মিলন হত্যার চার বছর: জনমনে ক্ষোভ, ব্যাখ্যা চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর
মিলন হত্যার চার বছর |
কিশোর
শামছুদ্দিন মিলনকে (১৬) ‘ডাকাত সাজিয়ে’ পিটিয়ে হত্যার মামলায় চূড়ান্ত
প্রতিবেদন দেওয়ায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন
পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘বিচার
মাটিচাপা দিল পুলিশ’ শীর্ষক সংবাদটি দেখে তিনি এ ব্যাখ্যা চান। পুলিশ সদর
দপ্তরের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মিলন হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সর্বস্তরের মানুষ। এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো বিচারের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ও পুলিশের সাবেক প্রধান নূরুল হুদা। যদিও পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মিলনের পরিবারের সঙ্গে রফা করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করেন, মিলন হত্যা মামলার বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রের।
এই মামলা প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক আইজি নূরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন, তাঁরা অন্য জগৎ থেকে আসেননি। তাঁরা এই পৃথিবীরই বাসিন্দা। দলবদ্ধ উন্মত্ততার সংস্কৃতি দেশে বিরাজমান। যখন কিশোরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, তখন কি সেখানে কোনো বয়স্ক লোক ছিলেন না? তাকে বাঁচাতে কেউ একজন কি এগিয়ে আসতে পারতেন না? তখন সবাই মজা দেখেছেন। পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের পবিত্র দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়েছিলেন।
নূরুল হুদার প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী করছে? পুলিশ প্রশাসন কেন যথাযথ ব্যবস্থা নিল না? ৫২ বার আদালত থেকে সময় নিয়ে তদন্ত দীর্ঘায়িত করা হলো, অথচ কারও পক্ষ থেকে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করা হলো না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক চাপ, সামাজিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক মনে করেন, ‘বয়স যা-ই হোক না কেন, এখানে একজন মানুষ খুন হয়েছে। সেই মানুষের মা-বাবা যদি বলেন, তাঁদের এ খুনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই, তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। এটি কোনো জমিজমার মামলা না। এ ঘটনা টাকা দিয়ে মীমাংসারও কোনো বিষয় নয়। পাঁচ লাখ কেন, ৫০০ কোটি টাকা দিয়েও তা সুরাহা করার কোনো সুযোগ নেই। এই কিশোর খুনের ঘটনায় অবশ্যই পুনঃ তদন্ত করা জরুরি। ফৌজদারি মামলার কোনো সময়সীমা নেই। পুলিশ প্রশাসনের উঁচু পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
মিলনের মা কোহিনুর বেগম গতকাল প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মিলনের বাবাকে এসআই আকরাম শেখ বিদেশ থেকে দেশে এনে আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। তিনি দেশে আসায় সংসারে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তিনি আমাকে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেন। আমিও তাতে রাজি হই। কারণ, ডিবি পুলিশ, আদালত ও বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে আরও আমি নিঃস্ব হয়ে পড়ি। তা ছাড়া, সংসারে পুরুষ কিছু বললে না রেখে পারা যায় না।’
এ নিয়ে আলাপকালে বসুরহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিলন হত্যার ভিডিও চিত্র প্রকাশ পাওয়ার পর সারা দেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ধারণা ছিল এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আর সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজতে হবে না। কারণ, ভিডিও চিত্রে সবকিছু স্পষ্ট দেখা গেছে, কারা-কীভাবে হত্যা করেছে।
চর ফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে অন্য খুনিদেরও বাঁচিয়ে দিল।
মিলনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল তাদের চর ফকিরা গ্রামের মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে পরিবার। বিকেলে বাড়ির দরজার প্রায় দুই ফুট পানি মাড়িয়ে মিলনদের ঘরে গেলে তার মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার চেয়েও পাইনি, তাই মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্য বাদ জোহর এলাকার মসজিদে মিলাদ ও দোয়া করিয়েছি।’
২০১১ সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া এলাকায় নিরীহ কিশোর মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ গাড়িতে করে এনে জনতার হাতে ছোট্ট এই কিশোরকে ছেড়ে দেয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মিলন হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সর্বস্তরের মানুষ। এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো বিচারের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ও পুলিশের সাবেক প্রধান নূরুল হুদা। যদিও পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মিলনের পরিবারের সঙ্গে রফা করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করেন, মিলন হত্যা মামলার বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রের।
এই মামলা প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক আইজি নূরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন, তাঁরা অন্য জগৎ থেকে আসেননি। তাঁরা এই পৃথিবীরই বাসিন্দা। দলবদ্ধ উন্মত্ততার সংস্কৃতি দেশে বিরাজমান। যখন কিশোরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, তখন কি সেখানে কোনো বয়স্ক লোক ছিলেন না? তাকে বাঁচাতে কেউ একজন কি এগিয়ে আসতে পারতেন না? তখন সবাই মজা দেখেছেন। পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের পবিত্র দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়েছিলেন।
নূরুল হুদার প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী করছে? পুলিশ প্রশাসন কেন যথাযথ ব্যবস্থা নিল না? ৫২ বার আদালত থেকে সময় নিয়ে তদন্ত দীর্ঘায়িত করা হলো, অথচ কারও পক্ষ থেকে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করা হলো না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সামাজিক চাপ, সামাজিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক মনে করেন, ‘বয়স যা-ই হোক না কেন, এখানে একজন মানুষ খুন হয়েছে। সেই মানুষের মা-বাবা যদি বলেন, তাঁদের এ খুনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই, তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। এটি কোনো জমিজমার মামলা না। এ ঘটনা টাকা দিয়ে মীমাংসারও কোনো বিষয় নয়। পাঁচ লাখ কেন, ৫০০ কোটি টাকা দিয়েও তা সুরাহা করার কোনো সুযোগ নেই। এই কিশোর খুনের ঘটনায় অবশ্যই পুনঃ তদন্ত করা জরুরি। ফৌজদারি মামলার কোনো সময়সীমা নেই। পুলিশ প্রশাসনের উঁচু পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
মিলনের মা কোহিনুর বেগম গতকাল প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মিলনের বাবাকে এসআই আকরাম শেখ বিদেশ থেকে দেশে এনে আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। তিনি দেশে আসায় সংসারে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তিনি আমাকে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেন। আমিও তাতে রাজি হই। কারণ, ডিবি পুলিশ, আদালত ও বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে আরও আমি নিঃস্ব হয়ে পড়ি। তা ছাড়া, সংসারে পুরুষ কিছু বললে না রেখে পারা যায় না।’
এ নিয়ে আলাপকালে বসুরহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিলন হত্যার ভিডিও চিত্র প্রকাশ পাওয়ার পর সারা দেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ধারণা ছিল এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আর সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজতে হবে না। কারণ, ভিডিও চিত্রে সবকিছু স্পষ্ট দেখা গেছে, কারা-কীভাবে হত্যা করেছে।
চর ফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে অন্য খুনিদেরও বাঁচিয়ে দিল।
মিলনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল তাদের চর ফকিরা গ্রামের মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে পরিবার। বিকেলে বাড়ির দরজার প্রায় দুই ফুট পানি মাড়িয়ে মিলনদের ঘরে গেলে তার মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার চেয়েও পাইনি, তাই মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্য বাদ জোহর এলাকার মসজিদে মিলাদ ও দোয়া করিয়েছি।’
২০১১ সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া এলাকায় নিরীহ কিশোর মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ গাড়িতে করে এনে জনতার হাতে ছোট্ট এই কিশোরকে ছেড়ে দেয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
No comments