কক্সবাজারে সাত দিনে পাঁচ লাখ পর্যটকের ভ্রমণ- বৃষ্টিতেও পর্যটকে ভরপুর by আব্দুল কুদ্দুস

পর্যটকে ঠাসা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত l প্রথম আলো
অবিরাম বৃষ্টি। থামছে খুব কম সময়ের জন্য। এর মধ্যেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে হাজারো পর্যটকের দাপাদাপি। বৃষ্টির বাধা মানছে না পর্যটকেরা। ঈদের পর দিন থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। হোটেলমালিকদের হিসাবমতে, গত সাত দিনে সৈকত ভ্রমণ করেছেন অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের প্রথম দিন সৈকত ভ্রমণে আসেন দেড় হাজারের মতো পর্যটক। দ্বিতীয় দিন প্রায় ৭০ হাজার। তৃতীয় দিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন শহরের কোথাও হোটেল–মোটেল খালি নেই। যে হারে কক্ষ ভাড়া হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সাত লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, ঝুম বৃষ্টিতেও হাজারো পর্যটক সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। অনেকে বালুচরের ছাতার নিচে বসা। কেউ তুলছেন ছবি।
চট্টগ্রাম মহানগরের নাসিরাবাদ থেকে আসা কলেজছাত্র মিজানুর রহমান জানান, ‘একটু আগে সমুদ্রে গোসল করেছি। এখন বালুচরে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছি।’
দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা দলবেঁধে ছুটছেন টেকনাফ, মাথিন কূপ, সেন্ট মার্টিন, প্যাঁচার দ্বীপ, মারমেইড ইকো বিচ রিসোর্ট, হিমছড়ি, রামু বৌদ্ধপিল্ল, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে।
তবে কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হোটেলমালিকেরা পাঁচ শ টাকার কক্ষ ভাড়া দেড় হাজার এবং এক হাজার টাকার ভাড়া তিন-চার হাজার টাকা করে আদায় করছেন। রেস্তোরাঁগুলোতেও অতিরিক্ত হারে খাবারের মূল্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘পর্যটকেরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে হোটেলমালিকেরা সতর্ক। তবে কিছু হোটেলমালিকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাচ্ছি। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে।’
সৈকতের ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন জানান, পর্যটক না থাকায় পুরো রোজার মাসে তিনি এক হাজার টাকাও আয় করতে পারেননি। এখন দৈনিক পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন।
সৈকতে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে ১৬৫টি। ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা এসব দোকান থেকে নানা পণ্য কেনেন। সৈকত ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাশেম আলী জানান, পর্যটক না থাকায় ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ১৬৫টি দোকানের দৈনিক ক্ষতি ছিল প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। এখন প্রতিটা দোকানে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার শামুক ঝিনুকের তৈরি পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কক্সবাজার টুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) প্রধান উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান জানান, পর্যটকে ভরপুর থাকায় হোটেল-মোটেলসহ নানা ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। এত দিন টুয়াকের তালিকাভুক্ত ৮৩টি টুরিজম প্রতিষ্ঠানের তিন হাজারের বেশি কর্মচারী বেকার জীবন কাটান। এখন তাঁরাও লাভবান হচ্ছেন। হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঈদের পর গত সাত দিনের কক্সবাজারের হোটেল–মোটেলসহ পর্যটন ব্যবসায় লেনদেন হয়েছে ১০৫ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে হোটেলমালিকদের আয় হবে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে দুই কোটি টাকারও বেশি।

No comments

Powered by Blogger.