশের হাতে আসবে,
বিনিময়ে ভারত পাবে সাত হাজার একর। গত ১০ই জুন জাতীয় সংসদে দেয়া এক বিবৃতিতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০
একর জমি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ হবে। কেবল ছিটমহল নয়, স্থলসীমান্ত চুক্তি
বাস্তবায়নের ফলে সীমান্তের অচিহ্নিত এলাকাও চিহ্নিত এবং দুই দেশের মধ্যে
বণ্টন হবে। এ সংক্রান্ত প্রটোকলের আওতায় ভারত ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে।
আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের
কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে ছিটমহল জরিপে বাদপড়া অনেকে নাগরিকত্ব পছন্দের
সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। তারা ভবিষ্যতে আইনি প্রক্রিয়ায়
যেতে পাবেন সেই প্রশ্নও এসেছে। তাদের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে,
নীতি-নির্ধারণী পর্যায়েও কথা হয়েছে। যারা যে দেশে যেতে চেয়েছেন বা থাকতে
চেয়েছেন মর্মে মতামত দিয়েছেন তাদের সেই বিষয়টি আমলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের
অধিকারে আসা ছিটমহলের ৯৭৯ জন বাসিন্দা ভারতে যেতে চান। তারা দেশটির
নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। ছিটমহলের ওপর চালানো সর্বশেষ জনগণনায় পাওয়া
তথ্য মতে ওই ১১১টি ছিটমহলে ৪১ হাজার ৪৪৯ জন বাসিন্দা রয়েছেন। ৯৭৯ জন
বাসিন্দা ছাড়া বাকি সবাই বাংলাদেশে থাকছেন। আগামী ১লা আগস্ট থেকে ৩০শে
নভেম্বরের মধ্যে তারা তাদের নিজ পছন্দ মতো নাগরিত্ব নিতে পারবেন।
হলদিবাড়ি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ওই নাগরিকরা ভারতে যেতে
পারবেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রকাশনায় সমপ্রতি বলা হয়েছে,
স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত সমস্যার
স্থায়ী সমাধান হওয়ার পাশাপাশি সীমান্তে শান্তি আসবে। ছিটমহলের বাসিন্দাদের
গত সাত দশকের মানবিক সংকটের অবসান ঘটবে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ
অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ হবে তাদের। একই সঙ্গে খুলবে সহযোগিতার নতুন
দিগন্ত। দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় এবং সাড়ে ছয়
কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করাই এই স্থলসীমান্ত চুক্তির লক্ষ্য।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি হয়। সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চুক্তিতে সই করেন। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের সংসদে এতদিন অনুমোদন না হওয়ায় সেই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আটকে ছিল। ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়। এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও উদ্যোগী হন মোদি। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে রাজি করিয়ে গত মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে ছিটমহল বিনিময়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস করান। গত ৬ই জুন মোদি ঢাকা সফরে আসেন। ওই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তিটি বাস্তবায়নে নতুন একটি প্রটোকল সই হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রটোকলে সই এবং পূর্বে সই হওয়া এ সংক্রান্ত দলিল বিনিময় করেন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি হয়। সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চুক্তিতে সই করেন। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের সংসদে এতদিন অনুমোদন না হওয়ায় সেই চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আটকে ছিল। ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়। এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও উদ্যোগী হন মোদি। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে রাজি করিয়ে গত মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে ছিটমহল বিনিময়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস করান। গত ৬ই জুন মোদি ঢাকা সফরে আসেন। ওই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তিটি বাস্তবায়নে নতুন একটি প্রটোকল সই হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রটোকলে সই এবং পূর্বে সই হওয়া এ সংক্রান্ত দলিল বিনিময় করেন।
No comments