১২ গ্রামে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগে মানুষ by মনিরুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ১২টি গ্রামের মাঠঘাট তলিয়ে
পানি ঢুকে পড়েছে ঘরবাড়িতে। ভারগাঁও গ্রামের একটি
বাড়িতে দরজার কাছে নৌকা বাঁধা, রান্না চলছে
গোড়ালিসমান পানিতে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের ১২ গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে ওই গ্রামগুলোর কয়েক শ মানুষ গতকাল রোববার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
এলাকার বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী-নারায়ণগঞ্জ অগ্রণী সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও, বাটপাড়া, বান্দাপাড়া, চিড়িপাড়া, উত্তর দরগাবাড়ি, রসুলবাগ, খিদিরপুর, বড়ভিটা, নাওড়াভিটা, মোল্লাবাড়ি, পশ্চিম ভারগাঁও ও পাডামারা গ্রামের নয় হাজার মানুষ এক মাস ধরে জলাবদ্ধতার কারণে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গতকাল রোববার সকালে গ্রামগুলোতে নৌকা নিয়ে গিয়ে দেখা যায়, সব সড়ক, কবরস্থান, মসজিদসহ মানুষের বাড়িঘরের ভেতরে পানি। কোনো কোনো বাড়িতে কোমর থেকে বুকপানি জমে আছে। ছোট ছোট নৌকা ছাড়া মানুষ চলাচল করতে পারছে না। গ্রামগুলোর অনেক বাসিন্দা দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এ সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য গ্রামগুলোর অনেক ছেলেমেয়ের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গত এক মাসে গ্রামগুলোর ৬৫ জন মানুষ ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রূপগঞ্জের তারাব ও কাঁচপুরের শিল্প এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি বেড়িবাঁধের ভেতরের খাল দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে এ এলাকায় এসে জমছে। খাল খনন, শিল্পকারখানার দূষিত পানি আসা বন্ধ রাখা ও স্লুইসগেট নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশন করতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওশন আরা বেগম বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য এ এলাকার ১৭০ হেক্টর জমিতে কোনো ধরনের ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে গতকাল সকালে স্থানীয় ভারগাঁও সড়কে একত্র হয়ে কয়েক শ মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময় খিদিরপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন (৫৫) বলেন, ‘পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার পরিবারের চার সদস্য এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জলাবদ্ধতার সমাধান না হলে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁঞা গত শনিবার বলেন, ‘জলাবদ্ধতার জন্য ১২ গ্রামের মানুষ খুবই দুর্ভোগে রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘গ্রামগুলোর মানুষের দুর্ভোগ যাতে না হয় সে জন্য আমি একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এ ছাড়া গত শনিবার আমি ৫০০ মানুষকে খাবারসহ আর্থিক অনুদান দিয়েছি।’

No comments

Powered by Blogger.