চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলো শিবিরের দখলে- কোচিং সেন্টারে চলে মগজ ধোলাই, চবির পাশে কটেজে আসত্মানা
চট্টগ্রাম অফিস চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলো শিবিরের দখলে। বিশেষ করে ছাত্রাবাসসহ প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে রাখতে সব সময় শিবিরের কমর্ীরা তৎপর থাকে। কিন্তু দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে শিবিরের কারণেই বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের সুবিশাল হোস্টেল।
এদিকে, নগরীর ঐতিহ্যবাহী কোচিং সেন্টারগুলোও চলে শিবিরের তত্ত্বাবধানে। পড়ালেখার নামে এসব কোচিং সেন্টারে শিৰা দিতে ব্যসত্ম থাকে শিবিরের নেতাকমর্ীরা। সে ফাঁকে চালানো হয় মগজ ধোলাইসহ দলে ভেড়ানোর নানা কৌশল। এসব এড়াতে প্রয়োজন পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে রদবদলের পাশাপাশি শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুলিশের নজরদারি। শিবিরের খাতায় নাম লেখালেই বাইতুল মালে টাকা জমা দিতে হবে শিল্পপতি থেকে সাধারণ সমর্থককেও। অর্থের অন্যতম উৎস হচ্ছে এ বাইতুল মাল। সারাদেশে বাইতুল মালের মাধ্যমে যেমন শিবিরের ছত্রছায়ায় থাকাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়, তেমনি ছাত্রবাসসহ বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে থাকা হতদরিদ্র শিৰাথর্ীদের আয়ত্ত করতে তাদের পেছনে ব্যয় করা হয় এসব অর্থ। মূলত শিবির সমর্থক বা কমর্ীর চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় অপরিচিত ও নবাগত শিৰাথর্ীদের।এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘিরে গড়ে ওঠা বেসরকারী মালিকানাধীন কটেজ শিবিরের নিরাপদ আসত্মানা। এসব কটেজে শিবির ক্যাডাররা অস্ত্রের সংস্থানসহ বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ রাখে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির ঘটনায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদনত্মে শিবির কমর্ীরাই তালিকায় চলে আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে শিবির অভিযান চালানোর জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে কটেজগুলোকে ব্যবহার করছে। কিন্তু এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে অভিযান চালালেও বেসরকারী কটেজগুলো থাকে অভিযানের বাইরে। ফলে নিরাপদ আসত্মানা হিসেবে খ্যাত এসব কটেজ থেকে পরবতর্ীতে শিবির কমর্ীরা অস্ত্রের যোগানসহ বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে সাধারণ শিৰাথর্ীদের ওপর হামলে পড়ে।
গত ১৮ জানুয়ারি নগরীর আগ্রাবাদ মিস্ত্রী পাড়ার হক ভিলা থেকে গ্রেফতারকৃত ১২ শিবির ক্যাডারকে আজ আদালতে হাজির করা হবে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুরের জন্য শুনানির নির্ধারিত দিন ধার্য রয়েছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে শিবিরের কমর্ী-সমর্থকরা আদালতকে টার্গেট করেছে। হাজার হাজার শিবির সমর্থক এ সময় আদালতে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের নজরদারিও অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। ছাত্রাবাসে থাকা শিৰাথর্ীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিৰা প্রতিষ্ঠানের শিৰাথর্ী। মূলত এরা শিবির কেন্দ্রিক শিৰা প্রতিষ্ঠানের শিৰাথর্ী নয়। তবে শিবিরের বাইতুল মালের অর্থ দিয়েই এদেরকে অতীতে পড়ালেখা শেখানোসহ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শিবিরের এ ধরনের কমর্ীরা সাধারণত টেরর টাইপের হয়ে থাকে। কারণ বাইতুল মাল থেকে খরচ করা অর্থে এদেরকে গড়ে তোলা হয়েছে শুধুমাত্র অস্ত্রের ট্রেনিংসহ সাহসী পদৰেপ নিয়ে শিবিরকে বিভিন্ন ছাত্রাবাস দখলে সহায়তা করার জন্য।
নগরীর চকবাজার কেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী কোচিং সেন্টার হিসেবে খ্যাত প্রবাহ কোচিং সেন্টারে স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রিক পাঠদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং হিসেবে শিবিরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ইনডেঙ্ কোচিং সেন্টার এবং মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং হিসেবে সবার কাছে নামডাক রয়েছে রেটিনা নামক কোচিং সেন্টারটি। এছাড়াও নগরীর আলজাবেরী ইনস্টিটিউট, দারম্নল মারম্নফ স্কুল, দারম্নল ইরফান স্কুল এন্ড কলেজসহ শতাধিক শিৰা প্রতিষ্ঠান ও শাখা শিবিরের তত্ত্বাবধান ও আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে। মূলত চকবাজার গনি বেকারি সংলগ্ন দারম্নল উলুম মাদ্রাসাই শিবিরের মূল শক্তি। কারণ এ মাদ্রাসার শিৰক ও সিনিয়র শিৰাথর্ীদের তত্ত্বাবধানেই নগরীতে এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করছে শিবির।
১৯৮৭ সালে সর্বপ্রথম শিবিরের গোড়া পত্তন শুরম্ন হয় চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজ থেকে। এক রাতেই শিবিরের প্রায় দু'শতাধিক কমর্ী-সমর্থক অস্ত্রের মহড়া দিয়ে হোস্টেল থেকে ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বের করে দেয়। পরদিন থেকেই শিবিরের তত্ত্বাবধানে চলে পুরো কমার্স কলেজ। টুঁ-শব্দ করার জো ছিল না অধ্যৰ থেকে পিয়ন পর্যনত্ম কারোরই।
১৯৮৭ সালের পরে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শিবিরের দখলে যাবার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অস্ত্রের মহড়া থেকে শুরম্ন করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ করে নামাজের পর শিবির কমর্ীরা সমর্থক তৈরিতে ব্যসত্ম থাকে। এ ৰেত্রে চা আপ্যায়নসহ নানা কৌশল এমনকি সমাবেশে থাকা শিৰাথর্ীদের হ্যান্ডনোটসহ শিৰার উপকরণ দিয়ে সহায়তা করার মতো নজিরও তারা রেখেছে। এরপরও তাদের টার্গেট নগরীর সকল শিৰা প্রতিষ্ঠান যে করেই হোক তাদের আয়ত্তে আনা। উলেস্নখ্য, নগরীতে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী দেড় শতাধিক শিবির কেন্দ্রিক ছাত্রাবাস রয়েছে। একটি ঘটনার পর পুলিশের এ ধরনের তথ্য শুধু নগরবাসীই নয় দেশবাসীর মধ্যেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এসব ছাত্রাবাস পুলিশের নজরদারিতে ছিল না কখনও।
এদিকে, গত ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কেন্দ্রিক শিবিরের একটি গ্রম্নপ খুলশী এলাকায় একটি ছাত্রাবাস ভাড়া নেয়। বিষয়টি খুলশী থানার ওসি ইফতেখার হাসানের জানা থাকলেও কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তবে গত ১৮ জানুয়ারির ঘটনার পর ঐ ওসি দম্ভের সঙ্গে মিডিয়াকে বিষয়টি জানালেও ফাঁস হয়ে গেছে সেখানে অভিযান না চালানোর তথ্য। মূলত চট্টগ্রামের বারোটি থানার কর্ণধারসহ সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনেকেই জামায়াত-বিএনপির চাটুকার হিসেবে পরিচিত।
No comments