তামিমদের বসার ঘর যেন জাদুঘর! by রানা আব্বাস
তামিমের প্রিয় দুই ব্যাট, যে ব্যাটে সব সতীর্থের সই। ছবি: প্রথম আলো |
কদিন
ধরেই চট্টগ্রামে ঝুম বৃষ্টি। এক মুহূর্তের জন্য থামার প্রয়োজন বোধ করছে না
আকাশ। বৃষ্টি গায়ে মেখেই শনিবার সন্ধ্যায় পা রাখতে হলো কাজীর দেউড়ির
বিখ্যাত খান বাড়িতে। কেবল চট্টগ্রামে নয়, গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমী কম-বেশি
জানেন এ বাড়ি সম্পর্কে। এ বাড়িটার সঙ্গে জড়িয়ে দেশের তিন টেস্ট
ক্রিকেটারের নাম—আকরাম খান, নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবাল।
বছর আটেক আগে দোতলা বাড়িটিকে রূপ দেওয়া হয়েছে ছয়তলায়। তামিমরা থাকেন দোতলায়।
দরজা খুলে অভ্যর্থনা জানালেন নাফিস। বাড়িতে যাওয়ার আগে ফোনে কথা হয়েছিল তামিমের সঙ্গেও। তবে সিরিজ চলার সময় বিধিনিষেধ থাকায় যোগ দিতে পারলেন না এ দফা।
বসার ঘরে ঢুকতেই একটু চমকে যেতে হলো। ঘরভর্তি মানুষ। কেমন একটা উত্সব উত্সব আবহ! কথা বলার সুবিধার্থে মা নুসরাত ইকবাল সবাইকে নিয়ে চলে অন্য ঘরে। বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান নাকি? মৃদু হাসলেন নাফিস, ‘না। আসলে বাড়ির পরিবেশটা এমনই। একান্নবর্তী পরিবার তো।’
বসার ঘরটায় চারপাশটা দেখলে যুগপৎ বিস্ময় আর মুগ্ধতা ভর করবে মনে। বসার ঘর তো নয়, যেন ছোটখাটো ক্রীড়া জাদুঘর! দেয়ালের চারপাশে থরে থরে সাজানো নানা স্মারক, পুরস্কার আর ছবি। সবই প্রায় নাফিস-তামিমের। দুই ভাইয়ের অর্জন তো নেহাত কম নয়। দেয়ালে বাবা ইকবাল খানের বড় একটা প্রতিকৃতি, যিনি নিজেও ছিলেন নামকরা ফুটবলার, ফুটবল কোচ। খান পরিবার থেকে তিন টেস্ট ক্রিকেটার উঠে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এ মানুষটির। বছর পনেরো আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া তিনি এখন কেবলই ছবি।
ছবির নিচে কাচের বাক্সে দুই ভাইয়ের টেস্ট অভিষেকের ক্যাপ। নাফিস অভিষিক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ৩৮তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে, তামিম ৫০তম। পাশেই রয়েছে দুটো ব্যাট। ব্যাট দুটোই তামিমের। একটি ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের, আরেকটি ২০১০ সালের ভারত সিরিজের। তাতে রয়েছে স্কোয়াডে থাকা সবার স্বাক্ষর।
বাঘের চামড়া অনেক অভিজাত পরিবারে যেভাবে সাঁটিয়ে রাখা হয় তেমনি ২০১১ বিশ্বকাপের তামিমের একটা জার্সি সাঁটানো রয়েছে দেয়ালে। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ একটি স্মারক পেয়েছিলেন নাফিস। সেটিও সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে। সাধারণত জয়ের পর অনেক খেলোয়াড় স্মারক হিসেবে ম্যাচের স্টাম্প রেখে দেন। তামিমও কিছু স্মরণীয় জয়ের স্টাম্প রেখেছেন। একটি ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়ের, আরেকটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচটির।
আছে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তথা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্টাম্পও। এটা অবশ্য নাফিসের সংগ্রহ। ওই সিরিজে দুর্দান্ত খেলে নিজেকে ভালোভাবে চিনিয়েছিলেন নাফিস। সিরিজে পেয়েছিলেন একটা গাড়ি। গাড়ির ইয়া বড় ডামি চাবিটিও সযত্নে তুলে রাখা হয়েছে শোকেসে।
ঘরের আরেক প্রান্তে দেখা মিলবে দুই ভাইয়ের অর্জনের নানা স্মৃতিচিহ্ন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে আজ অবধি দুই ভাইয়ের পাওয়া নানা পুরস্কার সাজানো শোকেসে। নাফিস একের পর এক দেখিয়ে চললেন ক্রেস্ট, ট্রফি আর স্মারকগুলো। সঙ্গে চলল গল্প। সেই গল্প যেন ফুরোবেই না!
এর
মধ্যে সবচেয়ে বড় স্মারক কোনটি? কোনটিই বা তাঁদের সবচেয়ে প্রিয়। এ নিয়ে
দ্বিমত থাকতে পারে। তবে একটি অর্জনের কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশের একমাত্র
ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তোলার পর তামিমকে বিশেষ এক
স্মারক দিয়েছিল এমসিসি। সেটিও শোভা পাচ্ছে ঘরের সাদা দেয়ালে।
স্মারক, ছবি, পুরস্কার-অনেক মণি-মুক্তাই তো দেখা হলো। শৈশবের কোনো স্মৃতি নেই? দুই ভাইয়ের প্রথম ব্যাট-প্যাড? নাফিস বললেন, ‘শৈশবের স্মৃতিগুলো সেভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। সবই হারিয়ে গিয়েছে।’ একটু যেন হাহাকার তাঁর কণ্ঠে।
দোতলার সিঁড়িঘরে চোখে পড়বে বাঁধাই করা নাফিস-তামিমের বিরাট এক ছবি। ২০০৯ সালের দিকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন নাফিস। তখন দুই ভাইয়ের ছবিটা তুলেছিলেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শামসুল হক। দুই ভাই এক সঙ্গে জাতীয় দল খেললে নিশ্চয় এমন ছবি জমা হতো আরও! নাফিস খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘নিচে চলেন। ওখানে আরেকটা জিনিস আছে।’
সন্তান হওয়ার পর নাফিসের বাস নিচতলায়। নাফিস নিয়ে গেলেন তামিমের ‘বড় ভক্ত’ ছেলে নামিরের কক্ষে। দেয়ালে একটা স্টাম্প, পাশে কদিন আগে প্রথম আলোয় ছাপা হওয়া বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ছবি। মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সেই ছবিতে আছে নামিরও! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ভাস্তেকে স্টাম্পটি উপহার দিয়েছিলেন তামিম। দলের জয়োত্সবেও রেখেছিলেন ভাতিজাকে।
প্রশ্নটা অবধারিতভাবেই চলে এল, এ পরিবার থেকে নতুন কাউকে পাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট? নাফিসের কাছে উত্তরটা অজানাই। সময়ই বলে দেবে সব। তবে ছেলের ভেতর যে স্বপ্নের বীজ বুনছেন, সেটা পরিষ্কার। নাফিস-তামিমের পর হয়তো নামিরের সৌজন্যে ‘জাদুঘর’টি আরও সমৃদ্ধ হবে!
বছর আটেক আগে দোতলা বাড়িটিকে রূপ দেওয়া হয়েছে ছয়তলায়। তামিমরা থাকেন দোতলায়।
দরজা খুলে অভ্যর্থনা জানালেন নাফিস। বাড়িতে যাওয়ার আগে ফোনে কথা হয়েছিল তামিমের সঙ্গেও। তবে সিরিজ চলার সময় বিধিনিষেধ থাকায় যোগ দিতে পারলেন না এ দফা।
বসার ঘরে ঢুকতেই একটু চমকে যেতে হলো। ঘরভর্তি মানুষ। কেমন একটা উত্সব উত্সব আবহ! কথা বলার সুবিধার্থে মা নুসরাত ইকবাল সবাইকে নিয়ে চলে অন্য ঘরে। বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান নাকি? মৃদু হাসলেন নাফিস, ‘না। আসলে বাড়ির পরিবেশটা এমনই। একান্নবর্তী পরিবার তো।’
বসার ঘরটায় চারপাশটা দেখলে যুগপৎ বিস্ময় আর মুগ্ধতা ভর করবে মনে। বসার ঘর তো নয়, যেন ছোটখাটো ক্রীড়া জাদুঘর! দেয়ালের চারপাশে থরে থরে সাজানো নানা স্মারক, পুরস্কার আর ছবি। সবই প্রায় নাফিস-তামিমের। দুই ভাইয়ের অর্জন তো নেহাত কম নয়। দেয়ালে বাবা ইকবাল খানের বড় একটা প্রতিকৃতি, যিনি নিজেও ছিলেন নামকরা ফুটবলার, ফুটবল কোচ। খান পরিবার থেকে তিন টেস্ট ক্রিকেটার উঠে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এ মানুষটির। বছর পনেরো আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া তিনি এখন কেবলই ছবি।
ছবির নিচে কাচের বাক্সে দুই ভাইয়ের টেস্ট অভিষেকের ক্যাপ। নাফিস অভিষিক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ৩৮তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে, তামিম ৫০তম। পাশেই রয়েছে দুটো ব্যাট। ব্যাট দুটোই তামিমের। একটি ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের, আরেকটি ২০১০ সালের ভারত সিরিজের। তাতে রয়েছে স্কোয়াডে থাকা সবার স্বাক্ষর।
বাঘের চামড়া অনেক অভিজাত পরিবারে যেভাবে সাঁটিয়ে রাখা হয় তেমনি ২০১১ বিশ্বকাপের তামিমের একটা জার্সি সাঁটানো রয়েছে দেয়ালে। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ একটি স্মারক পেয়েছিলেন নাফিস। সেটিও সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে। সাধারণত জয়ের পর অনেক খেলোয়াড় স্মারক হিসেবে ম্যাচের স্টাম্প রেখে দেন। তামিমও কিছু স্মরণীয় জয়ের স্টাম্প রেখেছেন। একটি ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়ের, আরেকটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচটির।
আছে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তথা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্টাম্পও। এটা অবশ্য নাফিসের সংগ্রহ। ওই সিরিজে দুর্দান্ত খেলে নিজেকে ভালোভাবে চিনিয়েছিলেন নাফিস। সিরিজে পেয়েছিলেন একটা গাড়ি। গাড়ির ইয়া বড় ডামি চাবিটিও সযত্নে তুলে রাখা হয়েছে শোকেসে।
ঘরের আরেক প্রান্তে দেখা মিলবে দুই ভাইয়ের অর্জনের নানা স্মৃতিচিহ্ন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে আজ অবধি দুই ভাইয়ের পাওয়া নানা পুরস্কার সাজানো শোকেসে। নাফিস একের পর এক দেখিয়ে চললেন ক্রেস্ট, ট্রফি আর স্মারকগুলো। সঙ্গে চলল গল্প। সেই গল্প যেন ফুরোবেই না!
একের পর এক স্মারক দেখাচ্ছেন আর সেটির গল্প শোনাচ্ছেন নাফিস। ছবি: প্রথম আলো |
স্মারক, ছবি, পুরস্কার-অনেক মণি-মুক্তাই তো দেখা হলো। শৈশবের কোনো স্মৃতি নেই? দুই ভাইয়ের প্রথম ব্যাট-প্যাড? নাফিস বললেন, ‘শৈশবের স্মৃতিগুলো সেভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। সবই হারিয়ে গিয়েছে।’ একটু যেন হাহাকার তাঁর কণ্ঠে।
দোতলার সিঁড়িঘরে চোখে পড়বে বাঁধাই করা নাফিস-তামিমের বিরাট এক ছবি। ২০০৯ সালের দিকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন নাফিস। তখন দুই ভাইয়ের ছবিটা তুলেছিলেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শামসুল হক। দুই ভাই এক সঙ্গে জাতীয় দল খেললে নিশ্চয় এমন ছবি জমা হতো আরও! নাফিস খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘নিচে চলেন। ওখানে আরেকটা জিনিস আছে।’
সন্তান হওয়ার পর নাফিসের বাস নিচতলায়। নাফিস নিয়ে গেলেন তামিমের ‘বড় ভক্ত’ ছেলে নামিরের কক্ষে। দেয়ালে একটা স্টাম্প, পাশে কদিন আগে প্রথম আলোয় ছাপা হওয়া বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ছবি। মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সেই ছবিতে আছে নামিরও! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ভাস্তেকে স্টাম্পটি উপহার দিয়েছিলেন তামিম। দলের জয়োত্সবেও রেখেছিলেন ভাতিজাকে।
প্রশ্নটা অবধারিতভাবেই চলে এল, এ পরিবার থেকে নতুন কাউকে পাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট? নাফিসের কাছে উত্তরটা অজানাই। সময়ই বলে দেবে সব। তবে ছেলের ভেতর যে স্বপ্নের বীজ বুনছেন, সেটা পরিষ্কার। নাফিস-তামিমের পর হয়তো নামিরের সৌজন্যে ‘জাদুঘর’টি আরও সমৃদ্ধ হবে!
No comments