একটি মোবাইলে যাবতীয় পরিষেবা ও সিম সিদ্ধান্ত- স্বদেশ রায়

৪ মার্চ ডিজিটাল মেলার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, একটি মাত্র মোবাইলের মাধ্যমে সব ধরনের পরিষেবা পাবে। সব ধরনের বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে উৎপাদন বৃদ্ধি অবধি সবই সম্ভব হবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
শেখ হাসিনার ছেলে জয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলেই শুধু নয়, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা এবং প্রযুক্তিকে মানুষের দোরগোড়ায় না দিতে পারলে দেশ উন্নত হয় না এ বিশ্বাস শেখ হাসিনার নিজেরও। তিনি আগেও এর প্রমাণ রেখেছেন। কারণ আজ যে সেলফোন (মোবাইল ফোন) বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতির অঙ্গ এই মোবাইল ফোনকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে এ মোবাইল ফোন ছিল একটি বিশেষ বৃত্তে আবদ্ধ। যা মাত্র গুটি কয়েক লোকের ব্যবহারের জন্য। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কোন ভূমিকা ছিল না। আজ সরকারের মোট রাজস্বের শতকরা ৮ ভাগ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো দিচ্ছে, দেশের প্রবৃদ্ধির প্রায় ছয় ভাগ আসছে মোবাইল থেকে এর সূচনা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। ১৯৯৬ সালে ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরে তিনি যেদিন, গণ্ড গ্রামের এক মহিলার সঙ্গে কথা বলার ভিতর দিয়ে গ্রামীণফোনের উদ্বোধন করেন ওই দিনটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অন্যতম দিন। কারণ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসাক্ষর কোন মহিলার কাছে এর আগে কোন দিন এত উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছয়নি। বলা যেতে পারে সেদিন থেকে বাংলাদেশে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার একটি রথ চলতে শুরু করে। প্রযুক্তির হাত যে ঈশ্বরের হাতের মতো ক্ষমতাবান। সে যে বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এটা কিন্তু সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে গ্রামজীবনে।
আমাদের সরকারী পরিসংখ্যান খুবই দুর্বল। নেই বললেই চলে। নইলে এতদিনে সঠিক পরিসংখ্যান উঠে এলে আমরা বুঝতে পারতাম ওই দিন থেকে আজ অবধি এই একটি প্রযুক্তি কী বিশাল পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশের সমাজে ও অর্থনীতিতে। ১৫ তারিখ বিবিসির বাংলা বিভাগ মোবাইল ফোন বাংলাদেশের আখচাষীদের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে তার ওপর একটি রিপোর্ট প্রচার করে। ওই রিপোর্টের কয়েকটি অংশ দেখলেই বুঝতে পারা যায় কী আমূল বদলে দিতে পেরেছে প্রযুক্তি। এবং প্রযুক্তি যে বহুমুখীন পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, তারও প্রমাণ মেলে। চিনিকলে আখ সরবরাহকারীদের জন্যে ২০০ বছর ধরে চলছে পুর্জি প্রথা। অর্থাৎ একটি কাগজে লিখে মিল থেকে দেয়া হতো। কে কবে, কখন মিলে কতটুকু আখ সরবরাহ করবে। এই কাগজটিকে বলা হতো পুর্জি। এ নিয়ে গত দু'শ' বছরই আখচাষীদের নানান ভোগানত্মি গেছে। দেখা যেত অনেক সময় চাষীরা তাদের পুর্জি হারিয়ে ফেলত। তার ফলে মিলে আখ জমা দিতে পারত না। মিল গেটে তাদের আখ শুকাত। এ ছাড়া অনেক সময় অসাধু কর্মচারীরা একজনের পুর্জি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিত। ফলে অনেক আখচাষী তাদের ক্ষেতের আখ কাটার পরেও বিক্রি করতে পারত না। দিনের পর দিন আখ ফেলে রাখতে হতো। শুকিয়ে যেত সে আখ। দাম কম পেত। এই পুর্জির বদলে ঝিনাইদহ ও ফরিদপুরের চিনি কলগুলো চালু করেছে ডিজিটাল পুর্জি। বিবিসি জানাচ্ছে "চিনিকলের সার্ভার রুম থেকে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় কোনদিন কাকে কী পরিমাণ আখ বিক্রির জন্য চিনিকলে নিয়ে আসতে হবে। মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে গরুর গাড়ি বা ট্রাক্টর ভর্তি করে আখ নিয়ে আসা কয়েকজন কৃষকের বক্তব্য হলো, মোবাইল পুর্জি চালু হবার পর চাষীরা এখন পরিকল্পনা করে আখ কাটছেন, এবং তা নির্দিষ্ট দিনেই বিক্রি করতে পারছেন। ফলে লোকসানের সম্ভাবনা আর থাকছে না। আখচাষী আয়নাল হোসেন জানান, পুর্জির মেসেজটি ইংরেজীতে এলেও তার অর্থ বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না, দরকার পড়লে তিনি তাঁর ছেলে বা অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন।
পুর্জি নিয়ে আগে যে দুর্নীতি হতো তা ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে।" এ ছাড়া বিবিসি ইউএনডিপির সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর এএম মোর্শেদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মোবাইলে এসএমএস চালু করার ফলে চিনিকলগুলোর মৌসুমের মাঝপথে আখের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে না, এগুলো আরও দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কৃষকের আয় ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে এবং তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত সেই একটি মোবাইলের মাধ্যমেই কিন্তু বদলে গিয়েছে ঝিনাইদহ এবং ফরিদপুরের চিনিকলগুলোর চিত্র। ঠিক এমনিভাবে বদলে গেছে মোবাইলের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির নানান দিক। গভীর সমুদ্রে যে মাছ ধরে তারও এখন মাছের বিপণন বদলে গেছে। এ ছাড়া গ্রামে যেখানে এখন পায়ে চলা পথ। প্রতিটি খবর যেখানে হেঁটে পৌঁছতে হতো অর্থনীতির প্রয়োজনে। সেখানে দিনে লাখ লাখ শ্রমঘণ্টা বেঁচে যাচ্ছে এই মোবাইলের কারণে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, সব ধরনের বিল শোধ, ডাক্তারী সেবা থেকে সব কিছু পৌঁছে যাবে একটি মোবাইলের মাধ্যমে। গ্রামে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে না হয়ত, কিন্তু কৃষি অর্থনীতির এক বিরাট সেলবাজার গড়ে উঠেছে মোবাইলের মাধ্যমে। সংবাদপত্রের কাজে গিয়ে দেখেছি, গ্রামের মহিলা তার একটি মুরগির দেয়া সঞ্চিত ডিমও বিক্রি করছেন মোবাইলের মাধ্যমে। আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে সঠিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতির কোন প্রতিষ্ঠান সরকারী বা বেসরকারীভাবে এখনও গড়ে ওঠেনি তাই হয়ত এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না অর্থনীতিতে কত বড় পরিবর্তন এনেছে এই সেলফোন প্রযুক্তি এবং আরও কত বেশি সম্ভাবনার দ্বার এখনও এর সামনে অবস্থান করছে।
যুগে যুগে এমনিভাবে সব প্রযুক্তিই কিন্তু মানুষের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। সহায়তা করেছে মানুষের মতায়নের। বিশেষ করে পশ্চাৎপদদের মতায়নের। তবে এর ভিতরও চাকা তৈরি যেমন মানুষের অর্থনীতি পরিবর্তনে একটি মাইলস্টোন, একটি মাইলস্টোন যেমন স্টিম ইঞ্জিন, তেমনি এই তথ্যপ্রযুক্তি। আমরা ভৌগোলিক কারণে, নদীনালার দেশ হওয়ার ফলে চাকাকে খুব বেশি কাজে লাগাতে পারেনি। পরাধীনতার কারণে স্টিম ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। আমাদের হাতে এখন শেষ সুযোগের মতোই এসেছে তথ্যপ্রযু্ক্তি। সেখানেও যে আমরা ট্রেনের সমযাত্রী তা নয়। অনেকেই যখন ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণীর যাত্রী হিসেবে অনেক দূর চলে গেছে সে সময়ে আমরা কেবল প্লাটফর্মের দিকে রওনা হয়েছি। প্লাটফর্মেই পৌঁছতে পারেনি। প্লাটফর্ম থেকেও আমরা এখনও অনেক দূরে। দেশের নব্বই ভাগ এরিয়া এখন মোবাইল ফোনের আওতায় এসেছে ঠিকই তারপরেও কিন্তু এখনও দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী এই মোবাইল সেবা ও ব্যবহারের বাইরে। অথচ এটাই সত্য যে, যত বেশিকে এর আওতায় আনা যাবে ততই এর সুফল দেশের সব কিছুতে আসবে। অর্থনীতি থেকে নারী মতায়ন সবখানেই ভূমিকা রাখবে এই তথ্যপ্রযুক্তি। তাই এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পথে যেন কোন বাধা না পড়ে সেটাই হতে হবে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ লক্ষ্য। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, আমাদের মানসিকতার ভিতর একটা পশ্চাৎপদতা আছে। ধ্যানধারণার ভিতর একটি সনাতনী পদ্ধতি সব সময়ই কাজ করে। এর কারণ আমরা আধুনিকতার সঙ্গে কম যুক্ত। আমরা মুক্তভাবে কোন কিছু সহজে ভাবি না। এবং আমরা সব সময়ই মুদ্রার এক পিঠ দেখি অপর পিঠ দেখি না। আমাদের এই চরিত্রের কারণে রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাঙালী বলেছিলেন। মানুষ বলেননি। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তাঁর বাঙালী মানুষ হয়েছে। কিন্তু তিনি সত্যিকার অর্থে মানুষ করার সময় পাননি। কিন্তু আজ যখন আমাদের মানুষ হবার একটি সুযোগ এসেছে, সম্ভাবনার নতুন দ্বার সামনে এসেছে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক জগতে আমরা প্রবেশ করতে চাচ্ছি। এ সময়ে অবশ্যই প্রতিটি পদপে সাবধানে ফেলা উচিত। কোন সনাতনী চিন্তা যেন কোন মতেই আঁকড়ে না ধরে। যেমন আজ যদি কোন সনাতনী চিন্তা আমাদের তথ্যপ্রযু্ক্তি বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেটা নিঃসন্দেহে জাতির ভবিষ্যতের জন্য অনেক ক্ষতিকর। যেমন সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, ১৮ বছরের আগে কেউ স্বাধীনভাবে মোবাইল সিম কিনতে পারবে না। তার জন্য একজন অভিভাবকের প্রয়োজন হবে। এ চিন্তাকে সনাতনী চিন্তা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। কারণ বর্তমানের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চৌদ্দ পনেরো ষোলো বছরের তরুণ-তরুণী অনেক কিছু। তারা শুধু সচেতন নয়, অনেক যোগ্য। বরং যেখানে আমাদের বিবেচনা করার সময় এসেছে যে, আমরা ভোটার হবার বয়স ষোলো বা পনেরোতে নামিয়ে আনব কিনা, সেখানে যদি এদের হাত ধরে পথে চালানোর কাজে নামি সেটা মোটেই আধুনিক চিন্তা নয়। তবে এটা ঠিক, এই চিন্তা এসেছে অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করে তাদের চিন্তা-চেতনা থেকে। তারা দেখতে পায় যে উঠতি বয়সের একটি শ্রেণী বেশি বখে যায়। তারা নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের চিন্তাচেতনা পড়ে আছে অনেক পিছনে। তারা ভেবে দেখছে না, এরা সমাজের কতটুকু অংশ মাত্র। দশমিক সামান্য অংশ হবে এরা। তাই এদের দিক চিন্তা করে বৃহত্তর গোষ্ঠীকে বদ্ধ খাঁচায় রাখা যায় না। সোজা কথায় এটা থানার দারোগার চিন্তা। এ সিদ্ধান্ত অনেকটা পায়ে ধুলো লাগা বন্ধ করতে পৃথিবী চামড়া দিয়ে মোড়ানোর মত। এ চিন্তা কোন মতেই একজন আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীর নয়। এ মুহূর্তে যারা সারা পৃথিবীর তরুণ সমাজের মন-মানসিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছে তারা কেউ বলবে না যে, বর্তমান যুগের কোন তরুণ-তরুণীকে হাত ধরে পথে চালাতে হবে! তাই সমপ্রতি মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনে যে বিধি হয়েছে আঠারো বছরের আগে কেউ নিজে সিম কিনতে পারবে না এটা আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং দেশের পরিচালকদের খেয়াল রাখতে হবে কত সহজে, কত কম বয়সে তারা প্রযুক্তির সহযাত্রী হতে পারে। যত কম বয়স থেকে তাদের প্রযুক্তির সহযাত্রী করতে পারবে ততই জাতি দ্রুত দ জাতি বা দক্ষ জনশক্তি পাবে। কিছু বখে যাওয়া ছেলেমেয়ে যদি এই প্রযুক্তিকে কোন খারাপ কাজে ব্যবহার করে সে কাজ ঠেকানোর দায়িত্ব দেশের আইনশৃঙ্খলা বিভাগের। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না বলেই এত সমস্যা। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না বলেই আজ মাথাব্যথা বলে মাথা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত আসেনা। মোবাইলে সন্ত্রাস হয় বলেই আজ মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশনে কড়াকড়ি। কিন্তু এর আগে প্রয়োজন তো পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো। বাসত্মবে পুলিশ যে এক্ষেত্রে আদৌ তৎপর নয় তার হাজারটি উদাহরণ আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশটি পুলিশী রাষ্ট্র ছিল সে সময়ও তারা এক্ষেত্রে তৎপর ছিল না। তারা যে তৎপর ছিল না তার সাক্ষী আমিও। সে সময়ে টেলিফোনের হুমকির যাতনায় এক পর্যায়ে লেখক, গবেষক ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের পরামর্শে রমনা থানায় হুমকি দেয়া টেলিফোন নম্বরগুলো দিয়ে একটি ডায়েরি করি। না তা নিয়ে পুলিশকে কোনদিন নড়তে দেখিনি। বর্তমান আইজি জনাব মুনতাসীর মামুনের ছাত্র। তিনি নিজে আমার হয়ে তাঁকে ফোন করেন। কোন ফল পাননি। এমনকি আমি একদিন ফোন করে সঠিক আচরণটিও পাইনি।
তাই বর্তমান সরকারকে বিষয়টির মূলে দেখতে হবে। বর্তমানে দেশে যে মোবাইল সন্ত্রাস চলে এটা সম্পূর্ণরূপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। এখানে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ত্রুটি নেই। ত্রুটি নেই মোবাইল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতির। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ অবস্থায় রেখে মোবাইল রেজিস্ট্রেশনে কড়াকড়ি করলে দেশ তথ্যপ্রযু্ক্তি থেকে পিছে পড়ে যাবে কিন্তু আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে না। যেমন বর্তমান রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে বলা হয়েছে, এসএসসি পাস ছাড়া কেউ সিম বিক্রি করতে পারবে না। যে দেশে শুধু সারই চল্লিশ ভাগ লোক। সেখানে কত ভাগ এসএসসি পাস? এই সার্টিফিকেটের বাঁধনে বেঁধে মূলত দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশকে বন্ধ করা হবে। বরং সঠিক কাজ হবে যাতে ব্যাপকভাবে এই প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। মাত্র কয়েকটি কোম্পানির ভিতর যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। আরো অনেক কোম্পানি এই প্রযুক্তির ব্যবসায় আসুক। অন্যদিকে শুধু ঝিনাইদহ বা ফরিদপুরের আখচাষী নয়, চাষী থেকে ছাত্র সবাই এর আওতায় আসুক। আমরা যেন অন্ধ চোখে শুধু না দেখি ষোলো বছরের একটি ছেলে এই মোবাইল ফোন নিয়ে সন্ত্রাসী কাজে নেমেছে। আমরা যেন এটাও দেখতে পাই ষোলো বছরের শত শত ছেলেমেয়ে এই মোবাইল ফোনে পড়া জেনে নিচ্ছে। আমরা যেন দেখতে পাই রাতদুপুরে কোন মা তার শিশুর অসুখের ওষুধটি ডাক্তারের কাছ থেকে ফোন করে জেনে নিচ্ছে। আমরা যেন দেখতে পাই পদ্মার গভীর বুক থেকে রুপালি ইলিশ শিকারি নৌঘাটে জানিয়ে দিচ্ছে কখন সে পৌঁছবে। যাতে নষ্ট না হয় তার রূপালি ইলিশ। যুগে যুগ প্রযুক্তি শেষ অবধি মানুষের কল্যাণই করেছে। যে প্রযুক্তি দিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে সেই একই প্রযুক্তি এখন পরমাণু বিদ্যুত তৈরি করে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সনাতনী চোখে দেখে প্রযুক্তির বিস্তার রোধ করা কখনই কোন সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বার্থে এই তথ্যপ্রযুক্তি যাতে বাধাহীন পথে সব মানুষের কাছে পৌঁছয় সে ব্যবস্থাই করতে হবে। বিষয়টি রাজনৈতিক সরকারকে রাজনৈতিক চোখ দিয়ে দেখতে হবে। পুলিশ, রাব বা মিলিটারির চোখ দিয়ে দেখলে ভুল হবে। ফোন সন্ত্রাস যাদের বন্ধ করার দায়িত্ব তাদের আরও সক্রিয় হতে বলা হোক। কিন্তু কখনই প্রযুক্তির পথে যেন দেয়াল তোলা না হয়।
swadeshroy@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.