মুখ খুললেন আবুল হোসেন
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি বলেছেন, তার সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক প্যানেল চেয়ারম্যানের অভিযোগ সঠিক নয়।
তিনি
বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে কোনো সম্পৃক্ততা না
থাকা সত্ত্বেও অসত্য অভিযোগ ও অপপ্রচারের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক আমাকে
জড়ানোর চেষ্টা করছে।’ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লেখা এক জবাবদিহিমূলক বক্তব্যে
সৈয়দ আবুল হোসেন নিজের অবস্থান তুলে ধরে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ
মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সততা, স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন
করেছেন। পরেত পদ্মা সেতু নিয়ে নানাবিধ অপপ্রচারের কারণে প্রধানমন্ত্রী
স্বচ্ছতা রায় তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
এরপর পদ্মা সেতু বিষয়ে নিরপে তদন্তের স্বার্থে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে
পদত্যাগ করি। সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে
থাকাকালে একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের
কার্যক্রম অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রকিউরমেন্ট আইন-বিধি, প্রচলিত
আইন ও বিশ্বব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্পের কার্যক্রম
এগিয়েছে। তিনি বলেন, মূল্যায়নের প্রতিটি পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের সম্মতির পর
পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরামর্শক নির্বাচনে প্রচলিত বিধিবিধান ও
বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ‘নিরপে বিশেষ মূল্যায়ন কমিটি’ দরপত্র
মূল্যায়ন শেষে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রীর
কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। তিনি আরো বলেন, মূল্যায়ন স্তরে প্রতিটি পর্যায়ে
বিশ্বব্যাংক সম্পৃক্ত ছিল এবং মূল্যায়ন কমিটিও নিরপে ছিল। সুতরাং পরামর্শক
নিয়োগে কোনো অনিয়ম, অন্যায় ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি হয়নি এবং তিনি নিজে কোনো
দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। এসএনসি লাভালিন প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক
সম্পর্কে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, এসএনসি-লাভালিন প্রতিনিধিদের সাথে
বৈঠক নিয়ে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে তাকে সম্পৃক্ত করার
যে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ প্যানেল উত্থাপন করেছেÑ তা অযৌক্তিক, অমূলক। তিনি বলেন,
‘আমি মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে, আদেশ-সুপারিশ ও
তদবিরের মাধ্যমে কাউকে প্রভাবিত করে কোনো সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করিনি,
সুবিধা দেয়ার কোনো এখতিয়ারও আমার ছিল না।’ তিনি বলেন, ক্রয় আইনে পরামর্শক
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর দায়িত্ব রুটিন কাজ। সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী,
মন্ত্রী ক্রয়কারী নন। ক্রয়কারী হচ্ছেÑ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব অথবা
অধিদফতর-দফতর ও সংস্থার ক্ষেত্রে ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান। সরকারি
ক্রয়নীতির ধারা-২(১৯) অনুযায়ী, পরামর্শক নিয়োগে ক্রয়কারী হলো সচিব, মন্ত্রী
নয়। আর মূল্যায়ন করবে সংশ্লিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি। এমতাবস্থায়, পরামর্শক
নিয়োগে ক্রয়কারী হিসেবে কেউ তার সাথে দেখা করেনি, দেখা করার কথা নয়। তিনি
বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর অনুরোধে এবং তার উপস্থিতিতে
তার সরকারি অফিস কে এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধির সাথে সৌজন্য সাাৎ হয়েছে।
তারা কোন দিন, কোন তারিখে দেখা করেছেন তাও মনে নেই। এখানে কোনো গোপনীয়তা
ছিল না। সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সাাতের সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এসএনসি-লাভালিনের কোনো প্রতিনিধি/কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে
তিনি চেনেন না। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ধারণা ‘দরদাতা নির্বাচন ও
কার্যাদেশ প্রদানে মন্ত্রী চূড়ান্ত কর্তৃপ’ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন,
বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পদ্মা সেতুর
পরামর্শক নিয়োগের েেত্র মন্ত্রী চূড়ান্ত কর্তৃপ নয়। ক্রয়নীতি অনুযায়ী
যেকোনো প্রকল্পের উপদেষ্টা নিয়োগের েেত্র চুক্তি মূল্য সর্বোচ্চ ১০ কোটি
টাকা পর্যন্ত এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের েেত্র চুক্তি মূল্য
সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
অনুমোদন দিতে পারেন। চুক্তি মূল্য এর অধিক হলে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর
সুপারিশসহ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত্র
মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করতে হয়। এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় এজেন্টের
প্রেরিত কথিত ই-মেইলে তার নাম ইঙ্গিত করা হয়েছে প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন,
এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধির প্রেরিত ই-মেইলের বিষয়ে তিনি অবহিত নন
এবং ই-মেইল দাতা ও গ্রহীতা কাউকেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তিনি
বলেন, ‘এ েেত্র ই-মেইল দাতা ও গ্রহীতাÑ উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই আমার
বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, রমেশ শাহ তার ডাইরিতে কী কারণে
তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেনÑ তা তার জানা নেই। রমেশ শাহর ডাইরিতে লেখাÑ
‘পিসিসি’ তিনি কী উদ্দেশ্যে লিখেছেন তা তিনি নিজেই জানেন। রমেশের বা অন্য
কারো সাথে এ ধরনের অনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে তার কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন,
‘এসএনসি-লাভালিন দ্বিতীয় থেকে প্রথম স্থানে উঠে আসার মধ্যে কোনো অনিয়ম
হয়েছে কি নাÑ তা তিনি অবগত নন। বিষয়টি দরপত্র মূল্যায়ন সংক্রান্ত। কাজেই এ
বিষয়টি মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট এবং মূল্যায়ন কমিটি যে সুপারিশ
করেছেÑ তাতে উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের ল্েয বিশ্বব্যাংকে অগ্রায়নের
সময় বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশই হুবহু সেতু বিভাগ থেকে
বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে
মন্ত্রী হিসেবে আমি কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা সংশোধন করিনি।’
সরকার জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কোম্পানিকে পরামর্শক কাজ দিতে চেয়েছিল
প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, এ কথাটি যেভাবে এসেছে তা কিন্তু ঠিক নয়।
সরকারের এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। বারবার বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি
গঠন-ভাঙা সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিটি ভাঙা-গড়া নয়, কমিটি গঠন বা পুনর্গঠন
হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইন্টিগ্রিটিকে
সমুন্নত রাখার জন্য তা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অসত্য অভিযোগ ও
কিছু পত্রিকার অপপ্রচার পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নকে স্থগিত করে দিয়েছে। আমি
কোনো অন্যায় ও অনিয়ম করিনিÑ যাতে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল হতে পারে।
একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন আটকে গেল। এটা
আমার জন্য যেমন বেদনাদায়ক ও অস্বস্তিকর, তেমনি দেশের জন্য চরম তির কারণ।’
No comments