ছাত্রদলের রণৰেত্র
বাংলাদেশের শিৰার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সোমবার ছাত্রদলের দুটি গ্রম্নপের সংঘর্ষে রণৰেত্রে পরিণত হয়েছিল। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিদ্রোহী গ্রম্নপের নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ খান পারভেজসহ উভয় পৰের প্রায় অর্ধশত নেতা ও কমর্ী আহত হয়েছে।
এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কেএম সাইফুল ইসলাম, রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (টহল) আবদুল আহাদ ও শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পৰের মধ্যে ৪০/৫০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এছাড়া তারা প্রায় ৩০/৩৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরিস্থিতি শানত্ম করতে পুলিশ বেশ কয়েকবার টিয়ারগ্যাস নিৰেপ করে ও রাবার বুলেট ছোড়ে। জানা গেছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কিছু প্রভাবশালী নেতার বাদপড়া নিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে এই সংঘর্ষের পর ছাত্রদলের মূল কমিটি ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছাত্রলীগকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু'দিনব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনও এক বিবৃতিতে এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে।ছাত্রদলের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতা নতুন কিছু নয়। অতীতে তাদের সহিংসতার কারণে বহুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বহু শিৰাঙ্গনে শানত্মিপূর্ণ শিৰার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। এদেশে ছাত্র আন্দোলনের যে মহান ঐতিহ্য রয়েছে, তা বার বার ৰতিগ্রসত্ম হয়েছে ছাত্র সংগঠনের অস্ত্রের ঝঙ্কারে। এবার দেশের প্রায় প্রতিটি দৈনিক সংবাদপত্রে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের ক্যাডারদের ছবি ছাপা হয়েছে। শিৰাঙ্গনের এসব ছবি দেখে বাসত্মবিকই মনে হয়েছে, তা কোন সভ্য জগতের ছবি কি না। অথবা এসব অস্ত্রধারী যুবক বাসত্মবিকই কি ছাত্র? নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ কিংবা দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পবিত্র পরিবেশ নষ্টের অধিকার তাদের আছে কি?
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নিজেদের মধ্যকার এ সংঘর্ষকে খুব সহজভাবে নেয়া উচিত নয়। লৰ্য রাখতে হবে, এটা এমন এক সময় সংঘটিত হয়েছে, যখন বিএনপি প্রায়শই সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া এখন দেশব্যাপী জনগণ অধীর আগ্রহে অপেৰা করছেন, কখন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মৃতু্যদ- কার্যকর হবে। শুধু ঢাকা ভার্সিটির ক্যাম্পাস নয়, অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশীদার জামায়াত শিবিরের ১২ ক্যাডারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। সুতরাং অস্ত্রের ঝঙ্কার শুধু ঢাবিতেই সীমাবদ্ধ আছে এমন মনে করার কোন কারণ নেই। বরং বিএনপি জামায়াত ও তাদের কিছু অঙ্গ সংগঠনের সাম্প্রতিক তৎপরতা দেখে মনে হয়, দেশের গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক অগ্রগতিকে তারা বিনষ্ট করতে চায়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর যেন দেশের অপশক্তিকে ঈর্ষাকাতর করে তুলেছে। সুতরাং ছাত্রদলের দুটি গ্রম্নপের এই সংঘর্ষ একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। দেশপ্রেমিক জনগণকে অবশ্যই এই অশুভ তৎপরতার বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
No comments