জাতীয় জাদুঘরে মুনতাসীর মামুনের ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’ গ্রন্থের প্রকাশনা- সংস্কৃতি সংবাদ
বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের অনন্য এক
অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। তবে বাঙালীর এ মহৎ অর্জনের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে নানা
বিকৃতির ঘটনাও ঘটেছে। রাষ্ট্রের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে বিভ্রান্ত হচ্ছে নতুন
প্রজন্ম।
আর এ ইতিহাস বিকৃতি থেকে রেহাই পেতে প্রকাশিত
হলো ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’ দ্বাদশ খ-। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত
বইটিতে যেমন আছে একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের বীরত্বের কথা, তেমনি আছে
বিশ্বাসঘাতক পাকবাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর অত্যাচারের
অপতৎপরতার তথ্য। যুক্ত হয়েছে গণহত্যার বিবরণ। সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ২০
হাজার ৩৯১টি ভুক্তি সংবলিত বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮ হাজার ৩৪। ২০০৫ সালে
প্রথম পাঁচ খ-ে প্রকাশিত হয় গ্রন্থটি। আর শনিবার প্রকাশিত হলো পূর্ণাঙ্গ
বারো খ-ের বইটি।
শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম। এ ছাড়াও বইটি নিয়ে কথা বলেন লেখক মুনতাসীর মামুন ও প্রকাশক ফরিদ আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একাত্তর নয় মূলত ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় বাঙালীর স্বাধীকারের যুদ্ধ। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এমন কাজ আর হয়নি। বইটিতে একাত্তরের মার্চের আগের ঘটনা থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত নানা তথ্য যুক্ত হয়েছে। চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজের ক্ষেত্রে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে এ বইটি থেকে। পরবর্তীতে অনেক গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে এ বইটি। আর বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কৌতূহল অনেক বেড়েছে। এ কারণে বইটি সমাদৃত হবে।
বইটি নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বিশাল কাজের জন্য গোটা জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের কাছে। এ কাজটির জন্য এ বছর তিনি স্বাধীনতা পদক পেতে পারেন। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মামুনের চেয়ে কেউ বেশি লিখেনি। আর তাঁকে দিয়েই ইতিহাস সংবলিত এমন বই রচনা সম্ভব। কারণ ইতিহাস নিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ২০০টি গ্রন্থ লিখেছেন। বিশ্বের ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপটে এটাও একটা ইতিহাস। তিনি আরও বলেন, ইতিহাসহীনতায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বইটি ফিরিয়ে নিয়ে সঠিক ইতিহাসের দিকে। জানবে মুক্তিযুদ্ধের কথা। বইটি লেখক, গবেষক থেকে শুরু করে সবার পাঠ্য হওয়া উচিত।
হাশেম খান বলেন, বারো খ-ের এই মুক্তিযুদ্ধ কোষ রচনা খুবই কঠিন একটি কাজ। আর সে কঠিন কাজটিই করেছেন মুনতাসীর মামুন। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি প্রযোজন ছিল এই গ্রন্থটির। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমাণ কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেকে কিছুই জানে না। রাজাকাররা নানাভাবে দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলি দেয়ার চেষ্টা করছে। সেই চেতনা ফিরিয়ে আনতে এ বইটি দারুণ ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে বইটি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন সময়ে বইটির প্রকাশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ধরা দেবে সবার কাছে।
নিজের প্রতিক্রিয়ায় মুনতাসীর মামুন বলেন, এ গ্রন্থটি আমার জীবনের একটি মাইলফলক। একজন লেখকের জীবনে একটি কাজ শুরু করে তা শেষ করার মতো আনন্দের আর কিছু নেই। বইটির সম্পাদনার সময় মনে হয়েছে নিজেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধী এ বিষয়ে কোনও ভারসাম্য নেই। এটা হবে একতরফা। এদেশের সংস্কৃতিতে সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে কিন্তু কাজ করে না। এ বইয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে ইতিহাসের অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও তা কার্যকরের মাধ্যমে সে অধিকার পুরোপুরি ফিরে পাব।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সময়ের একটি সাহসী উদ্যোগ এ বইটি প্রকাশ। এমনিতেই উপমহাদেশে ইতিহাস না জানার একটি সংস্কৃতি চালু আছে। তবে আমাদের দেশে ধীরে ধীরে এটা কমে এসেছে। নতুন প্রজন্ম এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আগ্রহী।
এবি তাজুল ইসলাম বলেন, এ বইটি মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের অভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছে। বইটির ৫০০ সেট মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করবে।
কামাল লোহানী বলেন, বইটির প্রকাশের সময়কালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলাকালীন সময়ে প্রকাশিত হলো বইটি। এ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত ইতিহাস রচনায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এ বইয়ের পর কেউ মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস নিয়ে লিখতে হলে তাকে ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত, বইটির প্রথম খ-ে এসেছে ঘটনা ও ব্যক্তি। দ্বিতীয় খ-ে তুলে ধরা হয়েছে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের তথ্য। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ খ-ে বর্ণিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা। সপ্তম ও অষ্টম খ-ে এসেছে রণাঙ্গনের কথা। আর শহীদদের তথ্য নিয়ে রচিত হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ খ-। ১২ খ-ের বইয়ের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পাঠকরা অগ্রিম বুকিংয়ের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫শ’ টাকায় বইটি কেনার সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া একসঙ্গে পুরো ১২ খ-ের বইটি কিনলে ৩০ শতাংশ কমিশন পাবেন। আর আলাদা করে খ-গুলো কিনতে হলে সেক্ষেত্রে পাবেন ২৫ শতাংশ কমিশন।
জাতীয় কবিতা উৎসবের সমাপ্তি ॥ শনিবার শীতের বিকেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বর। চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। মঞ্চে সারি বেঁধে বসে রয়েছেন উদীয়মান ও খ্যাতিমান কবিরা। উদীয়মানরা একে একে উঠে আসছেন মাইক্রোফানের সামনে। তুমুল আবেগে পাঠ করে যাচ্ছেন স্বরচিত কবিতা।
হঠাৎ কানে এলো জেগে ওঠার ও রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের বাণীযুক্ত দুটি চরণ। আমি আর থমকে দাঁড়াতে চাই না/অভিশপ্ত জাতির জন্য ত্রিশুল হাতে দাঁড়াতে চাই এটি ছিল ঢাকার তরুণ কবি আসমা আখতার লিজার কবিতার শেষ দুটি লাইন। জাতীয় কবিতা উৎসবের শেষ দিনে আবেগমথিত কণ্ঠে লিজার মতো অনেকেই শুনিয়েছেন তাদের কবিতা। সেসব কবিতায় ছিল স্বদেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, দেশভাগ, প্রেম ও দ্রোহের বাণী। আর দর্শকসারিতে বসে কবিতাপ্রেমীরা দিনভর উপভোগ করেছে অসংখ্য কবির নানা বিষয়ের কবিতাপাঠ। সব মিলিয়ে কবিতা উৎসবের সমাপনী দিনটিও মন রাঙিয়েছে কবিতানুরাগীদের।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার/দাবি আজ কবিতার সেøাগানে শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ। এবারের ২৭তম উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় পরিষদের অন্যতম প্রাণপুরুষ কবি ও ছড়াকার ফয়েজ আহমদ এবং জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের সুহৃদ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে।
উৎসবের শেষ দিন শনিবার পর্যন্ত ঢাকার ও ঢাকার বাইরের তিন শতাধিক কবি নিবন্ধনের উৎসবে কবিতাপাঠ করেন। কবিতার এ উৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের কবিদের মেলবন্ধন ঘটে। কবিতাপাঠের পাশাপাশি কবিতার গান, অন্য ভাষায় বাংলাদেশের মুক্তিদ্ধের কবিতার উপস্থাপনা, আদিবাসী কবিদের কবিতার উপস্থাপনা, খ্যাতিমান বাকশিল্পীদের আবৃত্তি, সেমিনার ও প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় কবিতা নিয়ে অনন্য এ আয়োজন।
শনিবার সেমিনার দিয়ে সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রতিবাদের নানা কালপর্ব : কবি ও কবিতা’ এবং ‘অন্যভাষার কবিতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটায় ছিল আদিবাসী কবিদের কবিতাপাঠ পর্ব। সমাপনী আয়োজনে কবি রবিউল হুসাইনকে পুরস্কৃত করে কবিতা পরিষদ। পরিষদের সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও উৎসব আহ্বায়ক কবি মুহাম্মদ সামাদ মানপত্র প্রদান ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি রবিউল হুসাইনের হাতে ত্রিশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। রাত আটটায় পরিবেশিত হয় কবিতার গান।
প্রসঙ্গত, এবারের উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতের ২৩ জন কবি ।
বাংলাদেশ সংবিধান ও ভাষাধিকার শীর্ষক আলোচনানুষ্ঠান ॥ ইউনেস্কো ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে স্কাউট ভবন মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে ‘বাংলাদেশ সংবিধান ও ভাষাধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিচারপতি ও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সভাপতি কাজী ইবাদুল হক ও ভাষাসৈনিক ড. আহমদ রফিক। আলোচনানুষ্ঠানের শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মনসুর মুসা।
শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম। এ ছাড়াও বইটি নিয়ে কথা বলেন লেখক মুনতাসীর মামুন ও প্রকাশক ফরিদ আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একাত্তর নয় মূলত ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় বাঙালীর স্বাধীকারের যুদ্ধ। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এমন কাজ আর হয়নি। বইটিতে একাত্তরের মার্চের আগের ঘটনা থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত নানা তথ্য যুক্ত হয়েছে। চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজের ক্ষেত্রে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে এ বইটি থেকে। পরবর্তীতে অনেক গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে এ বইটি। আর বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কৌতূহল অনেক বেড়েছে। এ কারণে বইটি সমাদৃত হবে।
বইটি নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বিশাল কাজের জন্য গোটা জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের কাছে। এ কাজটির জন্য এ বছর তিনি স্বাধীনতা পদক পেতে পারেন। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মামুনের চেয়ে কেউ বেশি লিখেনি। আর তাঁকে দিয়েই ইতিহাস সংবলিত এমন বই রচনা সম্ভব। কারণ ইতিহাস নিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ২০০টি গ্রন্থ লিখেছেন। বিশ্বের ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপটে এটাও একটা ইতিহাস। তিনি আরও বলেন, ইতিহাসহীনতায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বইটি ফিরিয়ে নিয়ে সঠিক ইতিহাসের দিকে। জানবে মুক্তিযুদ্ধের কথা। বইটি লেখক, গবেষক থেকে শুরু করে সবার পাঠ্য হওয়া উচিত।
হাশেম খান বলেন, বারো খ-ের এই মুক্তিযুদ্ধ কোষ রচনা খুবই কঠিন একটি কাজ। আর সে কঠিন কাজটিই করেছেন মুনতাসীর মামুন। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি প্রযোজন ছিল এই গ্রন্থটির। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমাণ কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেকে কিছুই জানে না। রাজাকাররা নানাভাবে দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলি দেয়ার চেষ্টা করছে। সেই চেতনা ফিরিয়ে আনতে এ বইটি দারুণ ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে বইটি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন সময়ে বইটির প্রকাশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ধরা দেবে সবার কাছে।
নিজের প্রতিক্রিয়ায় মুনতাসীর মামুন বলেন, এ গ্রন্থটি আমার জীবনের একটি মাইলফলক। একজন লেখকের জীবনে একটি কাজ শুরু করে তা শেষ করার মতো আনন্দের আর কিছু নেই। বইটির সম্পাদনার সময় মনে হয়েছে নিজেই যেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধী এ বিষয়ে কোনও ভারসাম্য নেই। এটা হবে একতরফা। এদেশের সংস্কৃতিতে সবাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে কিন্তু কাজ করে না। এ বইয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে ইতিহাসের অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছি। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও তা কার্যকরের মাধ্যমে সে অধিকার পুরোপুরি ফিরে পাব।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সময়ের একটি সাহসী উদ্যোগ এ বইটি প্রকাশ। এমনিতেই উপমহাদেশে ইতিহাস না জানার একটি সংস্কৃতি চালু আছে। তবে আমাদের দেশে ধীরে ধীরে এটা কমে এসেছে। নতুন প্রজন্ম এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আগ্রহী।
এবি তাজুল ইসলাম বলেন, এ বইটি মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের অভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছে। বইটির ৫০০ সেট মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করবে।
কামাল লোহানী বলেন, বইটির প্রকাশের সময়কালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলাকালীন সময়ে প্রকাশিত হলো বইটি। এ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত ইতিহাস রচনায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এ বইয়ের পর কেউ মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস নিয়ে লিখতে হলে তাকে ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত, বইটির প্রথম খ-ে এসেছে ঘটনা ও ব্যক্তি। দ্বিতীয় খ-ে তুলে ধরা হয়েছে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের তথ্য। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ খ-ে বর্ণিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা। সপ্তম ও অষ্টম খ-ে এসেছে রণাঙ্গনের কথা। আর শহীদদের তথ্য নিয়ে রচিত হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ খ-। ১২ খ-ের বইয়ের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পাঠকরা অগ্রিম বুকিংয়ের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫শ’ টাকায় বইটি কেনার সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া একসঙ্গে পুরো ১২ খ-ের বইটি কিনলে ৩০ শতাংশ কমিশন পাবেন। আর আলাদা করে খ-গুলো কিনতে হলে সেক্ষেত্রে পাবেন ২৫ শতাংশ কমিশন।
জাতীয় কবিতা উৎসবের সমাপ্তি ॥ শনিবার শীতের বিকেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বর। চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। মঞ্চে সারি বেঁধে বসে রয়েছেন উদীয়মান ও খ্যাতিমান কবিরা। উদীয়মানরা একে একে উঠে আসছেন মাইক্রোফানের সামনে। তুমুল আবেগে পাঠ করে যাচ্ছেন স্বরচিত কবিতা।
হঠাৎ কানে এলো জেগে ওঠার ও রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের বাণীযুক্ত দুটি চরণ। আমি আর থমকে দাঁড়াতে চাই না/অভিশপ্ত জাতির জন্য ত্রিশুল হাতে দাঁড়াতে চাই এটি ছিল ঢাকার তরুণ কবি আসমা আখতার লিজার কবিতার শেষ দুটি লাইন। জাতীয় কবিতা উৎসবের শেষ দিনে আবেগমথিত কণ্ঠে লিজার মতো অনেকেই শুনিয়েছেন তাদের কবিতা। সেসব কবিতায় ছিল স্বদেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, দেশভাগ, প্রেম ও দ্রোহের বাণী। আর দর্শকসারিতে বসে কবিতাপ্রেমীরা দিনভর উপভোগ করেছে অসংখ্য কবির নানা বিষয়ের কবিতাপাঠ। সব মিলিয়ে কবিতা উৎসবের সমাপনী দিনটিও মন রাঙিয়েছে কবিতানুরাগীদের।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার/দাবি আজ কবিতার সেøাগানে শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ। এবারের ২৭তম উৎসবটি উৎসর্গ করা হয় পরিষদের অন্যতম প্রাণপুরুষ কবি ও ছড়াকার ফয়েজ আহমদ এবং জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের সুহৃদ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে।
উৎসবের শেষ দিন শনিবার পর্যন্ত ঢাকার ও ঢাকার বাইরের তিন শতাধিক কবি নিবন্ধনের উৎসবে কবিতাপাঠ করেন। কবিতার এ উৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের কবিদের মেলবন্ধন ঘটে। কবিতাপাঠের পাশাপাশি কবিতার গান, অন্য ভাষায় বাংলাদেশের মুক্তিদ্ধের কবিতার উপস্থাপনা, আদিবাসী কবিদের কবিতার উপস্থাপনা, খ্যাতিমান বাকশিল্পীদের আবৃত্তি, সেমিনার ও প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয় কবিতা নিয়ে অনন্য এ আয়োজন।
শনিবার সেমিনার দিয়ে সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রতিবাদের নানা কালপর্ব : কবি ও কবিতা’ এবং ‘অন্যভাষার কবিতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটায় ছিল আদিবাসী কবিদের কবিতাপাঠ পর্ব। সমাপনী আয়োজনে কবি রবিউল হুসাইনকে পুরস্কৃত করে কবিতা পরিষদ। পরিষদের সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও উৎসব আহ্বায়ক কবি মুহাম্মদ সামাদ মানপত্র প্রদান ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি রবিউল হুসাইনের হাতে ত্রিশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। রাত আটটায় পরিবেশিত হয় কবিতার গান।
প্রসঙ্গত, এবারের উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতের ২৩ জন কবি ।
বাংলাদেশ সংবিধান ও ভাষাধিকার শীর্ষক আলোচনানুষ্ঠান ॥ ইউনেস্কো ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে স্কাউট ভবন মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে ‘বাংলাদেশ সংবিধান ও ভাষাধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিচারপতি ও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সভাপতি কাজী ইবাদুল হক ও ভাষাসৈনিক ড. আহমদ রফিক। আলোচনানুষ্ঠানের শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মনসুর মুসা।
No comments