তোমাদের লেখা- পরির দেশে by লাইকা ইসরাত তরফদার

এক দেশে ছিল এক মেয়ে। তার নাম রিয়া। সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত। সে প্রায়ই মায়ের কাছে পরিদের গল্প শুনত। মা বলতেন, পরিরা খুবই সুন্দর। ওদের পাখা আছে। তিনি আরও বলতেন, পরিরা মেয়ে। পরির দেশ সাজানো-গোজানো। পরির দেশের ঘরবাড়ি, রাস্তা, বাগান, ফুল—সবই অনেক সুন্দর।
পরিরা খুব ভালো। ওরা মানুষকে ভালোবাসে। আর যে মানুষকে পরিদের খুব ভালো লাগে, তাকে ওদের রাজ্যে নিয়ে যায় এবং বন্ধুত্ব করে।
এসব শুনে রিয়ার খুব ইচ্ছে হয় পরিদের দেশে যাওয়ার এবং ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার। রিয়া একদিন মাকে জিজ্ঞেস করে, মা, পরিদের কোথায় পাওয়া যায়?
মা বলেন, রাতের বেলা পরিরা ফুলবাগানে আসে, তখন ওদের দেখা যায়। এই কথা শুনে রিয়া প্রায়ই রাতের বেলা জানালা খুলে ফুলবাগানের দিকে তাকিয়ে থাকত কিন্তু পরিদের দেখত না।
হঠাৎ একদিন রিয়া রাতের বেলায় শুয়ে ছিল। এমন সময় তাদের বাগান থেকে কিছু মেয়ের কথা শুনতে পায়। রিয়া আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়ে দেখে দুটি পরি তাদের বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। পরিরা রিয়াকে দেখে বলল, তুমি কে? রিয়া বলল, আমি এই বাগানের মালিক। পরিরা বলল, তুমি এত রাতে একা একা কী করছ? রিয়া বলল, আমি তোমাদের কথা শুনে বেরিয়ে এসেছি। তোমাদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। মায়ের কাছে তোমাদের অনেক গল্প শুনেছি। রিয়া পরিদের বলল, তোমরা কি আমার বন্ধু হবে? পরিরা বলল, ঠিক আছে। আমাদের তোমাকে খুব ভালো লেগেছে। তারপর পরিরা প্রায়ই রিয়ার সঙ্গে দেখা করত। একদিন রাতে পরিরা রিয়াকে তাদের দেশে নিয়ে গেল। রিয়া পরিদের দেশ দেখে বলল, তোমাদের দেশ এত সুন্দর! তারপর রিয়া পরিদের দেশ ঘুরে দেখল।
এভাবে রিয়া প্রায় প্রতিরাতেই পরির দেশে যেত এবং সকাল হওয়ার আগে চলে আসত। কিন্তু রিয়া তার মাকে এসব ব্যাপারে কিছুই বলেনি। হঠাৎ একদিন রিয়ার আসতে দেরি হলো। মা নামাজের জন্য ওঠে দেখলেন রিয়া বাড়িতেই নেই। মা অনেক কান্নাকাটি করলেন। হঠাৎ মা রিয়াকে দেখলেন পরিদের সঙ্গে বাগানে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। মা বাগানে দৌড়ে গিয়ে রিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, রিয়া, রাতে তুই কোথায় গিয়েছিলি? রিয়া বলল, পরির দেশে গিয়েছিলাম।
মা বললেন, আর কখনো পরির সঙ্গে না যেতে এবং পরিদের বললেন আর কখনো রিয়ার কাছে না আসতে। রিয়া বুঝত পারল তার মা তাকে না পেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তাই রিয়া আর কখনো পরিদের সঙ্গে গেল না এবং পরিরাও আর কখনো এল না।
বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
হবিগঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.