সফলদের স্বপ্নগাথা- লোকের কথায় কান দিয়ো না by সৌরভ গাঙ্গুলী
আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে, আমি সেই কাজগুলোই করি, যা আমি করতে চাই। যা করতে পারলে আমার সত্যি ভালো লাগবে, আমি তেমন কিছু করার চেষ্টা করি। একটা চ্যাম্পিয়নশিপ বা বড় কোনো সাফল্য হঠাৎ এসে ধরা দেয় না।
খেলার আগে তুমি কী করছ, খেলার এক মাস আগে তুমি কীভাবে প্র্যাকটিস করেছ, আগের করা সেই কাজগুলোই ঠিক করে দেয় তুমি সফল হবে, কি হবে না। লোকে তোমাকে নিয়ে কী ভাবল আর কী বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। তোমার নিজের কাছে তুমি কেমন, সেটিই আসল কথা। লোকের সব কথায় কান দিতে গেলে জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে।
আমি যখন দল থেকে বাদ পড়েছিলাম, তখন ফিরে আসার একমাত্র উপায় ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করা। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, অন্তত ১১ বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা আর ছয় বছর ধরে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া কারও জন্য তো নয়ই! কিন্তু সেই কঠিন সময়টাতে আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম, নিজেই নিজেকে সাহস দিতাম।
এর আগের ১১ বছর ধরে কখনো এতটা সময়ের জন্য কলকাতায় থাকতে পারিনি, নিজের জন্য সময় বের করতে পারিনি। একটা সিরিজও মিস করিনি ১১ বছরে, এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি সব সময়। এ যেন এক দীর্ঘ যাত্রা—এক মাঠ থেকে অন্য মাঠ, একের পর এক হোটেল, এয়ারপোর্ট। বাইরে থেকে খেলাকে যত সহজ মনে হয়, আসলে তা নয়। যখন সাত-আট মাসের জন্য দলের বাইরে চলে যেতে হলো, সোজা ঘরে ফিরে এলাম। আমার পরিবারকে সময় দিলাম, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটালাম। নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে শুরু করলাম। একটানা ১১ বছর ধরে একই ভাবে খেলে গেলে ক্লান্তি আসাটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই আমি নতুন ভাবে, নতুন রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলাম।
সেই কঠিন সময়ে আমি বিশেষ কোনো পরিকল্পনা বা প্রার্থনা কিছুই করিনি। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তখন। আমার নিজেকে নিজেই টেনে তুলতে হয়েছিল, সব সময় গভীর বিশ্বাস ছিল নিজের ওপর। আমি জানতাম আমি পারব, পারতে আমাকে হবেই। সেই দুঃসময়ে নিজেকে যেভাবে সামাল দিয়েছিলাম, তাতে নিজেকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। আমি জানতাম যে আমার সামনে পথ খোলা ছিল ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর। সত্যি কথা বলতে কি, হাল ছেড়ে দিয়ে সরে আসাটা সহজ। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকা, চেষ্টা করে যাওয়া, আবার ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া, নিজেকে প্রস্তুত করে তোলা—এসব অসম্ভব কঠিন।
আমি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি ভালোই খেলছি। আমি জানতাম, আমাকে একবার সুযোগ দেওয়া হলে আমি দেখিয়ে দিতে পারব, আমার গভীর বিশ্বাস ছিল সে সুযোগ আমি পাব। শেষপর্যন্ত আমি তা পেয়েছিলাম। আমি খেলার সময় একটা করে বলের ওপর মনঃসংযোগ করতাম। সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি, দলে সুযোগ পাওয়া না-পাওয়ার দুশ্চিন্তা—এসব কখন মনের ধারে-কাছেও ভিড়তে দিইনি খেলার সময়। এসব মনে আসাটাই স্বাভাবিক, মানুষের মন তো! কিন্তু যখনই এসব চিন্তা মাথায় ভিড় করবে, তখনই তা খেলায় প্রভাব ফেলবে। ব্যাটিং করার সময় যদি দলে ডাক পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে চিন্তা করা শুরু করো, তাহলে কখনো তুমি রান পাবে না। তাই আমার লক্ষ্য ছিল শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবা, একটি বলের ওপর সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়া।
কাজের সঙ্গে এভাবে মিশে যাওয়াটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার। আমি সফল হতে গিয়ে অন্যকে আঘাত করব না, নিজেকেও যথাসম্ভব রক্ষা করে চলব, এটাই আমার জীবনের নীতি। আমি বিশ্বাস করি যে যা করতে চায়, তাকে তা-ই করতে দেওয়া উচিত। আমি অন্যকে তার কাজ করতে দেব, নিজেও নিজের কাজ করব এবং একে অপরকে শ্রদ্ধা করব—এমনটিই হওয়া উচিত। আমি যেমন কারও পথে বাধা হয়ে দাঁড়াই না, কেউ আমার পথে বাধা সৃষ্টি করুক সেটাও আমি পছন্দ করি না। সবার নিজের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে এবং সবার অধিকার বজায় রাখার জন্যই পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ওয়েবসাইট
অনুরাধা সেনগুপ্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন অঞ্জলি সরকার।
আমি যখন দল থেকে বাদ পড়েছিলাম, তখন ফিরে আসার একমাত্র উপায় ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করা। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, অন্তত ১১ বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা আর ছয় বছর ধরে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়া কারও জন্য তো নয়ই! কিন্তু সেই কঠিন সময়টাতে আমি নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম, নিজেই নিজেকে সাহস দিতাম।
এর আগের ১১ বছর ধরে কখনো এতটা সময়ের জন্য কলকাতায় থাকতে পারিনি, নিজের জন্য সময় বের করতে পারিনি। একটা সিরিজও মিস করিনি ১১ বছরে, এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি সব সময়। এ যেন এক দীর্ঘ যাত্রা—এক মাঠ থেকে অন্য মাঠ, একের পর এক হোটেল, এয়ারপোর্ট। বাইরে থেকে খেলাকে যত সহজ মনে হয়, আসলে তা নয়। যখন সাত-আট মাসের জন্য দলের বাইরে চলে যেতে হলো, সোজা ঘরে ফিরে এলাম। আমার পরিবারকে সময় দিলাম, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটালাম। নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে শুরু করলাম। একটানা ১১ বছর ধরে একই ভাবে খেলে গেলে ক্লান্তি আসাটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই আমি নতুন ভাবে, নতুন রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলাম।
সেই কঠিন সময়ে আমি বিশেষ কোনো পরিকল্পনা বা প্রার্থনা কিছুই করিনি। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তখন। আমার নিজেকে নিজেই টেনে তুলতে হয়েছিল, সব সময় গভীর বিশ্বাস ছিল নিজের ওপর। আমি জানতাম আমি পারব, পারতে আমাকে হবেই। সেই দুঃসময়ে নিজেকে যেভাবে সামাল দিয়েছিলাম, তাতে নিজেকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। আমি জানতাম যে আমার সামনে পথ খোলা ছিল ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর। সত্যি কথা বলতে কি, হাল ছেড়ে দিয়ে সরে আসাটা সহজ। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকা, চেষ্টা করে যাওয়া, আবার ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া, নিজেকে প্রস্তুত করে তোলা—এসব অসম্ভব কঠিন।
আমি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি ভালোই খেলছি। আমি জানতাম, আমাকে একবার সুযোগ দেওয়া হলে আমি দেখিয়ে দিতে পারব, আমার গভীর বিশ্বাস ছিল সে সুযোগ আমি পাব। শেষপর্যন্ত আমি তা পেয়েছিলাম। আমি খেলার সময় একটা করে বলের ওপর মনঃসংযোগ করতাম। সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি, দলে সুযোগ পাওয়া না-পাওয়ার দুশ্চিন্তা—এসব কখন মনের ধারে-কাছেও ভিড়তে দিইনি খেলার সময়। এসব মনে আসাটাই স্বাভাবিক, মানুষের মন তো! কিন্তু যখনই এসব চিন্তা মাথায় ভিড় করবে, তখনই তা খেলায় প্রভাব ফেলবে। ব্যাটিং করার সময় যদি দলে ডাক পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে চিন্তা করা শুরু করো, তাহলে কখনো তুমি রান পাবে না। তাই আমার লক্ষ্য ছিল শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবা, একটি বলের ওপর সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়া।
কাজের সঙ্গে এভাবে মিশে যাওয়াটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার। আমি সফল হতে গিয়ে অন্যকে আঘাত করব না, নিজেকেও যথাসম্ভব রক্ষা করে চলব, এটাই আমার জীবনের নীতি। আমি বিশ্বাস করি যে যা করতে চায়, তাকে তা-ই করতে দেওয়া উচিত। আমি অন্যকে তার কাজ করতে দেব, নিজেও নিজের কাজ করব এবং একে অপরকে শ্রদ্ধা করব—এমনটিই হওয়া উচিত। আমি যেমন কারও পথে বাধা হয়ে দাঁড়াই না, কেউ আমার পথে বাধা সৃষ্টি করুক সেটাও আমি পছন্দ করি না। সবার নিজের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে এবং সবার অধিকার বজায় রাখার জন্যই পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ওয়েবসাইট
অনুরাধা সেনগুপ্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন অঞ্জলি সরকার।
No comments