নারীদের ভোটার করতে বিশেষ উদ্যোগ নেই

সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রতিবারের মতো এবারও ভোটারযোগ্য নারীদের তালিকার বাইরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, কমিশন থেকে নারী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ বা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
২০০৮ সালের পর থেকে প্রতিবারই হালনাগাদে নারী ভোটারের সংখ্যা কমে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে নারী ভোটার কেন কমছে, সে বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কমিশনের ওয়েবসাইটে জেলাভিত্তিক ভোটার তালিকা না থাকায় তৃতীয় কোনো পক্ষের এ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগও নেই।
এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটি ভোটার তালিকায় নারী ভোটার কমে যাওয়ার বিষয়টি তৃতীয় পক্ষ দিয়ে তদন্তের দাবি করেছে।
‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জেন্ডার গ্যাপ ও আরও কিছু প্রশ্ন’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে সুজনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংস্থাটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টরাল সিস্টেমস নিরীক্ষা করে এই ভোটার তালিকাকে ৯৯ শতাংশ নির্ভুল বলেছিল। তখন ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি ছিল ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ জন। এরপর যতবার হালনাগাদ হয়েছে, প্রতিবারই নারী ভোটার কমে এসেছে। ২০১৩ সালে হালনাগাদ শেষে দেখা যায়, নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৯ জন বেশি।
২০১১ সালের আদমশুমারির প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের ব্যবধান খুব বেশি না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ভোটার তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ৭ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ জন কম। নারী ভোটার কমে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও ভোলায়। সুজনের মতে, তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি না যাওয়ায় নারীরা ভোটার তালিকার বাইরে থেকে গেছে।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নারী ও পুরুষ ভোটারের ব্যবধান উদ্বেগজনক নয়। তবে কেন কমছে, সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের বাদ দিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, আমার অভিজ্ঞতা বলে, পাড়াগাঁয়ে পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা ভোটার হতে চান না। তবে কমিশন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে প্রচারণা চালালে নারী ভোটারের সংখ্যা বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, এবার ১৫ বছর বয়সীদের ভোটার করার আইনি ভিত্তি কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে ভোটার তথ্য ফরম ছাড়া অন্য কোনো ফরমে নিবন্ধন করা হলে সমস্যা নেই।
সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। তার চেয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দায়িত্ব দিলে তারা অনেক ভালো নির্বাচন করতে পারবে।
জাতিসংঘের সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন সালমা খান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের গড় আয়ু বেশি। দুর্ঘটনায় নারী বেশি মারা যাচ্ছে—সে রকম কোনো সংবাদও তো দেখি না। তাহলে নারী ভোটার কেন কমছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, নারী ভোটাররা যেন তালিকার বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, ব্যবধান কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁরা সুজনের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে নির্বাচন কমিশনের কাছে জেলাভিত্তিক ভোটার তালিকা চেয়েছেন। কিন্তু কমিশন দেয়নি। উল্টো তাঁদের প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত কি না জানতে চেয়েছে।
এ বিষয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাইতে হলে কমিশনের সঙ্গে সুজনকে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। কারণ, প্রতিষ্ঠান তথ্য নিয়ে তা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।
অবশ্য এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য কমিশনের কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য অধিকার আইনে প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়ার সুযোগ নেই। তথ্য চাইতে হবে ব্যক্তিকে।

No comments

Powered by Blogger.