অদম্য দুই প্রতিবন্ধী- এগিয়ে চলেছে ওরা
একজনের দুই চোখের জ্যোতি নেই। অন্যজনের দুই হাত থাকলেও তা বাঁকা ও শক্তিহীন। এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি) দিচ্ছে অদম্য ওই দুজন। একজন পরীক্ষা দিচ্ছে শ্রুতিলেখকের সহায়তায়। অন্যজন দুই পায়ে কলম ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা হলো ঠাকুরগাঁওয়ের অন্বেষা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কামরুজ্জামান মিঞা (১৮) ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা মাদ্রাসাসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাজমিন আক্তার (১১)। দুজনই শত কষ্ট সত্ত্বেও লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।
কামরুজ্জামান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আরাজী মাটিগাড়া গ্রামের পান-সিগারেটের দোকানি মাহাতাব মিঞার ছেলে।
মাহাতাব জানান, তাঁর ছেলে কামরুজ্জামানের বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। ২০০৪ সালে শহরের অন্বেষা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কামরুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে নেয়। শুরুতে অনিয়মিত থাকলেও গত চার বছর সে নিয়মিত পড়ালেখা করে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওর পড়ালেখার সব খরচ বহন করে।
পরীক্ষা কেমন হলো? গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে হেসে বলে, ‘বেশ ভালো হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।’
কামরুজ্জামানের শ্রুতিলেখক চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া জিল্লুর রহমান বলে, ‘কামরুজ্জামান অনেক সময় প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত বলে ফেলেন। তখন তাঁর কথার সঙ্গে তাল মেলাতে কষ্ট হয়। তবু ভাইয়ের হয়ে পরীক্ষায় লিখে দিতে পেরে ভালো লাগছে।’
মাহাতাব জানান, তাঁর ছেলে কামরুজ্জামানের বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। ২০০৪ সালে শহরের অন্বেষা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কামরুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে নেয়। শুরুতে অনিয়মিত থাকলেও গত চার বছর সে নিয়মিত পড়ালেখা করে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওর পড়ালেখার সব খরচ বহন করে।
পরীক্ষা কেমন হলো? গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে হেসে বলে, ‘বেশ ভালো হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।’
কামরুজ্জামানের শ্রুতিলেখক চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া জিল্লুর রহমান বলে, ‘কামরুজ্জামান অনেক সময় প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত বলে ফেলেন। তখন তাঁর কথার সঙ্গে তাল মেলাতে কষ্ট হয়। তবু ভাইয়ের হয়ে পরীক্ষায় লিখে দিতে পেরে ভালো লাগছে।’
অন্বেষা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালক মনিরা আহমেদ বলেন, কামরুজ্জামান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও সে খুব সহজে পড়া আয়ত্ত করতে পারে। সে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা পাস করে উচ্চতর ক্লাসে ভর্তি হতে চায়।
আরেক অদম্য নাজমিন আক্তার উলিপুরের বজরা গ্রামের দিনমজুর নুরুন্নবী মিয়ার মেয়ে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।
নুরুন্নবী বলেন, ‘জন্ম থেকে মেয়ের দুই হাত অচল। কিন্তু ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে বাধা দিইনি। অভাবের সংসারে বোঝা না হয়ে লেখাপড়া করে যদি স্বাবলম্বী হতে পারে তবেই পরিশ্রম সার্থক হবে।’
তিনি জানান, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নাজমিন প্রতিবন্ধী ভাতা ও স্কুল থেকে উপবৃত্তির টাকা পায়। ওই টাকা দিয়ে ওর লেখাপড়ার খরচ চলছে।
বজরা মাদ্রাসাসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার সেলিনা পারভীন জানান, নাজমিন মেধাবী শিক্ষার্থী। সাহায্য-সহযোগিতা পেলে সে আরও ভালো করবে।
গতকাল বেলা ১১টায় বজরা এল কে আমিন স্কুল অ্যান্ড কলেজকেন্দ্রে গিয়ে নাজমিন আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, ‘শুরুতে পা দিয়ে লিখতে কষ্ট হতো। কিন্তু নিরাশ হইনি। অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যেদিন লিখতে পেরেছি সেদিন ছিল সবচেয়ে আনন্দের।’
No comments