দৃষ্টিপাত- জন্মনিবন্ধন শিশুর মৌলিক অধিকার by অনিকেত মাসুম
আমার জন্ম ১৯৮৪ সালে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার এক গ্রামে। নবম শ্রেণীতে পড়ি, তখন জানলাম বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষা বোর্ডে নবম শ্রেণীতেই ছবি ও স্বাক্ষর পাঠাতে হবে। স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের ফরম এলো। স্বাক্ষর করলাম। পর দিন স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতে রেজিস্ট্রেশনের কথা বললে বড় ভাই একটা সাদা পৃষ্ঠায় সুন্দর করে নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ লিখে দিলেন। সেটা স্কুলে জমা দিলাম। স্কুলে ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ রেজিস্ট্রেশন কার্ড এলো। হাতে নিয়ে দেখলাম, আমার নামের ‘মো:’ আর বাবার নামের ‘প্রামাণিক’ নেই। জন্ম তারিখটা ভুল। স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, আমার আর বাবার নামে একটু ভুল আছে; জন্ম তারিখ মূল জন্ম তারিখের সাথে মিলছে না। স্যার ধমক দিয়ে বললেন, নামের কোনো ভুল নেই। তোর জন্ম তারিখ বাবা-মায়ের চেয়ে আমিই ভালো জানি।’ ভুল তারিখটাই আমার মূল জন্ম তারিখ হয়ে গেল।
কলেজে ভর্তি হলাম, অনেক নতুন বন্ধু। এক দিন জন্মদিনের তারিখ নিয়ে কথা উঠতেই প্রায় সবাই বলল, তাদের মূল জন্ম তারিখ আর রেজিস্ট্রেশনের জন্ম তারিখ এক নয়। কারো রেজিস্ট্রেশনের জন্ম তারিখ মূল তারিখের এক বা দেড় বছর পরে আবার কারো ছয় মাস বা এক বছর আগে। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহীদুল ইসলামের রেজিস্ট্রেশনে জন্ম তারিখের ভুলে তার বয়স মূল বয়সের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় সে কারণ জানতে চেয়েছিল। স্যার জবাবে বলেছিলেন, তোমার রোল তো এক, তুমি পরীক্ষায় ফেল করবে না।
উন্নত দেশগুলোতে অন্য ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সে গর্ভে থাকতেই সন্তানের নাম ঠিক করে দেয়া হয়। মা হাসপাতাল ছাড়ার প্রাক্কালে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নবজাতকের জন্মসনদ পেয়ে যান। জন্মসনদ শিশুর মৌলিক দলিল। নাগরিকত্ব এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিষেবা জন্মসনদের ওপরই নির্ভর করে। তাই জন্মসনদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ জরুরি। ভারতবর্ষে ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশ সরকার জনগণের জন্ম-মৃত্যুর বিষয়ে একটি আইন পাস করেছিল। আইনটির নাম The Births and Deaths Registration Act. 1873 IBen. Act of 1873 . আজ থেকে ১৪০ বছর আগে একজন চৌকিদার শিশুর জন্মের আট দিনের মধ্যেই শিশুর নাম, বাবা, মা, ঠিকানা নিবন্ধন করার দায়িত্ব পালন করতেন।
জন্মনিবন্ধন শিশুর মৌলিক অধিকার। শিশুর নাম, পরিচিতি, জাতীয়তা, নাগরিকত্ব ইত্যাদি জরুরি বিষয় জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। তা ছাড়া বয়স নির্ধারণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, বিদ্যালয়ে ভর্তি, টিকা, উত্তরাধিকার, ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রভৃতি পেতে এবং সব ধরনের আইনি সেবা লাভের জন্য জন্মনিবন্ধনের বিকল্প নেই। পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রকার লাইসেন্স গ্রহণ, বিয়ে, সম্পত্তি হস্তান্তর, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে রোধসহ সব ধরনের অধিকার সংরক্ষণেও জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য।
শিশু অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে ৩ আগস্ট জাতিসঙ্ঘের শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে। ১৯৯৬ সালে ঝিনাইদহে ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় ০-৫ বছরের শিশু জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সারা দেশে জনগণকে জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্মনিবন্ধনের হার খুবই কম। শহর অঞ্চলের মানুষ এ সম্পর্কে একটু জানলেও গ্রামের মানুষ একেবারে অজ্ঞ। ভারতে নতুন শিশুর জন্মনিবন্ধনের হার ৫২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৯৮ শতাংশ, আর আমাদের দেশ এখনো ৩০ শতাংশ-এর নিচে।
বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও জনগণ তা জানেই না। এ ছাড়া যারা শিশুর জন্মনিবন্ধন করে না, তাদের তেমন কোনো শাস্তির বিধান নেই। জন্মনিবন্ধনের সুফল সম্পর্কে প্রচারণা নেই। আশা করি, সেদিন আর বেশি দূরে নেই যখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু জন্মের পর নিবন্ধিত হবে এবং পাবে সঠিক জন্মসনদ।
কলেজে ভর্তি হলাম, অনেক নতুন বন্ধু। এক দিন জন্মদিনের তারিখ নিয়ে কথা উঠতেই প্রায় সবাই বলল, তাদের মূল জন্ম তারিখ আর রেজিস্ট্রেশনের জন্ম তারিখ এক নয়। কারো রেজিস্ট্রেশনের জন্ম তারিখ মূল তারিখের এক বা দেড় বছর পরে আবার কারো ছয় মাস বা এক বছর আগে। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহীদুল ইসলামের রেজিস্ট্রেশনে জন্ম তারিখের ভুলে তার বয়স মূল বয়সের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় সে কারণ জানতে চেয়েছিল। স্যার জবাবে বলেছিলেন, তোমার রোল তো এক, তুমি পরীক্ষায় ফেল করবে না।
উন্নত দেশগুলোতে অন্য ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সে গর্ভে থাকতেই সন্তানের নাম ঠিক করে দেয়া হয়। মা হাসপাতাল ছাড়ার প্রাক্কালে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নবজাতকের জন্মসনদ পেয়ে যান। জন্মসনদ শিশুর মৌলিক দলিল। নাগরিকত্ব এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিষেবা জন্মসনদের ওপরই নির্ভর করে। তাই জন্মসনদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ জরুরি। ভারতবর্ষে ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশ সরকার জনগণের জন্ম-মৃত্যুর বিষয়ে একটি আইন পাস করেছিল। আইনটির নাম The Births and Deaths Registration Act. 1873 IBen. Act of 1873 . আজ থেকে ১৪০ বছর আগে একজন চৌকিদার শিশুর জন্মের আট দিনের মধ্যেই শিশুর নাম, বাবা, মা, ঠিকানা নিবন্ধন করার দায়িত্ব পালন করতেন।
জন্মনিবন্ধন শিশুর মৌলিক অধিকার। শিশুর নাম, পরিচিতি, জাতীয়তা, নাগরিকত্ব ইত্যাদি জরুরি বিষয় জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। তা ছাড়া বয়স নির্ধারণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, বিদ্যালয়ে ভর্তি, টিকা, উত্তরাধিকার, ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রভৃতি পেতে এবং সব ধরনের আইনি সেবা লাভের জন্য জন্মনিবন্ধনের বিকল্প নেই। পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রকার লাইসেন্স গ্রহণ, বিয়ে, সম্পত্তি হস্তান্তর, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে রোধসহ সব ধরনের অধিকার সংরক্ষণেও জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য।
শিশু অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে ৩ আগস্ট জাতিসঙ্ঘের শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে। ১৯৯৬ সালে ঝিনাইদহে ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় ০-৫ বছরের শিশু জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সারা দেশে জনগণকে জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্মনিবন্ধনের হার খুবই কম। শহর অঞ্চলের মানুষ এ সম্পর্কে একটু জানলেও গ্রামের মানুষ একেবারে অজ্ঞ। ভারতে নতুন শিশুর জন্মনিবন্ধনের হার ৫২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৭০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৯৮ শতাংশ, আর আমাদের দেশ এখনো ৩০ শতাংশ-এর নিচে।
বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও জনগণ তা জানেই না। এ ছাড়া যারা শিশুর জন্মনিবন্ধন করে না, তাদের তেমন কোনো শাস্তির বিধান নেই। জন্মনিবন্ধনের সুফল সম্পর্কে প্রচারণা নেই। আশা করি, সেদিন আর বেশি দূরে নেই যখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু জন্মের পর নিবন্ধিত হবে এবং পাবে সঠিক জন্মসনদ।
No comments