ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্বে খেয়াঘাট ফের বন্ধ

ক্ষমতাসীনদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ময়মনসিংহ শহরের কাছারি ঘাটে খেয়া পারাপার আবার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
পুলিশ ও কাছারি ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের কাছারি ঘাট এলাকা থেকে বালু তোলা নিয়ে ময়মনসিংহ শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে আরিফ ও চর ঈশ্বরদিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ-সমর্থক মো. সেলিমের মধ্যে বিরোধ আছে। কয়েক মাস আগে কাছারি ঘাট এলাকায় অবস্থিত মামুনের ভাইয়ের যৌথ মালিকানার একটি রেস্তোরাঁয় সেলিমের লোকজন হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর থেকে ঘাট এলাকায় সব সময় পুলিশ পাহারা থাকে। সে সময় ঘাটে খেয়া পারাপার কয়েক দিন বন্ধ ছিল। সর্বশেষ গত বুধবার মামুনের পক্ষের চরাঞ্চলের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে সেলিমের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে সেলিমের লোকজন মামুনের চরাঞ্চলের সমর্থকদের প্রায় ৩০টি বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। ওই ঘটনায় চর ঈশ্বরদিয়া এলাকার আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি সেলিমসহ ২৬ জনের নামে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। গত শনিবার দুপুরে মামুনের পক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন সেলিমের গ্রেপ্তারের দাবিতে ময়মনসিংহ শহরের সি কে ঘোষ রোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা সরে যান।
বৃহস্পতিবার রাতে সেলিমের লোকজন বাড়িঘর ভাঙচুর করার পর থেকে ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাছারি ঘাট এলাকায় বালু উত্তোলন ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাঝিদের নৌকা না চালানোর হুমকি দেন সেলিম। মাঝিরা চরাঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় সেলিমের ভয়ে নৌকা চালাতে ভয় পাচ্ছেন।
চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামের মো. কালাম বলেন, তিনি শহরের একটি দোকানে মালামাল আনা-নেওয়ার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ঘাট বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে শহরের কর্মস্থলে আসতে নদীর চরে প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটতে হচ্ছে। চরের ওই সব পথে জোঁক ও শিয়ালের আক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে শম্ভুগঞ্জ এলাকা দিয়ে সেতু পার হয়ে শহরে আসা-যাওয়া করছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘রাজনীতি নিয়া নেতাদের ঝগড়া থাকলে থাকুক। কিন্তু দুই দিন পরপর ঘাট বন্ধ কইরা দিয়া আমরারে কষ্ট দেয়। পুলিশ কি পারে না ঘাটে নৌকা বন্ধ করার হুকুমদাতাদের ধরতে?’
কাছারি ঘাট এলাকার মহিলা সমিতি উদয়ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামছুন্নাহার বেগম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ৪৩০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আজ (শনিবার) মাত্র ৬৪ জন এসেছে। যারা এসেছে, সবাই শহরের বাসিন্দা। ঘাট বন্ধ থাকায় নদীর ওই পারের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর কেউই আসতে পারছে না।
গতকাল রোববার মো. সেলিম ও আবদুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঝিদের নৌকা চালাতে বলি। কিন্তু ভয়ে মাঝিরা নৌকা চালান না। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের ঘটনায় সেলিমের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

No comments

Powered by Blogger.