খোলস by রমেশ গুনেসেকেরা
আমাদের বাড়িতে আজ রাতে আনুরা পেরেরা আসছেন। আম্মা গতকাল আমাকে জানিয়েছেন। তাঁর আসার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত, সেটিও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আমাকে। আমি নিজে থেকেই বিজয়কে কথাগুলো জানাতে এসেছি। বিজয় সব শুনে বলল, ‘তো?’ বিজয়কে সবকিছু খুলে বলতে হয়। আনুরা আমাকে দেখতে আসছেন, বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই এখানে আসবেন তিনি। ভদ্রলোক অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী। সব শুনে বিজয় বরাবরের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে হাসল এবং কিছুই বলল না। এটাই তার স্বভাব। আমি নিজ থেকেই তার কাছে জানতে চাইলাম, ‘তুমি জানো, আনুরা পেরেরা কে?’ ‘না’, সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। তারপর হেসে জানতে চাইল, ‘ভদ্রলোক তাহলে লঙ্কার মেয়ে খুঁজছেন বিয়ের জন্য?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ!’ আনুরার লাখ ডলারের চাকরি, সিডনিতে বাড়ি, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব আছে।’ ‘তোমার কী মত?’ প্রশ্নটা আমাকে জিজ্ঞাসা করেই হাসল বিজয়। ‘বিদেশি চাকরিওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করছ, আর সেটাই আমাকে বলতে এসেছ?’
বিজয়কে আমি যা বলতে এসেছি, সেটি এমন কোনো কথা নয়। আমি অন্য কিছু বলতে চেয়েছিলাম তাকে, কিন্তু পারিনি। ওর থেকে কিছু শুনতেও চেয়েছিলাম। বিজয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল নিউ ডিস্কোতে, আমার বান্ধবী লক্ষ্মীর এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। সেই জন্মদিনে আমরা প্রায় বিশজন গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীই নিমন্ত্রণ করেছিল আমাকে। সেখানে যারা এসেছিল, তাদের অধিকাংশকে আমি চিনতামও না। কিন্তু নতুন চালু হওয়া ডিস্কোতে যাওয়ার জন্য আমরা এতটাই আগ্রহী ছিলাম যে অপরিচিত এক দলের সঙ্গে যেতেও কোনো দ্বিধা ছিল না। এই নিউ ডিস্কো চালু হওয়ার পর সবাই অনেক গল্প করেছে। তবে সেখানে যাওয়ার পর আশাভঙ্গ হয়নি আমার। ডিস্কোর ড্যান্স ফ্লোরটি খুবই চমৎকার—এক কথায় অনবদ্য। গোল সেই এক টুকরো জমিনের নিচে ফ্ল্যাশলাইট লাগানো, ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে উঠছিল সেটি। পুরো ডিস্কোর সাজসজ্জাও ছিল মুগ্ধ করার মতো। এমন এক মনোরম পরিবেশেই আমি প্রথম বিজয়কে দেখি। আমার কাছে এসে বলল, ‘এক ঝলক নাচ হয়ে যাক?’ চিৎকার, শোরগোল আর সংগীতের আবহের মধ্যে আমি তার গলা একেবারেই শুনতে পাইনি। তার মুখ অন্ধকারে ছিল। কিন্তু ঘুরে চলা ফ্ল্যাশলাইটের আলো যখন তার মুখে পড়ল, দেখলাম, আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে, দৃষ্টি স্থির। সেই চাহনিতে রয়েছে আমার সঙ্গে নাচার প্রবল আগ্রহ—আমার সঙ্গেই সে নাচতে চায়। আমরা সেদিন সারা রাত নেচেছিলাম। বিজয় আমাকে রাম আর কোক কিনে দিয়েছিল। একসঙ্গে সিগারেটও ফুঁকেছি আমরা। বাড়ি ফেরার আগে জিজ্ঞাসা করল, ‘আবার কবে দেখা হবে?’ এক দিন পরেই আমাদের দেখা হলো।
সে সমুদ্রসৈকতের কিনারে ‘বিচ হাট’ নামের খাবারের দোকানের বাবুর্চি। আমি নিজেই তাকে আবিষ্কার করলাম। আমার চেয়ে বয়সে বড়। গড়নে বেশ লম্বা আর মুখে সারাক্ষণ হাসি। মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল। অনেক শুকনো। নিজে জীবনেও খায় না। তার রান্না করা খাবার অন্যকে খেতে দেখেই সে সুখী। ক্রেতা, বন্ধুরা নিয়মিত তার রান্না খেয়ে মোটা হচ্ছে, আর সেটাই দেখে চলছে সে। তার মতে, সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কড়াইভর্তি স্কুইড ভাজার চেয়ে আনন্দ নাকি আর কিছুতেই নেই! বিজয় চৌকো মুখের পুরুষ। মুখ দেখলেই মনে হয়, হাড়ের বাক্সের ওপর কেউ চামড়া লাগিয়ে দিয়েছে এবং ওর পুরুষ্ট ঠোঁট দুটো ৩২ দাঁত আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। যেন সব সময় হাসিতে ফেটে পড়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সে যখন হেসে ওঠে, সমুদ্রও ফেনিয়ে ওঠে তখন—সমুদ্র যেন তারই জন্য। আর এ জায়গা ছাড়া সেও বেমানান। আজ আমি যখন তার কাছে এসেছি, তখনো সেই দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বলল, ‘হ্যালো’। বসতে বলল পাশে। হাতের কাজ শেষ করতে নাকি বেশিক্ষণ লাগবে না। তার কোলের ওপর রাখা গামলাভর্তি চিংড়ি। পায়ের কাছে থাকা একটা পত্রিকার ওপর চিংড়ির ছাড়ানো খোসা রাখছে সে। প্রতিটি চিংড়ির খোসা ছাড়ানোর পর ভেতরের নীল শিরা বের করে আনছে দক্ষ হাতে। একটা শিরা হাতে নিয়ে আমায় বলল, ‘দেখ, সমুদ্রের বিষ।’ আজ আমি আনুরা পেরেরা সম্পর্কে কিছু বলতে এখানে আসিনি। কিন্তু মনে পড়ছে আম্মার সব সময়ের উপদেশ, সাবধানবাণী। আম্মা বলেন, সব সময় সেরাটা বেছে নেবে। আর আমি নিজেই জানি, আনুরা আসবেন বিশাল এক মিটসুবিশি গাড়িতে চড়ে, চোখে থাকবে দামি সানগ্লাস,
স্টেরিওতে বাজতে থাকবে মোহনীয় কোনো গান। এসব আমি বিজয়কে বলতে চেয়েছি, আবার হয়তো চাইওনি। আসলে আমার জন্য বিজয়ের অনুভূতি জানতেই এসব বলা। চিংড়ির খোসা ছাড়ানো হয়ে গেলে হাত ধুয়ে কফি আনল বিজয়। জানতে চাইলাম, ‘আমরা কী করব, তুমি সত্যি কী চাও?’ ‘কী নিয়ে কী চাইব?’ বিজয়ের পাল্টা প্রশ্ন। ‘আমাদের সম্পর্কে কী ভাবছ? আমরা কী করব এখন?’ সে বলল, ‘ম্যাজেস্টিকে একটা ভালো আমেরিকান ফিল্ম এসেছে, আমরা সেটি দেখতে যাব।’ বিজয়ের জন্য এ রকম বলা আর ভাবা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পৃথিবীতে যেন কোথাও কোনো সমস্যা নেই। এখানকার আর পাঁচটা পুরুষের মতো সে নয়—যা মনে আসে, তা-ই করে। কিন্তু আমি মন থেকে আনুরার চিন্তা দূর করতে পারছি না। বিজয় ঝুঁকে এসে আমার হাত ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী জানতে চাও তুমি?’ বিজয়ের সেই নেশা ধরানো স্পর্শ। ওর নখগুলো যেন হালকা গোলাপি রঙের ঝিনুক। তার ওপর অর্ধেক বাঁকা চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। যখন সে তার আঙুল দিয়ে আমাকে স্পর্শ করে, আমার দেহে অদ্ভুত শিহরণ জাগে। চিরজীবনের জন্য এই স্পর্শের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিতে ইচ্ছা হয়। আমরা সমুদ্র দেখতে দেখতে কফি পান করছি। আমি তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে বললাম, যাতে আমার সমস্যার সমাধান হয়। সিনেমায় গেলে নিশ্চয় আনুরার সমস্যার সমাধান হবে না। ‘কিন্তু তুমি সিনেমা ভালোবাসো,’ সে বলে উঠল। অবশ্য বিজয়ের কাছ থেকে এর বেশি আশাও করা যায় না। গত কয়েক মাসে আমূল বদলে গেছে আমার জীবন—এত দিন যা ঘটেনি, তা-ই ঘটে চলেছে একটার পর একটা। হঠাৎ করে বিজয় এল আমার জীবনে।
এখন আনুরা পেরেরা। আম্মা যখন আনুরার কথা বলছিলেন, চোখের সামনে এক নতুন পৃথিবী দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। আমার মনে হয় না, বিজয় সেই পৃথিবীর এক কানাকড়িও কল্পনা করতে পারবে। সে পারে শুধু হাসতে। আজ সকালে আম্মা একটা নতুন শাড়ি কেনার কথা বলছিলেন, তখনই টনিও সুজে আসা নতুন ডিজাইনের জুতাটার কথা মনে পড়ল। দারুণ সেই জুতাগুলো। আমার কল্পনা উড়ে চলছে...উড়তে উড়তে একেবারে সিঙ্গাপুর! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু সারা জীবন এমন সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্নই তো দেখে এসেছি আমি। কেমন পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। তবে এ কথাও ঠিক, বিজয় পাশে থাকলে এসব ভুলে যাই আমি। বিজয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, ‘কী হয়েছে? কী যায়-আসে?’ একটা সিগারেট ধরিয়ে আনমনে চেয়ারে নখ দিয়ে আঁচড় কাটছে। মুখটা মাছের খাবি খাওয়ার মতো খোলা। মাঝেমধ্যে ওর আচরণ ক্যাবলার মতো। এত রাগ লাগে তখন! কিন্তু এটাই স্বাভাবিক—সে এমনই থাকবে। ‘আমরা নিশ্চয় এমন করেই দিন কাটাব না? তুমি নিশ্চয় সারা জীবন বিচ হাটের বাবুর্চির কাজ করবে না? সমুদ্রের ধারে এই দোকানও নিশ্চয় আজীবনের নয়? এই বাঁশ, নারকেল একদিন নষ্ট হয়ে যাবে। জানালার কপাটগুলো তো এখনই খুলে আসছে।’ বেশ জোর দিয়ে বললাম আমি। দরজার দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল ওপাশের বিশাল সবুজাভ সমুদ্র। বালুতটে আছড়ে পড়ছে নীল জলরাশি। এত কোমলতার ভেতরে কঠোর হয়েই কথাগুলো বললাম, ‘তুমি নিশ্চয় সারা জীবন বিচে রান্না করবে না; নাকি তুমি এমনটাই চাও?’ হড়বড় করে বললাম কথাগুলো। আমার এ কথা তাকে আহত করার জন্য নয়, শুধু চাইছি সে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দিক। সে শুধু আমার দিকে তাকাল। চাহনি এত শান্ত,
দেখে মনে হয় আমরা সমুদ্রযাত্রা করেছি। এর মধ্যে আমি তো ভেসেই যাচ্ছি, তড়িতাহতের মতো। দোকানের সামনে ভিড় বাড়ছে। রুটি ও বিয়ারের খদ্দেররা দোকানে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আমার এখন যাওয়া উচিত। চলে আসার সময় ওকে সন্ধ্যার আগেই আমাকে ফোন দিতে বললাম। বললাম যে বিষয়টা জরুরি। সে যেন মনে রাখে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল বিজয়। বাড়ি ফিরে সবাইকে খুব ব্যস্ত দেখলাম। নিজের ঘরে চলে এলাম আমি। একা থাকতে ইচ্ছা করছে। এই ব্যস্ততায় আমার যোগ না দিলেও চলে। পাঁচটা পর্যন্ত ঘরে বসে রইলাম, একা একা। বের হয়ে আমি তো অবাক! পুরো বাড়ি পরিপাটি করে সাজানো। ঝকঝক করছে বসার ঘরের মেঝে। টেলিফোনের পাশে সবুজ ফুলদানিতে ফুল রাখা হয়েছে। শামুক, ঝিনুকে সাজানো ঘর। আম্মা স্যান্ডউইচ, প্যাটিস বানিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে আম্মার স্পেশাল লাল মরিচ দিয়ে ভাজা কাজু বাদাম। সেগুলোকে রাখা হয়েছে বিশেষ রুপালি পাত্রে পরিবেশনের জন্য। নিজের বাড়িকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। আম্মাকে দেখে মনে হচ্ছে হাত-পা কাঁপছে তাঁর। সবকিছু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতে তিনি দৌড়ে বেড়াচ্ছেন এক ঘর থেকে আরেক ঘরে। উত্তেজনায় তাঁর বুক কাঁপছে। চোখেমুখে উদ্বেগের ছায়া স্পষ্ট। যেন কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। আমি নিশ্চিত, এর মধ্যে আম্মা তাঁর জ্যোতিষীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি আমার বিয়ের ব্যাপারে আর কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নন। জ্যোতিষী সম্ভবত আজকের দিনকেই মাসের পয়মন্ত দিন বলেছেন।
তাই এদিনেই সব আয়োজন করেছেন আম্মা। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে, এত আয়োজনের বাইরেও আমার বেছে নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না। কিন্তু বেছে নেওয়াটাও যে আমার অপছন্দের—আমি বেছে নিতে চাই না। সবাই কেমন উন্মাদের মতো খুশি। আমি নিজেও বুঝতে চেষ্টা করছি, অস্ট্রেলিয়া বিষয়টা কী? সবাই সেখানে কেন যেতে চায়? আমার তো এখানে কোনো সমস্যা নেই। আমি এখানকার সমুদ্র ভালোবাসি। সড়ক, আমার বাড়ির দেয়ালের বোগেনভ্যালিয়া, রেললাইন, ডিস্কো, তিন চাকার অটো—সবই ভালোবাসি আমি। নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, সিডনি অপেরা হাউসের পাশের বাংলোর কী এমন মহত্ত? বিজয় হয়তো বলতে পারবে। সবকিছু যদি বিজয়ের সঙ্গেই হতো! আম্মার মুখটা মনে পড়তেই চিমসে গেলাম। আম্মা মরে যাবেন যদি ওর সম্পর্কে জানতে পারেন—সৈকতের রেস্তোরাঁর বাবুর্চি শুনে নির্ঘাৎ আমার দিকে জুতা ছুড়ে মারবেন। তিনি খুব শান্ত মন নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বলতে চাইছেন, ‘শুভসন্ধ্যা মিস্টার পেরেরা, আপনাদের আগমনে আমি খুব খুশি। আসুন আর আমার মেয়েকে নিয়ে যান। আপনার মেধা আর ব্যাংকে থাকা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পালটে দিন তার জগৎ। তাকে গাড়ি, বাড়ি, দামি জামা-জুতা কিনে দিন। এত বেশি পরিমাণে কিনে দিন, যেন প্রতিটি পার্টি শেষে সে সেগুলো ছুড়ে ফেলতে পারে। আশা করি আপনার সব ভালো হবে। আমার মেয়ে আপনার জন্য বিশাল অর্জন হবে, আপনার মুকুটের মধ্যমণি হবে। দয়া করে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যান,
মিস্টার পেরেরা। তবে অবশ্যই তার মাকে ভুলবেন না।’ হ্যাঁ, এমনটাই তার বলার কথা। অথচ আমি রয়েছি বিজয়ের ফোনের অপেক্ষায়। আসলে আমি নিজেই জানি না, তার মুখ থেকে কী শুনতে চাই শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমি কিছু খুঁজছি এবং খুঁজে পাব। মাত্র কয়েকটা শব্দ শুনতে চাই তার কাছে। অবশেষে টেলিফোন বাজল। আম্মা গোসলখানায়, যথারীতি ফোন ধরলাম আমি। আমার খুব নার্ভাস লাগছে। মনে হচ্ছে কথা বলতে পারব না। বিজয় আমার গলা শুনেই বলল, ‘আজ রাতে কি বাইরে খেতে আসতে পারবে? সেই বড় চিংড়িগুলো দিয়ে একটা চমৎকার খাবার বানিয়েছি।’ টেলিফোনের ওপার থেকে সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি—মুখভরা হাসি নিয়ে সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা আঙুলগুলো দিয়ে খোলা বুকে হাত বোলাতে বোলাতে কথা বলছে সে। বাতিওয়ালা গাছের নিচেই সে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, ‘আমি এখন কথা বলতে পারব না। কাপড় ইস্ত্রি করছি। ইস্ত্রি গরম। আমি আমার পান্না-সবুজ শাড়ি ইস্ত্রি করছি। এটা আজই আম্মা আমার জন্য কিনে এনেছেন। এখন কথা বলতে পারব না। ফোন রাখতে হবে।’ এসব কথা বলে রেখে দিলাম ফোন। সে আর ফোন করল না। সে জানে, তার নম্বর আমার মুখস্থ: মাউন্ট লাভানিয়া ৯২৬৯৭৯, ৯২৬৯৭৯।
No comments