কেমন আছেন ভাষাসৈনিকরা-ভাষা আন্দোলন নিয়ে বই লিখছেন রওশন আরা by আজিজুল পারভেজ
শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে লেখালেখির কাজে ব্যস্ত ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। নিজের দেখা ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তিনি লিপিবদ্ধ করে যেতে চান। সেই কাজে হাতও দিয়েছেন তিনি। লিখছেন 'বাংলা ভাষা ও ভূখণ্ড' নামের একটি বই।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিকৃতি ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। ভাষা আন্দোলনে মেয়েদের অংশগ্রহণের বিষয়টিও যথাযথভাবে উঠে আসেনি। ইতিহাসের এ বিকৃতি সারাতে এবং ঘাটতি পূরণ করতেই বই লেখার কাজে মন দিয়েছেন তিনি।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম যে ছাত্রীমিছিলটি বেরিয়েছিল তাতে ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। তাঁর জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তখনকার সিলেট জেলার কুলাউড়া থানার উছলাপাড়ায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রজনতার সমাবেশে রওশন আরা বাচ্চু শুধু অংশই নেননি, তিনি অন্য ছাত্রীদের সংগঠিতও করেছেন ওই সমাবেশে যোগ দিতে। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক সমাবেশ থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত হলে তিনি অন্যদের সঙ্গে মিছিলে নামেন। রওশন আরা জানান, সেদিন পুলিশ লাঠি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল। তাঁরা কয়েকজন ছাত্রী মিলে পুলিশের ব্যারিকেডটি ভেঙে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন। তিনি আরো জানান, সেদিন বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের এলাকা পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তিনি পাশে স্তূপ হয়ে থাকা ভাঙা রিকশার নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে আশ্রয় নেন হলের প্রভোস্ট ড. গনির বাড়িতে। সেদিন বিকেলে গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্য আনোয়ারা খাতুন বক্তব্য দিতে গিয়ে যে দুজন আহত ছাত্রীর পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তাঁদের মধ্যে রওশন আরা বাচ্চুর নামও ছিল।
৮১ বছর বয়সে অবসর জীবনযাপন করছেন রওশন আরা বাচ্চু। অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০২ সালে। স্বামীও সরকারি উচ্চপদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁদের চার মেয়ে। চারজনেরই বিয়ে হয়েছে। মিরপুরে নিজের বাসায় স্বচ্ছন্দে বসবাস করেন রওশন আরা। আনন্দময় পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য দুই মেয়ের পরিবারকেও নিজের সঙ্গে রেখেছেন।
রওশন আরা বাচ্চু শরীরিকভাবে সুস্থই আছেন। নিজের খাবার-দাবার নিজেই তৈরি করেন। এখন অনেকটা সময় ব্যয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখালেখির কাজে। 'বাংলা ভাষা ও ভূখণ্ড' বইটির কাজ প্রায় শেষ। তিনি মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও বিকৃত করা হচ্ছে। সেই বিকৃতির জায়গাগুলোতে নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে যেতে চান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঐতিহাসিক ভুলগুলো আমরা চাইলেই সংশোধন করে ফেলতে পারি। এখনো আমাদের হাতে সুযোগ আছে, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা এখনো বেঁচে আছেন।'
রওশন আরা বাচ্চু জানান, তিনি যে সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, সে সময় মেয়েদের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল না। কোনো ধরনের আন্দোলনে জড়ালে পারিবারিকভাবেই লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার ঝুঁকি ছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি মাতৃভাষা রক্ষার চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, সে আন্দোলনে মেয়েরা যেভাবে অংশ নিয়েছিল, তা ইতিহাসে পূর্ণমাত্রায় স্থান পায়নি। সেই দিকটাও তিনি আলোকপাতের চেষ্টা করছেন তাঁর লেখায়।
রওশন আরা বাচ্চু মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের এত বছর পর বাংলা ভাষার যেমনটা উন্নতি হওয়া উচিত ছিল, তেমনটা হয়নি। বিদেশি ভাষার অনুকরণে বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটছে। বাঙালি যে একটি মর্যাদাপূর্ণ জাতি, মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি, এ জাতির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, এই বোধ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিস্তার ঘটেনি। এ কারণে ভাষা-সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা প্রতিরোধের জন্য বাঙালি সংস্কৃতি ও প্রমিত বাংলা ভাষার চর্চা বাড়াতে হবে।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম যে ছাত্রীমিছিলটি বেরিয়েছিল তাতে ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। তাঁর জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তখনকার সিলেট জেলার কুলাউড়া থানার উছলাপাড়ায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রজনতার সমাবেশে রওশন আরা বাচ্চু শুধু অংশই নেননি, তিনি অন্য ছাত্রীদের সংগঠিতও করেছেন ওই সমাবেশে যোগ দিতে। সেদিনের সেই ঐতিহাসিক সমাবেশ থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত হলে তিনি অন্যদের সঙ্গে মিছিলে নামেন। রওশন আরা জানান, সেদিন পুলিশ লাঠি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল। তাঁরা কয়েকজন ছাত্রী মিলে পুলিশের ব্যারিকেডটি ভেঙে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে। লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন। তিনি আরো জানান, সেদিন বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের এলাকা পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তিনি পাশে স্তূপ হয়ে থাকা ভাঙা রিকশার নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে আশ্রয় নেন হলের প্রভোস্ট ড. গনির বাড়িতে। সেদিন বিকেলে গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্য আনোয়ারা খাতুন বক্তব্য দিতে গিয়ে যে দুজন আহত ছাত্রীর পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তাঁদের মধ্যে রওশন আরা বাচ্চুর নামও ছিল।
৮১ বছর বয়সে অবসর জীবনযাপন করছেন রওশন আরা বাচ্চু। অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০২ সালে। স্বামীও সরকারি উচ্চপদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁদের চার মেয়ে। চারজনেরই বিয়ে হয়েছে। মিরপুরে নিজের বাসায় স্বচ্ছন্দে বসবাস করেন রওশন আরা। আনন্দময় পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য দুই মেয়ের পরিবারকেও নিজের সঙ্গে রেখেছেন।
রওশন আরা বাচ্চু শরীরিকভাবে সুস্থই আছেন। নিজের খাবার-দাবার নিজেই তৈরি করেন। এখন অনেকটা সময় ব্যয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখালেখির কাজে। 'বাংলা ভাষা ও ভূখণ্ড' বইটির কাজ প্রায় শেষ। তিনি মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও বিকৃত করা হচ্ছে। সেই বিকৃতির জায়গাগুলোতে নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে যেতে চান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঐতিহাসিক ভুলগুলো আমরা চাইলেই সংশোধন করে ফেলতে পারি। এখনো আমাদের হাতে সুযোগ আছে, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা এখনো বেঁচে আছেন।'
রওশন আরা বাচ্চু জানান, তিনি যে সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, সে সময় মেয়েদের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল না। কোনো ধরনের আন্দোলনে জড়ালে পারিবারিকভাবেই লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার ঝুঁকি ছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি মাতৃভাষা রক্ষার চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, সে আন্দোলনে মেয়েরা যেভাবে অংশ নিয়েছিল, তা ইতিহাসে পূর্ণমাত্রায় স্থান পায়নি। সেই দিকটাও তিনি আলোকপাতের চেষ্টা করছেন তাঁর লেখায়।
রওশন আরা বাচ্চু মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের এত বছর পর বাংলা ভাষার যেমনটা উন্নতি হওয়া উচিত ছিল, তেমনটা হয়নি। বিদেশি ভাষার অনুকরণে বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটছে। বাঙালি যে একটি মর্যাদাপূর্ণ জাতি, মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি, এ জাতির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, এই বোধ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিস্তার ঘটেনি। এ কারণে ভাষা-সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা প্রতিরোধের জন্য বাঙালি সংস্কৃতি ও প্রমিত বাংলা ভাষার চর্চা বাড়াতে হবে।
No comments