ন্যক্বারজনক ‘বাংলিশ’ নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট
অবশেষে
নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷ ভাষার অপমান আর বিকৃতি রুখতে এগিয়ে এল হাইকোর্ট৷
বেতার বা টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করা হল কুৎসিত ‘বাংলিশ’ ভাষা৷
যেনতেন প্রকারেণ মিশিয়ে দিলেই হল৷ বাংলা নয়, বাংলার সঙ্গে ইংরেজি হিন্দি প্রভৃতি ভাষাকে মিশিয়ে বাংলার অপমান করে যে ভাষারীতি চালু হয়েছে সাম্প্রতিক কালে, তাকে এবার নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট৷ বাংলাদেশের হাইকোর্টের এই উদ্যোগের জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়৷ যে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করতে বাহান্ন-র ভাষা আন্দোলনে বাঙালিরা শহীদ হয়েছেন, হাজার বছর ধরে যে ভাষা ক্রমশ বিস্তৃতি আর প্রসার লাভ করেছে, জয়দেব থেকে বিদ্যাপতি, রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল পর্যন্ত মনীষী সদৃশ কবি, লেখক, গায়ক যে ভাষাকে শতাব্দের পর শতাব্দ সমৃদ্ধ করেছেন, সেই মায়ের ভাষাকে একপ্রকার ধর্ষণ করে চলেছে নব্য প্রজন্মের কুৎসিত ইংরেজিয়ানা৷ বাংলার মধ্যে বিদেশি শব্দ আর বাক্যবন্ধের অবাধ মিশেল ঘটিয়ে তারা যে ভাষা ব্যবহার করে তাকে আর যাই হোক বাংলা বললে বাংলারই অপমান হয়৷ এই প্রতিনিয়ত অপমানের পঙ্কিল পথ রুদ্ধ করতে হাইকোর্ট উদ্যোগ নিলেন এবং আইনি পথে৷ বলা হয়েছে, বেতারে বা টেলিভিশনে যে ন্যক্বারজনক বাংলা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, হাজার বছরের পুরানো এই ভাষার সম্মান রক্ষার্থে অর্থহীন বাংলিশ-এর ব্যবহার চলবে না৷
বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সংবাদসংস্থা এএফপি-র কাছে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, অনেকদিন ধরেই এই দাবি তাঁদের ছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ের কিছু এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তারা যে অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এর ফলে আমাদের অপরূপ মাতৃভাষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে৷ হাইকোর্টের এই আদেশ অত্যন্ত সময়োপোযোগী বলে তাঁর মত৷ তিনি মনে করেন, এর ফলে বাংলা ভাষা তার মর্যাদা ফিরে পাবে৷ ফিলিপাইনসের উদাহরণ টেনে শামসুজ্জামানের মন্তব্য, ফিলিপিনো ভাষায় মার্কিন ইংরেজির প্রবল প্রভাবের ফলে কীভাবে সেই ভাষাটি তার মর্যাদা হারিয়েছে, তা সকলেই জানেন৷ বাংলার যেন সেই দুর্দশা না হয়৷
ভাষা আন্দোলনের ষাটতম বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশ হাইকোর্টের এই আদেশ অবশ্যই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করছে সমাজের প্রতিটি সচেতন শ্রেণী৷
বাংলা ভাষার দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা উচ্চারণ, সঠিক শব্দ চয়ন না করা এবং বাংলা ভাষার অবক্ষয় রোধে বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি করারও আদেশ দিয়েছে আদালত৷ এসব বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে - সে বিষয়ে ২০ মার্চের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে৷ এই কমিটিতে কে কে থাকবেন, তা নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় আনিসুজ্জামানকে৷ তবে আদালত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কবি নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের নাম প্রস্তাব করেছেন৷
হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আলতাফ হোসেন সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্রগুলি যে বিকৃত বাংলার ব্যবহার করে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশি শব্দ যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে বলে জানানো হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে৷
বস্তুত, গত বছর পাঁচ ছয় ধরে একাধিক বেসরকারি এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ করতে যে বাংলার ব্যবহার করে থাকে, তাতে বাংলা শব্দ দু'একটি থাকলেও ভাষার ব্যকরণগত মাধুর্যের কোথাও কোন চিহ্ন মেলে না৷ তরুণ প্রজন্মের সামনে এই বিকৃত বাংলাই হয়ে উঠছে মাতৃভাষার আদর্শ৷ যাতে বাংলার বৈশিষ্ট্য কোথাও কোন চিহ্ন রাখেনা৷
সে কারণেই বাংলাদেশ হাইকোর্টের এই উদ্যোগ এখন গোটা বিশ্বের বাঙালি এবং বাংলা ভাষাপ্রেমীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ আবেদন রেখেছে৷ আশা থাকুক, আমাদের প্রিয় এই মধুর ভাষা যেন তার গৌরব না হারায় কোনভাবেই৷
ডয়চে ভেলে-ডিডাব্লিউ
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
যেনতেন প্রকারেণ মিশিয়ে দিলেই হল৷ বাংলা নয়, বাংলার সঙ্গে ইংরেজি হিন্দি প্রভৃতি ভাষাকে মিশিয়ে বাংলার অপমান করে যে ভাষারীতি চালু হয়েছে সাম্প্রতিক কালে, তাকে এবার নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট৷ বাংলাদেশের হাইকোর্টের এই উদ্যোগের জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়৷ যে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করতে বাহান্ন-র ভাষা আন্দোলনে বাঙালিরা শহীদ হয়েছেন, হাজার বছর ধরে যে ভাষা ক্রমশ বিস্তৃতি আর প্রসার লাভ করেছে, জয়দেব থেকে বিদ্যাপতি, রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল পর্যন্ত মনীষী সদৃশ কবি, লেখক, গায়ক যে ভাষাকে শতাব্দের পর শতাব্দ সমৃদ্ধ করেছেন, সেই মায়ের ভাষাকে একপ্রকার ধর্ষণ করে চলেছে নব্য প্রজন্মের কুৎসিত ইংরেজিয়ানা৷ বাংলার মধ্যে বিদেশি শব্দ আর বাক্যবন্ধের অবাধ মিশেল ঘটিয়ে তারা যে ভাষা ব্যবহার করে তাকে আর যাই হোক বাংলা বললে বাংলারই অপমান হয়৷ এই প্রতিনিয়ত অপমানের পঙ্কিল পথ রুদ্ধ করতে হাইকোর্ট উদ্যোগ নিলেন এবং আইনি পথে৷ বলা হয়েছে, বেতারে বা টেলিভিশনে যে ন্যক্বারজনক বাংলা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, হাজার বছরের পুরানো এই ভাষার সম্মান রক্ষার্থে অর্থহীন বাংলিশ-এর ব্যবহার চলবে না৷
বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সংবাদসংস্থা এএফপি-র কাছে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, অনেকদিন ধরেই এই দাবি তাঁদের ছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ের কিছু এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তারা যে অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এর ফলে আমাদের অপরূপ মাতৃভাষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে৷ হাইকোর্টের এই আদেশ অত্যন্ত সময়োপোযোগী বলে তাঁর মত৷ তিনি মনে করেন, এর ফলে বাংলা ভাষা তার মর্যাদা ফিরে পাবে৷ ফিলিপাইনসের উদাহরণ টেনে শামসুজ্জামানের মন্তব্য, ফিলিপিনো ভাষায় মার্কিন ইংরেজির প্রবল প্রভাবের ফলে কীভাবে সেই ভাষাটি তার মর্যাদা হারিয়েছে, তা সকলেই জানেন৷ বাংলার যেন সেই দুর্দশা না হয়৷
ভাষা আন্দোলনের ষাটতম বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশ হাইকোর্টের এই আদেশ অবশ্যই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করছে সমাজের প্রতিটি সচেতন শ্রেণী৷
বাংলা ভাষার দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা উচ্চারণ, সঠিক শব্দ চয়ন না করা এবং বাংলা ভাষার অবক্ষয় রোধে বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি করারও আদেশ দিয়েছে আদালত৷ এসব বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে - সে বিষয়ে ২০ মার্চের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে৷ এই কমিটিতে কে কে থাকবেন, তা নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় আনিসুজ্জামানকে৷ তবে আদালত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কবি নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের নাম প্রস্তাব করেছেন৷
হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আলতাফ হোসেন সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্রগুলি যে বিকৃত বাংলার ব্যবহার করে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশি শব্দ যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে বলে জানানো হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে৷
বস্তুত, গত বছর পাঁচ ছয় ধরে একাধিক বেসরকারি এফ এম এবং টেলিভিশন কেন্দ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ করতে যে বাংলার ব্যবহার করে থাকে, তাতে বাংলা শব্দ দু'একটি থাকলেও ভাষার ব্যকরণগত মাধুর্যের কোথাও কোন চিহ্ন মেলে না৷ তরুণ প্রজন্মের সামনে এই বিকৃত বাংলাই হয়ে উঠছে মাতৃভাষার আদর্শ৷ যাতে বাংলার বৈশিষ্ট্য কোথাও কোন চিহ্ন রাখেনা৷
সে কারণেই বাংলাদেশ হাইকোর্টের এই উদ্যোগ এখন গোটা বিশ্বের বাঙালি এবং বাংলা ভাষাপ্রেমীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ আবেদন রেখেছে৷ আশা থাকুক, আমাদের প্রিয় এই মধুর ভাষা যেন তার গৌরব না হারায় কোনভাবেই৷
ডয়চে ভেলে-ডিডাব্লিউ
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
No comments