চলে গেলেন মিসাইলম্যান: এপিজে আবদুল কালাম
এপিজে আবদুল কালাম |
ভারতের
সাবেক প্রেসিডেন্ট, মিসাইল প্রযুক্তির জনক এপিজে আবদুল কালাম মারা গেছেন।
গত রাতে তিনি শিলংয়ে মারা যান। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ইন্ডিয়ান
ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট ইন শিলংয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি অকস্মাৎ
অচেতন হয়ে পড়ে যান। তাকে দ্রুততার সঙ্গে বিথানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় তাকে। রাখা হয় হাসপাতালের
নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউতে)। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকরা তৎপর হয়ে ওঠেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি তারা। চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা
পিটিআইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এতে বলা হয়, খাসি হিলসের এসপি এম খারক্রাং এ কথার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
মহত এই ব্যক্তিত্ব ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট
হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর
রামেশ্বরমে তার জন্ম। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নিউক্লিয়ার যে পরীক্ষা চালানো হয়
তাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে প্রথম ভারতে এ
পরীক্ষা করা হয়েছিল। তিনি ভারতে দ্য মিসাইল ম্যান নামেও বেশি পরিচিত। তার
অসাধারণ অর্জনের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ ও ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত
করে। এরপর ২০০২ সালে তিনি ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পদার্থবিদ্যা ও
এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। চার দশক ধরে পালন করেছেন
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব।
যুক্ত ছিলেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও।
ওদিকে তার মৃত্যুতে ভারত সরকার সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে ভারতের সর্বস্তরের মানুষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ড . কালাম ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। তার ছিল অঢেল জ্ঞানের ভাণ্ডার। তার এ মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি যে শূন্যতা রেখে গেলে তা সহজে পূরণ হবার নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় বলেন, ড. এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন জনগণের প্রেসিডেন্ট। মহান এই আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধা। জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, স্মরণ করছি ড. কালাম যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকারে দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে। তাহলো তিনি কি গলাবন্ধ পরবেন? তিনি কি তার চুলের ধরণ পাল্টাবেন? তিনি গলাবন্ধ নিয়ে বেশ খুশিমনে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের চুলের ধরণ পাল্টাতে অস্বীকার করেন।
এক নজরে আবদুল কালাম: পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম (এপিজে আবদুল কালাম)। ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট তিনি (২০০২ থেকে ২০০৭) এবং একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনিই ভারতে প্রথম পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেন। এ জন্য তাকে মিসাইল প্রযুক্তির জনক বলা হয়। আবদুল কালামের জন্ম তামিলনাড়ুর উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বরামে। পিতার নাম জয়নুল আবেদিন ও মাতার নাম আসিআম্মা। তিনি খুব গরিব পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। তার পড়াশুনার বিষয় ছিল এ্যারোসেপস ইঞ্জিনিয়ারিং। চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও ইন্ডিয়ান সেপস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (আইএসআরও) কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও সামরিক মিসাইল তৈরিতে প্রচুর অবদান রাখেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল ও তার উৎক্ষেপণ যান তৈরিতে তার অবদানের জন্য তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা পোখরান-২ এর তিনি ছিলেন মুখ্য অবদানকারী। তিনি ২০০২ সালে ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ওদিকে তার মৃত্যুতে ভারত সরকার সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে ভারতের সর্বস্তরের মানুষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ড . কালাম ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। তার ছিল অঢেল জ্ঞানের ভাণ্ডার। তার এ মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি যে শূন্যতা রেখে গেলে তা সহজে পূরণ হবার নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় বলেন, ড. এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন জনগণের প্রেসিডেন্ট। মহান এই আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধা। জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, স্মরণ করছি ড. কালাম যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকারে দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে। তাহলো তিনি কি গলাবন্ধ পরবেন? তিনি কি তার চুলের ধরণ পাল্টাবেন? তিনি গলাবন্ধ নিয়ে বেশ খুশিমনে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের চুলের ধরণ পাল্টাতে অস্বীকার করেন।
এক নজরে আবদুল কালাম: পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম (এপিজে আবদুল কালাম)। ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট তিনি (২০০২ থেকে ২০০৭) এবং একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনিই ভারতে প্রথম পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেন। এ জন্য তাকে মিসাইল প্রযুক্তির জনক বলা হয়। আবদুল কালামের জন্ম তামিলনাড়ুর উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বরামে। পিতার নাম জয়নুল আবেদিন ও মাতার নাম আসিআম্মা। তিনি খুব গরিব পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। তার পড়াশুনার বিষয় ছিল এ্যারোসেপস ইঞ্জিনিয়ারিং। চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও ইন্ডিয়ান সেপস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (আইএসআরও) কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও সামরিক মিসাইল তৈরিতে প্রচুর অবদান রাখেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল ও তার উৎক্ষেপণ যান তৈরিতে তার অবদানের জন্য তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা পোখরান-২ এর তিনি ছিলেন মুখ্য অবদানকারী। তিনি ২০০২ সালে ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এপিজে আবদুল কালামের স্মরণীয় ১০ উক্তি
ভারতের
সাবেক প্রেসিডেন্ট, মিসাইল ম্যান হিসেবে খ্যাত ড. এপিজে আবদুল কালাম গতকাল
মেঘালয়ের শিলংয়ে মারা গেছেন। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, শিলংয়ে
বক্তব্য দিতে গিয়ে অকস্মাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। দ্রুত তাকে বিথান
হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান তিনি। একধারে তিনি ছিলেন ভারতের আধুনিক
প্রযুক্তির জনক, লেখক। সর্বশেষ তিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন
ভারতের প্রেসিডেন্ট। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন একজন দার্শনিকও। তার দর্শন ফুটে
উঠেছে তার বিভিন্ন লেখা, বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এখানে তার আলোচিত ১০টি
উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো।
এক. স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।
দুই. পরম উৎকর্ষতা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা হঠাৎ করেই আসে না।
তিন. জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।
চার. সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত।
পাঁচ. যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মে কাছে একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ভারত দিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা স্মরণীয় হতে পারবো।
ছয়. যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করে না তারা যা অর্জন করে তা ফাঁকা, তা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
সাত. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।
আট. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সেমতো কাজ করে তাদের কাছে সেরাটা ধরা দেয়।
নয়. যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় ও সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক।
দশ. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে, আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে, যেপথে কেউ যায় নি সেপথে চলতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে, সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহত গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।
এক. স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।
দুই. পরম উৎকর্ষতা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা হঠাৎ করেই আসে না।
তিন. জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।
চার. সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত।
পাঁচ. যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মে কাছে একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ভারত দিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা স্মরণীয় হতে পারবো।
ছয়. যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করে না তারা যা অর্জন করে তা ফাঁকা, তা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
সাত. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।
আট. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সেমতো কাজ করে তাদের কাছে সেরাটা ধরা দেয়।
নয়. যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় ও সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক।
দশ. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে, আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে, যেপথে কেউ যায় নি সেপথে চলতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে, সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহত গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।
মায়ের স্বপ্ন: সমুদ্র পেরিয়ে যাবে ছেলের নাম
এপিজে
আবদুল কালামের মা আসিআম্মা। তিনি ছেলেকে নিয়ে দেখতেন বড় স্বপ্ন। হয়তো তিনি
বুঝতে পেরেছিলেন দিন আনি দিন খাই পরিবারে জন্ম নেয়া এই ছেলেটি একদিন এমন
নাম করবে, যা পেরিয়ে যাবে সমুদ্র পেরিয়ে দূরে। তাই তিনি সংসারের নামমাত্র
পুঁজি থেকে কিনতেন ছেলের পড়াশোনার জন্য বাড়তি কেরোসিন। তাতেই রাত জেগে
আবদুল কালাম পড়াশোনা করতেন। কর্মজীবনে ঠিক দু’দিন ছুটি নিয়েছিলেন আবদুল
কালাম। সেটা মায়ের আর বাবার মৃত্যুদিনে। বলে গিয়েছিলেন, আমার মৃত্যুতে ছুটি
ঘোষণা করো না। আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে তার শৈশবকালের, কৈশোর আর জীবনের নানা প্রান্তের কথা। এতে বলা হয়েছেÑ আর সাত ভাইবোনের জন্য মা শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোট ছেলেটার জন্য করতেন বাড়তি কয়েকটা রুটি। ভোর চারটেয় উঠে পড়তে বসবে সে। তখন খিদে পাবে তো। শুধু তা-ই নয়। দিন-আনি-দিন-খাইয়ের সংসারে নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন বাড়তি কেরোসিন। কত রাত পর্যন্ত ছেলে পড়াশোনা করবে কে জানে! লেখাপড়া শিখেই যে এই ছেলে অনেক দূর যাবে, ঠিক জানতেন মা। স্বপ্ন দেখতেন, তাঁদের বাড়ির খুব কাছেই যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রও ছাড়িয়ে যাবে তাঁর ছেলের নামডাক।
মায়ের সেই স্বপ্ন সত্যি করেছিলেন আবদুল কালাম। তবে রাস্তাটা নেহায়েত সোজা ছিল না। ১৯৩১ সালের ১৫ ই অক্টোবর। তামিলনাড়–র রামেশ্বরমে এক অতি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম। বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন এক সাধারণ মৎস্যজীবী। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই রোজগারের তাগিদে খবরের কাগজ বিক্রি করতে হতো আবদুলকে। স্কুল পাশ করে কলেজে পড়ার জন্য একটা বৃত্তি পান তিনি। ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে। ১৯৫৪ সালে সেখান থেকেই পদার্থবিদ্যায় স্নাতক। তার পর ফের স্কলারশিপ নিয়ে চেন্নাইয়ে। পড়তে শুরু করেন এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং। তার স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীতে বিমানচালক হবেন। তাঁর ক্লাসের প্রথম আট জনকে বিমানববাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কালাম হয়েছিলেন নবম। সে-যাত্রায় তাই আর যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে উঠা হয়নি কালামের।
বিমানচালক হয়ে ওঠা হল না। তবে নিজের অদম্য চেষ্টায় তিনি হয়ে উঠলেন দেশের ‘মিসাইল ম্যান’। ১৯৯৮ সালে পোখরান বিস্ফোরণ পরীক্ষার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। পড়াশোনার জন্য একবারই শুধু গিয়েছিলেন বিদেশে, ১৯৬৩-৬৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘নাসা’য়। যে বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতেন মা আসিআম্মা, সেই সমুদ্রসৈকতেই দু’দশক ধরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করে গিয়েছেন তার ছেলে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ছিলেন ডিআরডিও, ইসরোয়। মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণায় তাঁর অবদানের জন্য পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও ভারতরতেœ সম্মানীত হয়েছিলেন আবদুল কালাম। ২০০২ সালে ভারতের একাদশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছিলেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা সর্বসাধারণ, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। ছেলে-বুড়ো, বিজ্ঞানী-শিক্ষক সকলের কাছেই তিনি ছিলেন ‘সর্বসাধারণের প্রেসিডেন্ট’। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে যান পড়াশোনার জগতে। শিলং, ইনদওর ও আহমদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, তিরুঅনন্তপুরমের ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিয়মিত পড়াতেন। এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মঞ্চেই বক্তৃতা দিতে দিতে তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া তাই এক আশ্চর্য সমাপতন!
ধর্মের গোঁড়ামি এড়িয়ে চলতেন বাবা-মা। ছোটবেলা থেকে মুক্তমনা ছিলেন কালামও। গড়গড় করে মুখস্থ বলতে পারতেন ভগবদ্গীতা। পবিত্র কোরআন শরিফও। শুধু বইয়েই ডুবে থাকতেন না তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, কোথাও যাওয়ার আগেই পকেট থেকে বার করে ফেলতেন ছোট্ট চিরুনি। নামজাদা হেয়ার স্টাইলিস্টের কল্যাণে তৈরি হয়েছিল তাঁর নিজস্ব চুলের ছাঁট। সব সময় বলতেন, লেখাপড়ার কোনও বিকল্প হয় না। স্কুলপড়–য়াদেরও বার বার অনুপ্রাণিত করে বলেছেন, নিজের ভবিষ্যতের কারিগর হতে গেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর কখনও কাজে ফাঁকি দেবে না। নিজের জীবনেও এ কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন। কর্মজীবনে ঠিক দু’দিন ছুটি নিয়েছিলেন, মায়ের আর বাবার মৃত্যুদিনে। বলে গিয়েছিলেন, আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না। আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে তার শৈশবকালের, কৈশোর আর জীবনের নানা প্রান্তের কথা। এতে বলা হয়েছেÑ আর সাত ভাইবোনের জন্য মা শুধু ভাত রাঁধতেন। কিন্তু ছোট ছেলেটার জন্য করতেন বাড়তি কয়েকটা রুটি। ভোর চারটেয় উঠে পড়তে বসবে সে। তখন খিদে পাবে তো। শুধু তা-ই নয়। দিন-আনি-দিন-খাইয়ের সংসারে নামমাত্র পুঁজি থেকে কিনতেন বাড়তি কেরোসিন। কত রাত পর্যন্ত ছেলে পড়াশোনা করবে কে জানে! লেখাপড়া শিখেই যে এই ছেলে অনেক দূর যাবে, ঠিক জানতেন মা। স্বপ্ন দেখতেন, তাঁদের বাড়ির খুব কাছেই যে বঙ্গোপসাগর, সেই বিশাল সমুদ্রও ছাড়িয়ে যাবে তাঁর ছেলের নামডাক।
মায়ের সেই স্বপ্ন সত্যি করেছিলেন আবদুল কালাম। তবে রাস্তাটা নেহায়েত সোজা ছিল না। ১৯৩১ সালের ১৫ ই অক্টোবর। তামিলনাড়–র রামেশ্বরমে এক অতি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম। বাবা জয়নুল আবদিন ছিলেন এক সাধারণ মৎস্যজীবী। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই রোজগারের তাগিদে খবরের কাগজ বিক্রি করতে হতো আবদুলকে। স্কুল পাশ করে কলেজে পড়ার জন্য একটা বৃত্তি পান তিনি। ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে। ১৯৫৪ সালে সেখান থেকেই পদার্থবিদ্যায় স্নাতক। তার পর ফের স্কলারশিপ নিয়ে চেন্নাইয়ে। পড়তে শুরু করেন এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং। তার স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীতে বিমানচালক হবেন। তাঁর ক্লাসের প্রথম আট জনকে বিমানববাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কালাম হয়েছিলেন নবম। সে-যাত্রায় তাই আর যুদ্ধবিমানের চালক হয়ে উঠা হয়নি কালামের।
বিমানচালক হয়ে ওঠা হল না। তবে নিজের অদম্য চেষ্টায় তিনি হয়ে উঠলেন দেশের ‘মিসাইল ম্যান’। ১৯৯৮ সালে পোখরান বিস্ফোরণ পরীক্ষার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। পড়াশোনার জন্য একবারই শুধু গিয়েছিলেন বিদেশে, ১৯৬৩-৬৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘নাসা’য়। যে বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতেন মা আসিআম্মা, সেই সমুদ্রসৈকতেই দু’দশক ধরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করে গিয়েছেন তার ছেলে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ছিলেন ডিআরডিও, ইসরোয়। মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণায় তাঁর অবদানের জন্য পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও ভারতরতেœ সম্মানীত হয়েছিলেন আবদুল কালাম। ২০০২ সালে ভারতের একাদশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছিলেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা সর্বসাধারণ, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। ছেলে-বুড়ো, বিজ্ঞানী-শিক্ষক সকলের কাছেই তিনি ছিলেন ‘সর্বসাধারণের প্রেসিডেন্ট’। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার ফিরে যান পড়াশোনার জগতে। শিলং, ইনদওর ও আহমদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, তিরুঅনন্তপুরমের ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে নিয়মিত পড়াতেন। এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মঞ্চেই বক্তৃতা দিতে দিতে তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া তাই এক আশ্চর্য সমাপতন!
ধর্মের গোঁড়ামি এড়িয়ে চলতেন বাবা-মা। ছোটবেলা থেকে মুক্তমনা ছিলেন কালামও। গড়গড় করে মুখস্থ বলতে পারতেন ভগবদ্গীতা। পবিত্র কোরআন শরিফও। শুধু বইয়েই ডুবে থাকতেন না তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, কোথাও যাওয়ার আগেই পকেট থেকে বার করে ফেলতেন ছোট্ট চিরুনি। নামজাদা হেয়ার স্টাইলিস্টের কল্যাণে তৈরি হয়েছিল তাঁর নিজস্ব চুলের ছাঁট। সব সময় বলতেন, লেখাপড়ার কোনও বিকল্প হয় না। স্কুলপড়–য়াদেরও বার বার অনুপ্রাণিত করে বলেছেন, নিজের ভবিষ্যতের কারিগর হতে গেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর কখনও কাজে ফাঁকি দেবে না। নিজের জীবনেও এ কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গিয়েছেন। কর্মজীবনে ঠিক দু’দিন ছুটি নিয়েছিলেন, মায়ের আর বাবার মৃত্যুদিনে। বলে গিয়েছিলেন, আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না। আমায় যদি ভালবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সে দিন।
No comments