বিশেষজ্ঞদের আপত্তির মুখে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ঘোষনা হলো না
নিখিল মানখিন স্বাস্থ্যনীতি চূড়ানত্মের কাজ ফিরে গেছে ছয় মাস আগের অবস্থায়। ছয় মাস আগে খসড়া স্বাস্থ্যনীতির ওপর মতামত নেয়া হয় ওয়েবসাইট ও সরাসরিভাবে। বত্রিশ হাজার মতামত পাওয়ার পর ঘোষণা দিয়েও গত ছয় মাসে কোন খোলামেলা আলোচনার ব্যবস্থা করেনি সরকার।
নির্ধারিত সময়ে কালক্ষেপণ করে ছয় মাস পর খোলামেলা আলোচনা ছাড়াই শনিবার চূড়ানত্ম খসড়া স্বাস্থ্যনীতি ঘোষণার চেষ্টা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। কিনত্মু পুসত্মক আকারে প্রকাশিত ওই 'চূড়ানত্ম খসড়া' এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আপত্তিতে তা তাৎক্ষণিক বদল হয়ে গেল 'মতামতসংবলিত চূড়ানত্মকৃত খসড়া'। সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়, চূড়ানত্মের আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আরেক দফা মতামত নিয়ে সেগুলো প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, পরে তা পাস হওয়ার জন্য পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে। তবে কবে নাগাদ মতামত গ্রহণ করা হবে এবং 'জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি' প্রণীত হতে পারে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন সময় উলেস্নখ করতে পারেননি মন্ত্রী।নিজের ঘোষণার মূল্য রাখতে পারলেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রম্নহুল হক। ১৩ মাস পর একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন তিনি। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার দিন গত বছরের ৬ জানুয়ারি তিনি তিন মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন। গত শনিবার তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, আগামী দু' তিন মাসের মধ্যেই 'জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১০' তিনি জাতিকে উপহার দিতে পারবেন।
স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন নিয়ে সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, স্বাধীনতার ৩৯ বছরেও দেশে কার্যকর জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নেই। এরশাদের আমলে একটি স্বাস্থ্যনীতি বাসত্মবায়নের উদ্যোগ পেশাজীবী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতায় কার্যকর হতে পারেনি। এরপর ২০০০ সালে প্রণীত একটি স্বাস্থ্যনীতি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হলেও ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে ২০০৬ সালে একটি নতুন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করলেও তা কার্যকর হয়নি। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের আগস্টে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেই জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির একটি খসড়া শুধুমাত্র আলোচনার জন্য সংস্করণ প্রকাশ করে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যা দীর্ঘ ১৩ মাসেও বাসত্মবায়নের মুখ দেখেনি।
কিনত্মু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যনীতিতে সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়টি জনসম্মুখে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে দেশের এমন সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরকারীভাবে খোলামেলা আলোচনা এখনও হয়নি। ওয়েবসাইট ও সরাসরি ৩২ হাজার মতামত পাওয়ার পর সরকারীভাবে উনু্মক্ত আলোচনার কথা ঘোষণা করে। কিনত্মু আলোচনা ছাড়াই দীর্ঘ সময় পার করে দিয়েছে সরকার। ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি রশিদী-ই মাহবুব মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, খোলামেলা আলোচনা ছাড়াই খসড়া স্বাস্থ্যনীতি চূড়ানত্ম করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছিল সরকার। সে জন্য তারা উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করেনি। কিনত্মু খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে অনেক দুর্বল দিক রয়ে গেছে। সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। সাধারণ মানুষ কিভাবে সহজলভ্য সঠিক চিকিৎসাসেবা পাবে তার দিকনির্দেশনা নেই। স্বাস্থ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে আরও খোলামেলা আলোচনার দাবি জানিয়েছি আমরা। অবশেষে তা মেনে নেয়া হয়। আলোচনার মাধ্যমে বাদ পড়া অনেক নতুন বিষয় অনত্মভর্ুক্ত হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা ডা. মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে চলছে কমিটি গঠন এবং দাতাদের প্রেসক্রিপশনভিত্তিক স্বাস্থ্য সংস্কারমূলক কর্মসূচী। নতুন কোন সরকার এলেই আবার নতুন করে নীতি প্রণয়নের চেষ্টা চলে। প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যনীতি এখন প্রতিবন্ধী শিশুর মতই দুর্বল। জন-আকাঙ্ৰার পরিপূরক দাতামুক্ত একটি স্বাস্থ্যনীতি ও তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছেন দেশবাসী।
No comments