চালের মূল্য বৃদ্ধি
সরকারের হাতে বর্তমানে এগারো লাখ বিশ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছ'মাসে আনত্মর্জাতিক বাজার থেকে কোন চাল আমদানি করা হয়নি। মূলত আমদানি করার প্রয়োজন পড়েনি।
এছাড়া এ সময়টি চালের মৌসুম। তদুপরি চালের মূল্য না কমে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি মোটা চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিলে তদনত্মকারী সংস্থা জানায়, চাল ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির আশায় মজুদ শুরম্ন করেছে। ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য চাল উৎপাদনকারী দেশে এ বছর চাল উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ভারত ত্রিশ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। এটাকেই সুযোগ ভেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির আশায় মজুদদারিসহ চালের মূল্য বাড়িয়েছে। একই সাথে মিলমালিকরা তাদের খেয়াল খুশিমতো ধানের মজুদ গড়ে তুলেছে এবং ইচ্ছেমতো চালের মূল্য বৃদ্ধি করছে।বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার এক মাসের মধ্যে মোটা, সরম্ন ও মাঝারি চালের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনে। সরকারের এই প্রাথমিক সাফল্যে দেশবাসী আশান্বিত হয়ে ওঠে। কিন্তু গত এক মাসের ব্যবধানে মূল্য বেড়েছে সরম্ন চালের ৪ দশমিক ১১ শতাংশ, মাঝারি চালের ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ ও মোটা চালের ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। ধানের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য চালকলের মালিক। প্রতিদিন একটি চালকলে সর্বনিম্ন দশ মেট্রিক টন থেকে সবের্াচ্চ এক শ' মেট্রিক টন পর্যনত্ম ধানের প্রয়োজন হয়। মালিকরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ধান ক্রয় করে মজুদ করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ধানের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এবং চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মিলমালিক ও পাইকারদের সখ্যকেই প্রধান কারণ ধরা হচ্ছে। উলেস্নখ্য, মিল মালিকদের ধান মজুদ করতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ ধান ক্রয়ের জন্য স্থানীয় সরকারী ও বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে। ফলে তারা কোন আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে না। ঋণ নিচ্ছে ১৩ শতাংশ হার সুদে, এরপর মজুদ করা ধান ও চাল ৩৫ শতাংশ হারে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে। আরও মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক পর্যায়ে ধান ও চাল কম বিক্রি করা হচ্ছে। ভোগানত্মিতে পড়ছে সাধারণ ক্রেতা। অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণেই চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূর্যের আলোর অপ্রতুলতার কারণে চালকল মালিকরা ধান শুকোতে পারছে না। বাজারে চাল সরবরাহে অনত্মরায় সৃষ্টি হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ কখনোই মূল্য বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে চায় না। তারা চায় নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ এবং মূল্যের স্থিতিশীলতা। অনত্মত চালের দাম অসহনশীল পর্যায়ে পেঁৗছে গেলে সরকারের জন্য শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দ্রম্নত কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ করা উচিত।
No comments