দ্বি-রাষ্ট্রিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্বপ্নদিগন্ত by আবদুল লতিফ সিদ্দিকী
বিশ শতকের শেষ সিকিভাগে পুঁজিপ্রভাবিত গোলকায়ন তত্ত্ব যখন বাজারে এলো এবং তার প্রায়োগিক প্রভাব যখন অনুভূত হতে শুরু করল তখন সেটাকে সবলের স্বার্থসিদ্ধি প্রকল্পের গোলকধাঁধা হিসেবে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা ল্য করা গিয়েছিল।
মুক্তবাজার অর্থনীতির অসম মিথস্ক্রিয়ার আলোকে পর্যবেণ করলে সে ধরনের ঋণাত্মক বিশ্লেষণের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া তখনকার পরিস্থিতিতে আদৌ অসম্ভব ছিল না। যে কোন নতুন আবির্ভাবে আকস্মিকতাজনিত অস্থিরতা থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক, কেননা প্রচল ব্যবস্থাপনায় প্রগতি-লণ যতই অনুপস্থিত থাকুক না কেন, তার থাকে একটি অভ্যাসগত পরম্পরা। নতুনের টান কিংবা ধাক্কা যাই বলি, সেটাকে কুলিয়ে উঠতে সময়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। গোলকায়নের গোলকধাঁধা ভেঙ্গে উন্নয়ন অভীস্পার আদি-মর্ম উপলব্ধি করতে বিশ্ব-বিশ্লেষকগণ সময়ের সে উপযোগটুকু ব্যবহার করে আজ অন্তত এটুকু স্বীকার করবেন আন্তর্জাতিক স্বার্থের সুষমতা জাতিসমূহের জন্য প্রাপ্য করে তুলতে বৈশ্বিকতার অবশ্যই ইতিবাচক দিক আছে। বিশ্বভূগোলের পুরো জমিনে অবিচ্ছিন্ন উন্নয়নকার্য চালনা করতে গেলে জাতিগত রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংযোগ ও সংশ্লেষণ দরকার, এ পথ সুগম করতে আধুনিক বিশ্ব যে আয়ুধের আশ্রয় গ্রহণ না করে গত্যন্তর নেই সেটাকেই আমরা চুক্তি, ট্রিটি, প্যাক্ট বা এগ্রিমেন্ট বলে থাকি। চুক্তি মাত্রই সম্পর্কের যৌগ সমীকরণ যার থাকে বিভিন্ন প এবং মাত্রা; পসমূহের স্বার্থের মাত্রাই চুক্তির েেত্র কাজ করে সর্বাধিক সংহতি এবং একাত্মতা।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উপস্থিতিতে গত ১১ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সন্ত্রাস দমন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অঙ্গীকারে যে ৩টি দ্বিপাকি চুক্তিপত্র ও ২টি সমঝোতা স্মারক স্বারিত হয়েছে দুই দেশের যৌথ স্বার্থের অনুকূলে তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি দণি এশীয় ভৌগোলিক বলয়ের স্থিতিপ্রশ্নে তা বিশেষ সম্ভাবনার সঙ্কেতবহ।
বাংলাদেশের সীমান্তরেখার দীর্ঘ বঙ্কিমতা বেষ্টন করে আছে বৃহৎ-প্রতিবেশী ভারত; যে ভৌগোলিক বলয়জুড়ে দণি এশিয়ার দেশগুলো সংস্থিত তাতে আয়তন-বৈষম্য প্রকট না হলে বাংলাদেশ হয়তো আরও বেশি সংখ্যক রাষ্ট্রের প্রতিবেশিত্ব পেতে পারত। সে েেত্র সম্পর্ক নির্বাচনের একটি সুযোগ তার ঘটত; কোন একটির সঙ্গে বনিবনা না হলে অন্যটির সঙ্গে উন্নয়ন সমীকরণ প্রতিষ্ঠা সহজতর হতো। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যর্থতার অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা যেন একঘরে হয়ে যাওয়ার মতো একটি বিয়োগাত্মক বিচ্ছিন্নতা। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্ভব হলেও বঙ্গোপসাগরের সাথে আর কী প্রকার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কাজেই বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কের প্রশ্নটি বাংলাদেশের জন্য সবে ধন নীলমণিতুল্য কিন্তু ভারতের আছে উল্লেখযোগ্য বিকল্প _ এই সত্যটি মনে রাখলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের অনিবার্যতা বাংলাদেশের জন্য অনুভব আরও সহজ হতে পারে। আয়তনগত বিস্তারের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের যোগসূত্র আছে কি না সেটা সোজাসাপ্টা বলা না গেলেও প্রযুক্তি ও বাণিজ্য মানদণ্ডে ভারতের প্রাগ্রসরতা আমলে নিলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটিকে অসম সম্পর্ক হিসেবে কেউ কেউ চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু বিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রোপটে আধুনিক সম্পর্কসূত্রে বিষয়টিকে অনুধাবন করলে ভারসাম্যের আভাস খুঁজে পাওয়াটাও দুঃসাধ্য নয় কোন অর্থেই।
বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠায় বাঙালীর প্রাণসত্তা ও আস্তিতি্বক ঐশ্বর্যের বিষয়টি শনাক্তযোগ্য হয়ে ওঠে। জাতিগত সংহতি ও অনুভূতির সপ্রাণ একাত্মতায় অর্জিত সার্বভৌমত্ব আমাদের জাতীয় আস্তিত্বে যে চেতনার অভিষেক ঘটায় তা ভূখণ্ডগত ুদ্রত্ব ভুলে গিয়ে মৈত্রী ও সাম্যশক্তির উদ্বোধনকেই বড় করে তোলে যেখানে আমরা ুদ্রায়ত, সীমিত বা দুর্বল নই। বৃহৎ রাষ্ট্রের চেতনা-সংহতি যেমন থাকে আরিক ও মর্মগত উভয় অর্থেই আমাদেরও তা আছে। সুতরাং বাংলাদেশ-ভারত দিল্লীর ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউজে চুক্তি স্বার উপল েদুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান যেটাকে হাসিনা-মনমোহন বৈঠক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে তা যে দুম্বটি দেশের নতুনতর উন্নয়ন সম্পর্কের অভিষেক ঘটাতে চলেছে সেটুকু অন্তত ঘটনাক্রমের চুলচেরা বিশ্লেষণ ছাড়াই বলা যায়। স্বারিত তিনটি চৌকসচুক্তি পরস্পর সম্পৃক্ত বলে এগুলোর বিষয়গত অবিচ্ছিন্নতার একটি সূত্র পাওয়া যাবে, যার ফলে এগুলো একটি ট্রিলজি অব এগ্রিমেন্ট হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
অপরাধ সংক্রান্ত দ্বিপাকি চুক্তি, দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপরাধী হস্তান্তর চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অবৈধ মাদক পাচাররোধ চুক্তি প্রত্যেকটির কালগত উপযোগিতা প্রশ্নাতীত প্রত্যয়ে স্বীকার্য এজন্য যে, চলতি বিশ্বে সংহতিবান্ধব ও মানবস্বার্থকর উন্নয়ন আবহ নির্মাণের বিপ েএগুলোর অবস্থান নিয়ে কোনরকম বিতর্কের অবকাশ নেই। একক পরাশক্তি হিসেবে আবিভর্ূত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা থেকে শুরু করে বিশ্বমানচিত্রের সর্বত্র সন্ত্রাসবাদ নিমর্ূলের তাগিদ অনুভূত-উচ্চারিত হয়ে চলেছে; অনেক েেত্র তার অনুকূলে বাস্তব কর্মপন্থাও অনুসৃত হচ্ছে। এদিক বিবেচনায় চুক্তি তিনটির দণি এশীয় তাৎপর্যের বাইরে একটি বৈশ্বিক মাত্রা আছে বলে ধরে নিলে ভুল হবে না। সমাজ সংহতি, শান্তিপ্রবাহ ও উন্নয়ন পরিক্রমায় সন্ত্রাসের বিষবা্#৬৩৭৪৩; যে রূদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি করে, প্রগতি-প্রত্যাশী কোন রাষ্ট্রের প েতা বরদাশ্ত করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের অপরাধকাণ্ডের গতি-প্রকৃতি নিরীা করলে দেখা যাবে তা আর আজ কোন খণ্ডিত ভূগোল পরিসরে ক্রিয়াশীল নয়; এক অঞ্চলের নাশকতা দাবানলের আকারে সহজেই অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশলের অপব্যবহারে সন্ত্রাসবাদ যেভাবে ডানা বিস্তার করতে শুরু করেছে তা অব্যাহত থাকলে পুরো পৃথিবীই একদিন পোড়ামাটির ধ্বংসস্তূপে রূপ নিতে বাধ্য, যা কোন বিবেকবান রাষ্ট্রপরে কাম্য হতে পারে না। তাই স্বারিত চুক্তিপত্র ও সমঝোতা স্মারকের প্রয়োগ প্রসঙ্গ কালের দাবিতে অনিবার্য সূত্রে স্বীকার্য বলা যায়। সফরকালে ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য; তিনি বলেন, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুম্বদেশের অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপক পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রোপট আমলে নিলে উপরোলি্লখিত ছকের বাইরে চুক্তিগুলোর অন্যবিধ নতুন তাৎপর্য উদ্ঘাটন সম্ভবপর হতে পারে। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপরাধী হস্তান্তর চুক্তি শিরোনামে যে সম্পর্ক-সনদ স্বারিত তার বাস্তবায়নের সঙ্গে এদেশের মৌলিক সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গটি অনিবার্য সূত্রে সংযুক্ত; জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আইনী নি্#৬৩৭৪৩;ত্তির জন্য চুক্তিভুক্ত অঙ্গীকারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের রক্তকলঙ্ক মুছে ফেলার যে দায় জনরায়ের ভিত্তিতে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ওপর বর্তিত তা সফল করে তোলার েেত্র চুক্তিটির সম্ভাব্য ভূমিকা সহজেই অনুমানযোগ্য। সাজাপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময়ের ল্যে চুক্তি স্বারের ফলে ভারতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে বাংলাদেশের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অরাজকতা ও মাদক পাচার রোধ চুক্তির শেষ প্রত্যয়টি প্রজন্মের পরিশুদ্ধি ও নির্মল অনাগত ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আভিজাত্যের শিখর থেকে তৃণমূল তারুণ্য পর্যন্ত মাদকমুক্তির অমেয় আশ্বাস সমান গুরুত্ববহ বলে জনমঙ্গল প্রত্যাশী কোন রাষ্ট্রের প েতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুই দেশের সরকারপ্রধান সে সত্যটি উপলব্ধি করতে পারায় চুক্তিনামার দ্বিপাকি ভূগোল পেরিয়ে অখণ্ড দণি এশীয় পরিমণ্ডলে তা নতুন আশার সঞ্চার করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এর মধ্য দিয়ে দুম্বদেশের সম্পর্ক সংক্রান্ত কয়েকটি অনি্#৬৩৭৪৩;ন্ন ঝুলন্ত দশার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
এক দেশের সন্ত্রাস যখন অন্য ভূখণ্ডের কূটচারী নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে নিতে চায় তখন তার সংক্রামক চেহারাটি আরও বীভৎস হতে বাধ্য _ এ উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসের ছোবল থেকে উভয় রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে সন্ত্রাস তার চোরাগোপ্তা রাস্তাটি হারিয়ে ফেলবে। তাই দণি এশিয়ার কূটনৈতিক সাফল্যের ইতিহাসে স্বারিত চুক্তি তিনটির অনন্য তাৎপর্য সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাতে নতুন শক্তি সঞ্চার করেছে।
চুক্তির চৌহদ্দি পেরিয়ে এবার স্বারিত সমঝোতা স্মারক বা মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা এমওইউ-এর দিকে নজর নিবদ্ধ করা যেতে পারে; সমঝোতা স্মরকের সংখ্যা দুই এবং তা দরকারী বিষয় নি্#৬৩৭৪৩;ত্তির ল্যে কার্যকর দূতিয়ালি ভূমিকা রাখতে পারবে আশা করা যায়। বিদু্যত খাতে সহযোগিতার ল্যে সমঝোতার প্রথম স্মারক যা স্বারিত হয় বাংলাদেশের বিদু্যত সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং ভারতীয় বিদু্যত সচিব এইচএস ব্রহ্মের মধ্যস্থতায় এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় স্মারকটি স্বারিত হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস ও ভারতীয় সাংস্কৃতিক সচিব জওহর সরকারের মধ্যে।
সার্বভৌখণ্ডিক বিদু্যতায়ন ব্যতিরেকে আধুনিক জীবনের রূপরেখা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে বিদু্যত খাত জাতীয় অগ্রগতির শক্তিমান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে; কিন্তু বাংলাদেশ স্ব-উৎপাদিত বিদু্যতের সাহায্যে তার সবটুকু প্রয়োজন পূরণে সম নয় বলে বিদু্যত আমদানি তার জন্য আবশ্যক। কেন্দ্রীয় গ্রিড থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত বাংলাদেশে যোগানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারত সে অভাব মোচনের পথ খুলে দিয়েছে।
সম্পাদিত দ্বিপাকি চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশকে যে ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে তার পরিমাণ ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা কোন দেশকে দেয়া ভারতের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় রাষ্ট্রমাত্রই কোন না কোন রাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী, সে অর্থে রাষ্ট্র পর্যায়ে চালু থাকা ঋণের সংস্কৃতি এখন আর কোন হীনম্মন্যতার বিষয় নয় বরং তা উন্নয়নযাত্রায় অপরিহার্য অনুশীলন। এখন বাংলাদেশের জন্য যেটা জরুরী তা হলো প্রাপ্য ঋণের উন্নয়নমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম করে তোলা। চুক্তিতে উল্লেখিত ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের জন্য যে ত্রে নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলো গতি অবকাঠামোর অংশ বলে দিন বদলের প্রতিশ্রুতি পূরণে তা সহায়ক ভূমিকা রাখবে। রেলওয়ে প্রকল্প, লোকোমোটিভ, রেলের বগি, বাস ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণের টাকা খরচ করলে বাংলাদেশ তার উন্নয়ন যাত্রায় আরেকটু দ্রুতগামী হতে পারবে বলেই বিশ্লেষকগণের ধারণা। আখাউড়া ও আগরতলার মধ্যে রেলযোগাযোগ চালুর যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তা ইতিবাচক অবদান রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাকি সম্পর্কের েেত্র বর্তমান অবস্থাকে ইতিহাসের পুনরাবর্তন বলা যায় এ অর্থে যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে এ দুম্বটি দেশে যে, রাজনৈতিক দল দুম্বটি জনসমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল এবং তাদের মধ্যে যে কিংবদন্তিতুল্য ঐতিহ্যবাহী সুসম্পর্ক ছিল তা যেন সময়ের পালাবদলে পুনপর্্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে ।
১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম দুম্বটি দেশের সরকারের মৌলিক রাজনৈতিক দর্শনের মতৈক্য ল্য করা যাচ্ছে। মুজিব-ইন্দিরা সম্পর্কের গৌরবময় অধ্যায় যে কিংবদন্ত্রির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত তার শেকড় নিহিত একাত্তরের একটি জাতির জন্মযন্ত্রণায় ও অন্য একটি দেশের মানবিক আচরণ সম্পৃক্ত ঘটনাগুচ্ছে। লাল গালিচা ও গার্ড অব অনারের এক অন্য রকম সংবর্ধনায়, এক উদ্যাপনমুখর অন্তরঙ্গতায় দেশ-বিদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দিল্লীর বর্ণাঢ্য সাজে আলোকসজ্জার জাঁকজমকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের নিকট থেকে গ্রহণ করলেন ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯, যা বাংলাদেশের জন্য হতে পারে দুর্লভ সম্মানের বিষয়; সম্পর্ক উন্নয়নের স্মারক হিসেবে এর একটা প্রতীকী মর্যাদাও আছে বলে ধরে নেয়া যায়। ভারত জাতির জনক, অহিংস রাজনীতির ধারক-প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পু্#৬৩৭৪৩;স্তবক অর্পণের মধ্য দিয়েও ইতিবাচক প্রতীকার্থ নি্#৬৩৭৪৩;ন্ন হয় বলে আমাদের বিশ্বাস।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর দেশের অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় দিকসঞ্চারী ভূমিকা পালন করে, যার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশসমূহের সম্পৃক্তি যোগ হলে বাণিজ্যিক বহুমুখিতার সূত্রপাত ঘটবে বলে ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও উপকারী। তাছাড়া প্রাপ্তি ও প্রদানের পরিসংখ্যানে ভারসাম্য রেখেই বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত দলিলপত্র প্রণীত হয়েছে। দিল্লীর মৌর্য শেরাটন হোটেলের কমলমহল বলরুমে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে শুধু ভারতকে ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি প্রদান করা হচ্ছে কিনা সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের নেত্রী বিশ্বায়নের যুগে দরজা বন্ধ করে অচল একঘেয়েমির প্রশ্রয় দেয়ার বিপ েমত পেশ করেন। 'সব ঘরে তো কাঁটা দিয়ে বসে থাকতে পারি না _ তাঁর এ মন্তব্যে বৈশ্বিক প্রোপটে বাণিজ্যিক সচলতার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গটি স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ এবং দণি এশিয়ার বিপুল জনগোষ্ঠীর উন্নত জীবনের জন্য দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই; স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেই তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় যা আছে তাতে শুধু দুম্বদেশই নয় নেপাল, ভুটানসহ উপমহাদেশের সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীরও কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে।
হাসিনা-মনমোহন বৈঠকে অভিন্ন নদীসহ তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে; ১৯৯৬ সালের পানিবণ্টন চুক্তির পর দ্বিতীয় মেয়াদে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কারিগরি ও সচিব পর্যায়ে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণাধীন টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ইতোপূর্বে বাংলাদেশে যে বিতর্কমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বৈঠকে মনমোহন সিংহের সঙ্কেতপূর্ণ মন্তব্যে তার অবসান ঘটার সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, ভারত কতর্ৃপ বাংলাদেশের তি হতে পারে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পে এমন কোন পদপে গ্রহণ করবে না। ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও সেখানকার প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক, কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষক কূলদীপ নায়ারও স্বারিত চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী মন্তব্য করেছেন। স্থিতিশীল দণি এশিয়া প্রতিষ্ঠায় এ চুক্তিগুলো যে শক্ত ভূমিকা পালন করবে তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মহলের নিরাসক্ত বিশ্লেষণী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
ভারত জনতার যে আদর্শ তা যেমন মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরুর জীবনদীা থেকে পরিগঠিত তেমনি বাঙালী জনতার মৌল আদর্শ-কাঠামো স্থিরীকৃত হয়েছে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত স্বাধীনতা, সৎ প্রতিবেশিতা ও পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের শ্রদ্ধাবোধ থেকে। দুই উদারতাবাদী আদর্শের সরকার একই সময়ে রাষ্ট্র পরিচালন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত থাকায় দুই রাষ্ট্রের প্রগতি-অগ্রগতির সম্ভাবনা অধিকতর গতিময়তা লাভ করবে বলে প্রত্যাশা করা দোষের নয়।
চুক্তি স্বারের জমকপূর্ণ উদ্যাপনের মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রিক স্বপ্নের যে যুুগল সরনিতে যাত্রা শুরু তার সমাপ্তি সফল হতে পারে তখনই যদি দুই দেশ তাদের প্রতিশ্রুতির পাটাতন থেকে পা সরিয়ে না নেয় এবং তারা যদি তাদের চুক্তি-সম্পৃক্ত রসদকে বেঠিকভাবে খরচ না করে। সাগ্রহী চোখে সম্ভাবনার স্বপ্নদিগন্তে উন্মুখ তাকিয়ে থাকলাম।
লেখক : মাননীয় মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
No comments