ফিলিপাইনের মুসলমানদের সুদিনের আভাস by জহির উদ্দিন বাবর
দীর্ঘদিন পর ফিলিপাইনের মুসলমানদের জীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তার আভাস দেখা দিয়েছে। গত মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো ঘোষণা দিয়েছেন, ফিলিপাইন সরকার ও দেশটির সবচেয়ে বড় মুসলিম গোষ্ঠী মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের (এমআইএলএফ) মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতা চেষ্টার পর উভয় পক্ষ একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষরে রাজি হয়েছে।
শিগগিরই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে দেশটির মিন্দানাও অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, মিন্দানাওয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মোরো বিদ্রোহীরা একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠনের সুযোগ পাবে। মোরো অধ্যুষিত ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নাম হবে বাংসামোরো। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও অঞ্চলে মুসলিম মোরোদের উপরাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে এমআইএলএফ প্রায় ৪০ বছর ধরে সশস্ত্র লড়াই করে আসছে। এ লড়াইয়ে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির সার্বিক অর্থনীতি। এ নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণ ফিলিপাইনে বিরাজ করে জটিল এক পরিস্থিতি। সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য জীবনধারণ ছিল খুবই দুর্বিষহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে মুসলিম স্বাধীনতাকামী আবু সায়াফ গ্রুপ এবং সরকারি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ১৫৭১ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দ্বাদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফিলিপাইনে ইসলাম পেঁৗছে। পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীরা এবং মালে দ্বীপপুঞ্জের বেশ কয়েকটি সুলতানাত সরকার থেকে তাদের অনুসারীদের আগমনের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম আসে। ১৩৮০ সালে করিম উল মাখদুম নামক প্রথম আরব ব্যবসায়ী ফিলিপাইনের সুলু দ্বীপপুঞ্জ ও জোলোতে পেঁৗছেন এবং এরপর দেশটিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৩৯০ সালে মিনাংকাবাউর প্রিন্স রাজাহ বাগুইনদা এবং তার অনুসারীরা দ্বীপগুলোতে ইসলাম প্রচার করেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিন্দানাওয়ের সিমুনুলে প্রতিষ্ঠিত শেখ করিমাল মাখদুম মসজিদ হচ্ছে ফিলিপাইনের প্রথম মসজিদ। পরবর্তীকালে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণকারী আরব মিশনারিদের বসতি স্থাপনের ফলে ফিলিপাইনে ইসলাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রতিটি বসতি তখন শাসন করতেন একজন দাতু রাজাহ বা সুলতান। সে সঙ্গে ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় কয়েকটি ইসলামী প্রদেশ, যেমন_ মাগুইনদানাও সুলতানাত, সুলু সুলতানাত এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের অন্যান্য অংশে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য সুলতানাত। পরবর্তী শতাব্দীর মধ্যে ফিলিপাইনের দক্ষিণ প্রান্তের সুলু দ্বীপগুলোতে বিজয় অর্জিত হয় এবং সেখানকার সর্বপ্রাণবাদী জনগোষ্ঠী নবউৎসাহ-উদ্দীপনায় ইসলাম গ্রহণ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে ভিসাইয়াসের (মধ্য ফিলিপাইন) বেশিরভাগ এবং লুজনের (উত্তর ফিলিপাইন) অর্ধেক ও মিন্দানাওয়ের দ্বীপগুলো বোর্নিওর বিভিন্ন মুসলিম সুলতানাতের অংশে পরিণত হয় এবং বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী ইসলাম গ্রহণ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইসলাম সুলু দ্বীপপুঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেখান থেকে মিন্দানাওয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫৬৫ সালের মধ্যে ইসলাম ম্যানিলা এলাকায় পেঁৗছে। ১৫৭১ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে স্পেনিশ উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা চলে। ১৫৭১ সালে ফিলিপাইনের বর্তমান রাজধানী ম্যানিলায় মুসলিমদের নেতাকে হত্যা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে দেশটির বেশিরভাগ স্পেনিশদের হাতে চলে যায়। তারা তিন শতাধিক বছর ধরে ফিলিপাইনকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে রাখে।
১৯৪১-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিপাইন স্বাধীন হয়। মুসলিমরা তখনও খ্রিস্টানদের দিক থেকে হুমকি অনুভব করে এবং তারা এই মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করে যে, দক্ষিণ ফিলিপাইন উত্তরের তুলনায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে অদ্যাবধি সৌদি আরবসহ সারাবিশ্বের মুসলিমরা দক্ষিণ ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমদের জীবনধারার ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সৌদি আরব এ দেশের মুসলিমদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে এবং মুসলিম বিশ্ব দক্ষিণ ফিলিপাইনের স্থায়ী সমাধান হিসেবে অঞ্চলটির পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়ে থাকে। ১৯৬৮ সালে ফিলিপাইনের জাতীয় সেনাবাহিনী কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই বিপুলসংখ্যক মোরো মুসলিম সৈন্যকে হত্যা করে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারি সেনাবাহিনী এবং মোরো মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘাত শুরু হয়। আশা করা হচ্ছে, নতুন চুক্তির ফলে সেখানকার মুসলমানরা স্বস্তিতে ধর্মকর্ম চর্চায় মনোনিবেশ করতে পারবে।
zahirbabor@yahoo.com
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ১৫৭১ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দ্বাদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফিলিপাইনে ইসলাম পেঁৗছে। পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীরা এবং মালে দ্বীপপুঞ্জের বেশ কয়েকটি সুলতানাত সরকার থেকে তাদের অনুসারীদের আগমনের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম আসে। ১৩৮০ সালে করিম উল মাখদুম নামক প্রথম আরব ব্যবসায়ী ফিলিপাইনের সুলু দ্বীপপুঞ্জ ও জোলোতে পেঁৗছেন এবং এরপর দেশটিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৩৯০ সালে মিনাংকাবাউর প্রিন্স রাজাহ বাগুইনদা এবং তার অনুসারীরা দ্বীপগুলোতে ইসলাম প্রচার করেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিন্দানাওয়ের সিমুনুলে প্রতিষ্ঠিত শেখ করিমাল মাখদুম মসজিদ হচ্ছে ফিলিপাইনের প্রথম মসজিদ। পরবর্তীকালে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণকারী আরব মিশনারিদের বসতি স্থাপনের ফলে ফিলিপাইনে ইসলাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রতিটি বসতি তখন শাসন করতেন একজন দাতু রাজাহ বা সুলতান। সে সঙ্গে ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় কয়েকটি ইসলামী প্রদেশ, যেমন_ মাগুইনদানাও সুলতানাত, সুলু সুলতানাত এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের অন্যান্য অংশে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য সুলতানাত। পরবর্তী শতাব্দীর মধ্যে ফিলিপাইনের দক্ষিণ প্রান্তের সুলু দ্বীপগুলোতে বিজয় অর্জিত হয় এবং সেখানকার সর্বপ্রাণবাদী জনগোষ্ঠী নবউৎসাহ-উদ্দীপনায় ইসলাম গ্রহণ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে ভিসাইয়াসের (মধ্য ফিলিপাইন) বেশিরভাগ এবং লুজনের (উত্তর ফিলিপাইন) অর্ধেক ও মিন্দানাওয়ের দ্বীপগুলো বোর্নিওর বিভিন্ন মুসলিম সুলতানাতের অংশে পরিণত হয় এবং বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী ইসলাম গ্রহণ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইসলাম সুলু দ্বীপপুঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেখান থেকে মিন্দানাওয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫৬৫ সালের মধ্যে ইসলাম ম্যানিলা এলাকায় পেঁৗছে। ১৫৭১ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনে স্পেনিশ উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা চলে। ১৫৭১ সালে ফিলিপাইনের বর্তমান রাজধানী ম্যানিলায় মুসলিমদের নেতাকে হত্যা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে দেশটির বেশিরভাগ স্পেনিশদের হাতে চলে যায়। তারা তিন শতাধিক বছর ধরে ফিলিপাইনকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে রাখে।
১৯৪১-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিপাইন স্বাধীন হয়। মুসলিমরা তখনও খ্রিস্টানদের দিক থেকে হুমকি অনুভব করে এবং তারা এই মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করে যে, দক্ষিণ ফিলিপাইন উত্তরের তুলনায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে অদ্যাবধি সৌদি আরবসহ সারাবিশ্বের মুসলিমরা দক্ষিণ ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমদের জীবনধারার ওপর যেভাবে হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সৌদি আরব এ দেশের মুসলিমদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে এবং মুসলিম বিশ্ব দক্ষিণ ফিলিপাইনের স্থায়ী সমাধান হিসেবে অঞ্চলটির পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়ে থাকে। ১৯৬৮ সালে ফিলিপাইনের জাতীয় সেনাবাহিনী কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই বিপুলসংখ্যক মোরো মুসলিম সৈন্যকে হত্যা করে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারি সেনাবাহিনী এবং মোরো মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘাত শুরু হয়। আশা করা হচ্ছে, নতুন চুক্তির ফলে সেখানকার মুসলমানরা স্বস্তিতে ধর্মকর্ম চর্চায় মনোনিবেশ করতে পারবে।
zahirbabor@yahoo.com
No comments