অপরাজেয় সাবরিনা by তৌহিদা শিরোপা
ধীরে ধীরে মাংসপেশির শক্তি কমে যাচ্ছে। এখন কথা বলতেও অসুবিধা হয় সাবরিনা সুলতানার। তবু থেমে থাকছে না তাঁর লেখা ও বলার শক্তি। নিজে যেসব সুবিধা পাননি, অন্য প্রতিবন্ধীরা যাতে সেসব পায়, সে ব্যাপারে সোচ্চার তিনি।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য করছেন সংগঠন, লিখছেন ব্লগ। ইন্টারনেটে ব্লগ লিখে যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিবন্ধীদের নানা কথা।
সাবরিনার বয়স তখন সাত কি আট। হঠাৎ করে একটা ভয়ানক ব্যাধি ধরা পড়ল তাঁর। মাসকুলার ডিসট্রফি। এই রোগে শরীরের মাংসপেশির শক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। তারপর একসময় নিভে যায় প্রাণপ্রদীপ।
দীর্ঘ সময় সাবরিনা কাটিয়েছেন চারদেয়ালের মধ্যে। ঘরবন্দী সেই জীবনকেই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের মোড়টা ঘুরে গেল, যখন ছোট বোন নীলার শরীরেও একই রোগ ধরা পড়ল। এবার সাবরিনা ভাবলেন, আর বসে থাকলে চলবে না।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে টেলিফোনে কথা বলার সময় সাবরিনা বললেন, ‘পঞ্চম শ্রেণীর পর আমি আর লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু আমার ছোট বোনকে নিয়ে কত স্বপ্ন! ও চিকিৎসক হবে। ওর এই রোগ ধরা পড়ার পর ভাবলাম, ও যেন আর দশটা ছেলেমেয়ের মতো লেখাপড়া করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
২০০৪ কি ২০০৫ সালের কথা। প্রতিবন্ধীদের নানা অসুবিধা, তাদের জন্য কী প্রয়োজন, কোন ধরনের অবকাঠামো দরকার—সেসব জানিয়ে ‘খোলা চিঠি’ লেখেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠি প্রকাশিত হয় পত্রিকায়। আরও বেশি মানুষকে কীভাবে এসব কথা জানাবেন, ভাবতে থাকেন। এরপর ছোট ভাই একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার দেন। শুরুতে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতেন। ফেসবুকে একটা অ্যাকাউন্টও খোলেন। পেয়ে গেলেন বেশ কজন বন্ধুও। তাঁদের জানালেন সেই চিঠির কথা। তাঁদের মাধ্যমে প্রচার হতে থাকল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সাবরিনার কথা।
ফেসবুকেই ২০০৯ সালে পরিচয় সালমা মাহবুব নামে আরেক হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর সঙ্গে। সাবরিনা বলেন, ‘সালমা আপা না হলে আমি কিছুই করতে পারতাম না।’ সাবরিনার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের (বি-স্ক্যান) ফেসবুক গ্রুপ খুলে দেন তিনি। সাবরিনা বলেন, ‘বাংলা ব্লগসাইট আমার ব্লগ ডট কমে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে দিলেন, যেন আমার না বলা সব কথা এখানে বলতে পারি। পাশাপাশি প্রথম আলো ব্লগ, সচলায়তন, চতুর্মাত্রিকসহ আরও বেশ কটি ব্লগে অসংখ্য লেখা লিখেছি।’
প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সবাই যেন জানতে পারে, সে জন্য সাবরিনা গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু হয় বি-স্ক্যানের। আর জীবনের প্রথম ব্লগ লেখেন একই বছরের ১ নভেম্বর। এই ব্লগ লিখেই বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাবরিনা সুলতানা।
২০১১ সালে জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচেভেলের আয়োজনে সেরা ব্লগার নির্বাচন—বেস্ট অব ব্লগস (ববস) প্রতিযোগিতায় পাঠকের ভোটে ও বিচারকমণ্ডলীর রায়ে তিনি দ্বিতীয় হন।
এখন মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবরিনা। তবু এই আত্মবিশ্বাসী নারী এগিয়ে চলেছেন। বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ার শোভাযাত্রা করা হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরে প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প (হুইলচেয়ার যাতায়াতের জন্য বিশেষ ঢালু পথ) ও বিশেষ শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে; যেগুলো উদ্বোধন হবে এ মাসেই। এ ছাড়া তিনজন প্রতিবন্ধী শিশুকে লেখাপড়ার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বি-স্ক্যান থেকে; এই সংগঠন থেকে প্রতিবন্ধীদের সুদমুক্ত ঋণও দেওয়া হয়।
সাবরিনা বলেন, ‘বি-স্ক্যানের মূল লক্ষ্য ও ভাবনা হলো, প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী মানুষ যাতে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে পারে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ যেন হয়, তাদের সহায়ক যাতায়াত এবং সব জায়গায় তাদের প্রবেশাধিকার যাতে নিশ্চিত করা হয়। যেন ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ মানুষকে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারি। আর ৫ শতাংশ যানবাহন যেন প্রতিবন্ধীদের চলাচল-সহায়ক হয়।’
শুধু বি-স্ক্যান নয়, সাবরিনার নিজেরও এই স্বপ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশে যে দুই কোটি ৪০ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে, তাদের জন্য সাবরিনা চান এক সহায়ক সমাজ। তারা যেন পায় তাদের প্রাপ্য সব অধিকার।
সাবরিনার বয়স তখন সাত কি আট। হঠাৎ করে একটা ভয়ানক ব্যাধি ধরা পড়ল তাঁর। মাসকুলার ডিসট্রফি। এই রোগে শরীরের মাংসপেশির শক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। তারপর একসময় নিভে যায় প্রাণপ্রদীপ।
দীর্ঘ সময় সাবরিনা কাটিয়েছেন চারদেয়ালের মধ্যে। ঘরবন্দী সেই জীবনকেই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের মোড়টা ঘুরে গেল, যখন ছোট বোন নীলার শরীরেও একই রোগ ধরা পড়ল। এবার সাবরিনা ভাবলেন, আর বসে থাকলে চলবে না।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে টেলিফোনে কথা বলার সময় সাবরিনা বললেন, ‘পঞ্চম শ্রেণীর পর আমি আর লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু আমার ছোট বোনকে নিয়ে কত স্বপ্ন! ও চিকিৎসক হবে। ওর এই রোগ ধরা পড়ার পর ভাবলাম, ও যেন আর দশটা ছেলেমেয়ের মতো লেখাপড়া করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
২০০৪ কি ২০০৫ সালের কথা। প্রতিবন্ধীদের নানা অসুবিধা, তাদের জন্য কী প্রয়োজন, কোন ধরনের অবকাঠামো দরকার—সেসব জানিয়ে ‘খোলা চিঠি’ লেখেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠি প্রকাশিত হয় পত্রিকায়। আরও বেশি মানুষকে কীভাবে এসব কথা জানাবেন, ভাবতে থাকেন। এরপর ছোট ভাই একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার দেন। শুরুতে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতেন। ফেসবুকে একটা অ্যাকাউন্টও খোলেন। পেয়ে গেলেন বেশ কজন বন্ধুও। তাঁদের জানালেন সেই চিঠির কথা। তাঁদের মাধ্যমে প্রচার হতে থাকল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সাবরিনার কথা।
ফেসবুকেই ২০০৯ সালে পরিচয় সালমা মাহবুব নামে আরেক হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর সঙ্গে। সাবরিনা বলেন, ‘সালমা আপা না হলে আমি কিছুই করতে পারতাম না।’ সাবরিনার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্কের (বি-স্ক্যান) ফেসবুক গ্রুপ খুলে দেন তিনি। সাবরিনা বলেন, ‘বাংলা ব্লগসাইট আমার ব্লগ ডট কমে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে দিলেন, যেন আমার না বলা সব কথা এখানে বলতে পারি। পাশাপাশি প্রথম আলো ব্লগ, সচলায়তন, চতুর্মাত্রিকসহ আরও বেশ কটি ব্লগে অসংখ্য লেখা লিখেছি।’
প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সবাই যেন জানতে পারে, সে জন্য সাবরিনা গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু হয় বি-স্ক্যানের। আর জীবনের প্রথম ব্লগ লেখেন একই বছরের ১ নভেম্বর। এই ব্লগ লিখেই বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাবরিনা সুলতানা।
২০১১ সালে জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচেভেলের আয়োজনে সেরা ব্লগার নির্বাচন—বেস্ট অব ব্লগস (ববস) প্রতিযোগিতায় পাঠকের ভোটে ও বিচারকমণ্ডলীর রায়ে তিনি দ্বিতীয় হন।
এখন মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবরিনা। তবু এই আত্মবিশ্বাসী নারী এগিয়ে চলেছেন। বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ার শোভাযাত্রা করা হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরে প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প (হুইলচেয়ার যাতায়াতের জন্য বিশেষ ঢালু পথ) ও বিশেষ শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে; যেগুলো উদ্বোধন হবে এ মাসেই। এ ছাড়া তিনজন প্রতিবন্ধী শিশুকে লেখাপড়ার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বি-স্ক্যান থেকে; এই সংগঠন থেকে প্রতিবন্ধীদের সুদমুক্ত ঋণও দেওয়া হয়।
সাবরিনা বলেন, ‘বি-স্ক্যানের মূল লক্ষ্য ও ভাবনা হলো, প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী মানুষ যাতে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে পারে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ যেন হয়, তাদের সহায়ক যাতায়াত এবং সব জায়গায় তাদের প্রবেশাধিকার যাতে নিশ্চিত করা হয়। যেন ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ মানুষকে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারি। আর ৫ শতাংশ যানবাহন যেন প্রতিবন্ধীদের চলাচল-সহায়ক হয়।’
শুধু বি-স্ক্যান নয়, সাবরিনার নিজেরও এই স্বপ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশে যে দুই কোটি ৪০ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে, তাদের জন্য সাবরিনা চান এক সহায়ক সমাজ। তারা যেন পায় তাদের প্রাপ্য সব অধিকার।
No comments