সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল: রোগীর ভিড় নেই, শয্যা ফাঁকা- রোগীর তুলনায় চিকিৎসক বেশি by শিশির মোড়ল
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে জরুরি ও উন্নত সেবা পায় না মানুষ। রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এই সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় নেই, শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকে।
সরকারের তথ্য বলছে, এক হাজার ৭০০ শয্যার ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকে আড়াই হাজার। শয্যা ব্যবহারের হার ১৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ শয্যায় রোগী থাকে ১৪৫ জন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে, বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে গাদাগাদি করে থাকে রোগী। অস্ত্রোপচারের রোগীও শয্যা ভাগাভাগি করে। শয্যা খালি না থাকলেও রোগীকে বিমুখ করে না এই প্রতিষ্ঠান।
তবে উল্টো চিত্র ৬৪৯ শয্যার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এখানে গড়ে ৫৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। গত ২২ জানুয়ারি দোতলায় মহিলা চক্ষু ওয়ার্ডে রোগী ছিল মাত্র দুজন। তৃতীয় তলায় শিশু বিভাগে প্রায় ৪০ শতাংশ শয্যা ফাঁকা দেখা যায়। একই দৃশ্য প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, শয্যা ব্যবহারের হার ৮৫ শতাংশ। গতকালও ছিল একই চিত্র।
এমন চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের সহপরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মানুষের ধারণা, এটা হূদেরাগ চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। অনেকে জানেই না যে এটি জেনারেল হাসপাতাল। তাই রোগী কম আসে। এখানে জরুরি চিকিৎসাসেবাও দুর্বল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবার পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিভাগ সরানোরও কাজ শুরু হয়েছে।
রোগী-চিকিৎসক অনুপাত: কর্তৃপক্ষের হিসাবে এই কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন ৩৭৬ জন। এর মধ্যে কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আছেন ২২৫ জন। আর হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পদে চিকিৎসক আছেন ১৫১ জন। শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এই হিসাবের বাইরে, এঁদের সংখ্যা ১০০-র বেশি। এই চিকিৎসক দলের সঙ্গে নার্স আছেন ১৭৪ জন।
কর্তৃপক্ষের হিসাবে দিনে গড়ে ৫৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে। আর চিকিৎসক ও নার্স আছেন ৬৫০ জন। রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীর এই অনুপাতকে অনেকেই অস্বাভাবিক বলছেন।
উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, কলেজের বেশ কিছু চিকিৎসকের কাজ শুধু পড়ানো। রোগীর সেবার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণে কিছু চিকিৎসক বেশি মনে হয়। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসকের তুলনায় অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা (যেমন নার্স) কম। এঁদের একটা অংশ চায়, রোগী কম ভর্তি করাতে।
রোগীর তুলনায় চিকিৎসক বেশি থাকার পাশাপাশি পদের বিপরীতেও চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। এটি স্পষ্ট হয় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি রোগ বিভাগের জনবলের হিসাবে। অধ্যাপকের পদ আছে দুটি, কাজ করছেন তিনজন। সহযোগী অধ্যাপকের অনুমোদিত পদ একটি, কাজ করছেন আটজন। দুটি সহকারী অধ্যাপকের পদে কাজ করছেন পাঁচজন। আর ১৩টি চিকিৎসা কর্মকর্তার পদে কাজ করছেন ১৯ জন। সবমিলে ২৪টি অনুমোদিত পদে কাজ করছেন ৪৬ জন চিকিৎসক। এঁদের অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। অনেকের কাজ থাকে না, অনেকে কাজে ফাঁকি দেন।
তবে পদের অতিরিক্ত চিকিৎসক থাকার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। শুধু বলছে, এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।
ফাঁকা হাসপাতাল: ১৯ দশমিক ৮০ একর জমির ওপর এই হাসপাতাল। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহযোগী অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, এত পরিসরের, এত পরিকল্পিত হাসপাতাল ভবন খুব কমই আছে।
হাসপাতালের তিনতলা ভবনের প্রতিটি তলায় বিশাল আকৃতির চারটি করে বারান্দা। এ রকম বারান্দা ঢাকা মেডিকেলে থাকলে অন্তত ৫০ জন রোগী থাকতে পারত। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে-পেছনে বড় বড় করিডর। চিকিৎসকদের কক্ষের সামনেও প্রশস্ত জায়গা। সরকারি হাসপাতালে এত ফাঁকা জায়গা চোখে পড়ে না।
নিচতলায় ক্যানটিন। ক্যানটিন পরিচালনাকারী পাশের বিরাট বারান্দা দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এই বারান্দা থেকে।
মেডিসিন বিভাগের একটি বড় বারান্দা চেয়ার-টেবিল, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবের গুদাম বানানো হয়েছে। বিভিন্ন তলায় কমপক্ষে ১০টি বারান্দা ও কক্ষকেও গুদাম বানানো হয়েছে।
নিচতলার হিস্টোপ্যালজি কক্ষটি বন্ধ। দরজার তালা দেখে বোঝা যায়, বহুকাল ধরে এটি বন্ধ আছে। হাসপাতালে এ রকম বন্ধ কক্ষ আরও আছে। এ ব্যাপারে সহপরিচালক বলেন, পুরোনো অব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র চিহ্নিত করে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অনেক যন্ত্র নষ্ট: নষ্ট যন্ত্রের তালিকায় আছে চারটি অবেদন যন্ত্র, চারটি অটোক্লেভ যন্ত্র, ছয়টি ডায়াথার্মি যন্ত্র, দুটি ইসিজি যন্ত্র, তিনটি ইইজি যন্ত্র, একটি এন্ডোস্কোপি যন্ত্র, দুটি ল্যাপারোস্কোপি, দুটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র, পাঁচটি সাকার, তিনটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র ও একটি এক্স-রে যন্ত্র। এসব যন্ত্র ব্যবহারের দায়িত্ব যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই সামনের রাস্তার অন্য পারে বিভিন্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ছুটির পর কাজ করেন।
জরুরি চিকিৎসা নেই: জরুরি বিভাগ সদর জায়গায় নয়। অনেকটা ঘুরে জরুরি বিভাগে পৌঁছালেও জরুরি সেবা মেলে না। জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যকর্মীর দল (চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান) হাসপাতালে নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বড় ধরনের আঘাতে আহত বা আগুনে পোড়া রোগী ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তবে উল্টো চিত্র ৬৪৯ শয্যার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এখানে গড়ে ৫৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। গত ২২ জানুয়ারি দোতলায় মহিলা চক্ষু ওয়ার্ডে রোগী ছিল মাত্র দুজন। তৃতীয় তলায় শিশু বিভাগে প্রায় ৪০ শতাংশ শয্যা ফাঁকা দেখা যায়। একই দৃশ্য প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, শয্যা ব্যবহারের হার ৮৫ শতাংশ। গতকালও ছিল একই চিত্র।
এমন চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের সহপরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মানুষের ধারণা, এটা হূদেরাগ চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। অনেকে জানেই না যে এটি জেনারেল হাসপাতাল। তাই রোগী কম আসে। এখানে জরুরি চিকিৎসাসেবাও দুর্বল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবার পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিভাগ সরানোরও কাজ শুরু হয়েছে।
রোগী-চিকিৎসক অনুপাত: কর্তৃপক্ষের হিসাবে এই কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন ৩৭৬ জন। এর মধ্যে কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আছেন ২২৫ জন। আর হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পদে চিকিৎসক আছেন ১৫১ জন। শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এই হিসাবের বাইরে, এঁদের সংখ্যা ১০০-র বেশি। এই চিকিৎসক দলের সঙ্গে নার্স আছেন ১৭৪ জন।
কর্তৃপক্ষের হিসাবে দিনে গড়ে ৫৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে। আর চিকিৎসক ও নার্স আছেন ৬৫০ জন। রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীর এই অনুপাতকে অনেকেই অস্বাভাবিক বলছেন।
উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, কলেজের বেশ কিছু চিকিৎসকের কাজ শুধু পড়ানো। রোগীর সেবার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণে কিছু চিকিৎসক বেশি মনে হয়। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসকের তুলনায় অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা (যেমন নার্স) কম। এঁদের একটা অংশ চায়, রোগী কম ভর্তি করাতে।
রোগীর তুলনায় চিকিৎসক বেশি থাকার পাশাপাশি পদের বিপরীতেও চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। এটি স্পষ্ট হয় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি রোগ বিভাগের জনবলের হিসাবে। অধ্যাপকের পদ আছে দুটি, কাজ করছেন তিনজন। সহযোগী অধ্যাপকের অনুমোদিত পদ একটি, কাজ করছেন আটজন। দুটি সহকারী অধ্যাপকের পদে কাজ করছেন পাঁচজন। আর ১৩টি চিকিৎসা কর্মকর্তার পদে কাজ করছেন ১৯ জন। সবমিলে ২৪টি অনুমোদিত পদে কাজ করছেন ৪৬ জন চিকিৎসক। এঁদের অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। অনেকের কাজ থাকে না, অনেকে কাজে ফাঁকি দেন।
তবে পদের অতিরিক্ত চিকিৎসক থাকার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। শুধু বলছে, এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।
ফাঁকা হাসপাতাল: ১৯ দশমিক ৮০ একর জমির ওপর এই হাসপাতাল। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহযোগী অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, এত পরিসরের, এত পরিকল্পিত হাসপাতাল ভবন খুব কমই আছে।
হাসপাতালের তিনতলা ভবনের প্রতিটি তলায় বিশাল আকৃতির চারটি করে বারান্দা। এ রকম বারান্দা ঢাকা মেডিকেলে থাকলে অন্তত ৫০ জন রোগী থাকতে পারত। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে-পেছনে বড় বড় করিডর। চিকিৎসকদের কক্ষের সামনেও প্রশস্ত জায়গা। সরকারি হাসপাতালে এত ফাঁকা জায়গা চোখে পড়ে না।
নিচতলায় ক্যানটিন। ক্যানটিন পরিচালনাকারী পাশের বিরাট বারান্দা দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এই বারান্দা থেকে।
মেডিসিন বিভাগের একটি বড় বারান্দা চেয়ার-টেবিল, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবের গুদাম বানানো হয়েছে। বিভিন্ন তলায় কমপক্ষে ১০টি বারান্দা ও কক্ষকেও গুদাম বানানো হয়েছে।
নিচতলার হিস্টোপ্যালজি কক্ষটি বন্ধ। দরজার তালা দেখে বোঝা যায়, বহুকাল ধরে এটি বন্ধ আছে। হাসপাতালে এ রকম বন্ধ কক্ষ আরও আছে। এ ব্যাপারে সহপরিচালক বলেন, পুরোনো অব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র চিহ্নিত করে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অনেক যন্ত্র নষ্ট: নষ্ট যন্ত্রের তালিকায় আছে চারটি অবেদন যন্ত্র, চারটি অটোক্লেভ যন্ত্র, ছয়টি ডায়াথার্মি যন্ত্র, দুটি ইসিজি যন্ত্র, তিনটি ইইজি যন্ত্র, একটি এন্ডোস্কোপি যন্ত্র, দুটি ল্যাপারোস্কোপি, দুটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র, পাঁচটি সাকার, তিনটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র ও একটি এক্স-রে যন্ত্র। এসব যন্ত্র ব্যবহারের দায়িত্ব যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই সামনের রাস্তার অন্য পারে বিভিন্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ছুটির পর কাজ করেন।
জরুরি চিকিৎসা নেই: জরুরি বিভাগ সদর জায়গায় নয়। অনেকটা ঘুরে জরুরি বিভাগে পৌঁছালেও জরুরি সেবা মেলে না। জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যকর্মীর দল (চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান) হাসপাতালে নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বড় ধরনের আঘাতে আহত বা আগুনে পোড়া রোগী ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
No comments