চলে গেলেন ভারতের ‘মিসাইলম্যান’
জন্ম: ১৫ অক্টোবর, ১৯৩১ l মৃত্যু: ২৭ জুলাই, ২০১৫ |
রাষ্ট্রপতি,
বিজ্ঞানী, লেখক—কী ছিলেন না তিনি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হলেও
জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা আর কথা বলাই বেশি পছন্দ ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত সেই
বক্তৃতা দিতে দিতেই পাড়ি জমালেন ওপারে।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান পরমাণুবিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নাল আবেদিন আবদুল কালাম আর নেই। গতকাল সোমবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত, আর খুব সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
গতকাল রাতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার আগে ভারতের ‘মিসাইলম্যান’ খ্যাত সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বি-স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হয় হাসপাতালে। আবদুল কালামের মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘোষণা করা হয়েছে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বনেতারা।
আবদুল কালামের মরদেহ আজ মঙ্গলবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণার আগে শিলংয়ের বেথানি হাসপাতালের পরিচালক জন সেইলো রিনতাথিয়াং সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। আমরা তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। ধারণা করছি তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।’ কিছুক্ষণ পরে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।’
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে, ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর জন্ম আবদুল কালামের। ছোট্ট শহরে এক মৎস্যজীবী পরিবারে খুব দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিলেও তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। আর এই স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ করে দেখিয়েও গেছেন তিনি। খাবার জোটাতে ও পরিবারকে সহায়তা করতে মাত্র আট বছরেই খবরের কাগজ বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে।
আবদুল কালাম তাঁর বইয়ে লিখে গেছেন নিজের আকাশসম স্বপ্নের কথা। তাতে জানান, যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হন তিনি। পরবর্তী সময়ে রকেটবিজ্ঞানী হন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবদুল কালাম হয়ে ওঠেন ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে দেশের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ ছাড়াও ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবেও ভূষিত হন তিনি।
বিমান প্রকৌশলে পড়াশোনা করে ভারতের প্রথম মহাকাশযান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন আবদুল কালাম। ওই মহাকাশযান দিয়েই ১৯৮০ সালে দেশটি প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনীউৎক্ষেপণ করে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে মূল পরীক্ষা চালানোর পর দীর্ঘ ২৪ বছরে ভারতের এটাই ছিল প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা। দেশটিকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করার জন্য যিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, পরে সেই তিনিই নিজেকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যুক্ত করেন।
এ পি জে আবদুল কালাম একাধিকবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে (১৭ অক্টোবর) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন।
বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমার দুটি কারণে অনেক ভালো লাগে। এক. এ দেশের বিস্তৃত জলরাশি। আজও যখন দিল্লি থেকে উড়ে এলাম, তখন দেখছিলাম দেশজুড়ে কত নদী! আসলে তোমাদের নাম হওয়া উচিত “ওয়াটার পিপল”। তোমরা খুব সৌভাগ্যবান। আর দুই. এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। তোমরা নিজেরাও হয়তো জানো না তৈরি পোশাকশিল্পে তোমরা কতটা উন্নত।’
আবদুল কালামের আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার (১৯৯৯) তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে বইটি। তাঁর আরেক উল্লেখযোগ্য বই ইগনাইটেড মাইন্ডস।
[এএফপি, বিবিসিসহ একাধিক বার্তা সংস্থার সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি]
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান পরমাণুবিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নাল আবেদিন আবদুল কালাম আর নেই। গতকাল সোমবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত, আর খুব সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
গতকাল রাতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার আগে ভারতের ‘মিসাইলম্যান’ খ্যাত সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বি-স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হয় হাসপাতালে। আবদুল কালামের মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘোষণা করা হয়েছে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বনেতারা।
আবদুল কালামের মরদেহ আজ মঙ্গলবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণার আগে শিলংয়ের বেথানি হাসপাতালের পরিচালক জন সেইলো রিনতাথিয়াং সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। আমরা তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। ধারণা করছি তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।’ কিছুক্ষণ পরে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।’
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে, ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর জন্ম আবদুল কালামের। ছোট্ট শহরে এক মৎস্যজীবী পরিবারে খুব দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিলেও তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। আর এই স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ করে দেখিয়েও গেছেন তিনি। খাবার জোটাতে ও পরিবারকে সহায়তা করতে মাত্র আট বছরেই খবরের কাগজ বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে।
আবদুল কালাম তাঁর বইয়ে লিখে গেছেন নিজের আকাশসম স্বপ্নের কথা। তাতে জানান, যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হন তিনি। পরবর্তী সময়ে রকেটবিজ্ঞানী হন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবদুল কালাম হয়ে ওঠেন ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে দেশের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ ছাড়াও ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবেও ভূষিত হন তিনি।
বিমান প্রকৌশলে পড়াশোনা করে ভারতের প্রথম মহাকাশযান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন আবদুল কালাম। ওই মহাকাশযান দিয়েই ১৯৮০ সালে দেশটি প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনীউৎক্ষেপণ করে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে মূল পরীক্ষা চালানোর পর দীর্ঘ ২৪ বছরে ভারতের এটাই ছিল প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা। দেশটিকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করার জন্য যিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, পরে সেই তিনিই নিজেকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যুক্ত করেন।
এ পি জে আবদুল কালাম একাধিকবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে (১৭ অক্টোবর) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন।
বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমার দুটি কারণে অনেক ভালো লাগে। এক. এ দেশের বিস্তৃত জলরাশি। আজও যখন দিল্লি থেকে উড়ে এলাম, তখন দেখছিলাম দেশজুড়ে কত নদী! আসলে তোমাদের নাম হওয়া উচিত “ওয়াটার পিপল”। তোমরা খুব সৌভাগ্যবান। আর দুই. এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। তোমরা নিজেরাও হয়তো জানো না তৈরি পোশাকশিল্পে তোমরা কতটা উন্নত।’
আবদুল কালামের আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার (১৯৯৯) তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে বইটি। তাঁর আরেক উল্লেখযোগ্য বই ইগনাইটেড মাইন্ডস।
[এএফপি, বিবিসিসহ একাধিক বার্তা সংস্থার সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি]
No comments