কেন নতুন ফারাও হতে চান মুরসি? by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
ঢালাওভাবে ক্ষমতার পরিধি বাড়ানোর ডিক্রি জারি করে যেন ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুড়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। তাঁর এ ডিক্রিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মতলব বলে অভিহিত করেছে বিরোধীরা। এতে সমর্থন দিয়ে শরিক হয়েছে বহু সাধারণ মানুষ।
ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ঐতিহাসিক বিপ্লবের সূতিকাগার কায়রোর তাহরির স্কয়ার আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে বিদ্রোহের জোয়ারে।
কেবল তাহরির স্কয়ারই নয়, বলতে গেলে সারা মিসরেই এখন মুরসির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এ ডিক্রি মুরসির জন্য একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক জুয়া। সম্প্রতি ফিলিস্তিন-শাসিত গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়ান মুরসি। বলা হচ্ছে, সেই সাফল্যে উৎসাহিত হয়েই দেশে নিজের ক্ষমতা আরও সুসংহত করার উদ্যোগ নেন তিনি। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দিনই (২২ নভেম্বর) এ কাজ করেন মিসরীয় প্রেসিডেন্ট। তাঁর এই উদ্যোগের মধ্যে অনেকেই দেখছেন অতি আত্মবিশ্বাস এমনকি রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার ছাপ।
মিসরের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ও সাধারণ মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলছে, এ হচ্ছে মুরসির একচ্ছত্র ক্ষমতা বাগানোর মতলব। বিচার বিভাগকে থোড়াই কেয়ার করে মুরসিই যদি সব ক্ষমতার মালিক বনে যান, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের কী দরকার ছিল? তাহলে হোসনি মোবারককেই বা দোষ দিয়ে লাভ কী? বিরোধী নেতা মোহাম্মদ এল বারাদি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ডিক্রি দিয়ে মুরসি ‘এ যুগের ফারাও’ অর্থাৎ প্রাচীন মিসরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সম্রাটে পরিণত হচ্ছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট মুরসি জোরালো কণ্ঠে বলছেন, এ ডিক্রি জারি করে ক্ষমতার রাস আরও শক্ত করার কোনো খায়েশ তাঁর নেই। তাঁর এ প্রয়াস বরং বিপ্লবের সাফল্য ও দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য।
বলা হচ্ছে, মুরসি বিশেষ করে চেয়েছেন যাতে আদালত আবার সংবিধান প্রণয়নরত গণপরিষদ ভেঙে দিতে না পারেন। আদালত সেদিকেই এগোচ্ছিলেন বলে খবর রটেছিল। আর তা হলে মিসরের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা গুরুতর রকমের ধাক্কা খেত। আদালতের বিচারকদের বেশির ভাগই মোবারকের আমলের নিয়োগ পাওয়া। এসব নিয়োগ রাজনৈতিক না হলেও জনগণের ধারণা, তাঁরা এখনো মোবারক সরকারের প্রতি অনুগত।
বরখাস্ত হওয়া প্রধান অভিশংসকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাঁর বদলে নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধান অভিশংসক ঝটিকাবেগে ক্ষমতাচ্যুত মোবারক, তাঁর পরিবার ও সরকারের লোকজনের কথিত দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত নতুন করে শুরু করেন। মোবারক সরকারের সময়কার দুর্নীতি এবং বিপ্লবের সময় প্রাণ হারানো বিক্ষোভকারীদের হত্যার বেশ কিছুসংখ্যক মামলার ব্যাপারে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মিশ্র ফলাফল। এতে করে অভিশংসকের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হোসনি মোবারক নিজে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ডিক্রি জারি ও প্রধান অভিশংসককে বরখাস্ত করা উভয় বিষয়ে মুরসি অনেকের সমর্থন পাবেন। কিন্তু যেভাবে তিনি কাজটি করেছেন, সমালোচনা হচ্ছে সেটা নিয়েই। অন্য কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বৈরতান্ত্রিকভাবে ডিক্রিটা জারি করেন মুরসি। বিষয়টি হোসনি মোবারকের কথাই মনে করিয়ে দেয়। সত্যি বলতে, তিনি নিজের হাতে যে ক্ষমতা নিয়েছেন, মোবারকও কখনো এত ক্ষমতা নেননি। মুরসির হাতে এখন নজিরবিহীন, প্রায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব।
আর বিশেষ করে বিচার বিভাগকে পাশ কাটানোর ঘটনা ১৯৫৪ সালে ‘ফ্রি অফিসারদের’ ক্ষমতা দখলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ফ্রি অফিসাররাই মিসরের বেসামরিক প্রশাসনের ছদ্মাবরণে ছয় দশকের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন। এ কারণেই মিসরীয়দের অনেকের আশঙ্কা, মুরসির আসল উদ্দেশ্য বিপ্লবকে রক্ষা করা নয়, তা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের হাত শক্তিশালী করা। সুনির্দিষ্ট করে একটি সন্দেহও প্রকাশ করা হয়েছে। তা হলো, গণপরিষদকে দিয়ে একটি ইসলামপন্থী সংবিধান রচনা করিয়ে নেওয়া। সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত গণপরিষদে ইসলামপন্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আর এ কারণেই মুরসির এ উদ্যোগ দেশে এমন তিক্ত এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক বিভেদের সূত্রপাত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি সংকট দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক পক্ষে থাকবে ইসলামপন্থীরা, অন্য পক্ষে একসঙ্গে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী ও সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানরা। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত এটি সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
তবে সমস্যা সমাধানে মুরসিও বসে নেই। সংকট নিয়ে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মুরসিকে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই সংকট কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন কাজ নয়। তিনি যে ডিক্রি জারি করেছেন, তা সংশোধন করে কেবল বিচার বিভাগকে এর ঊর্ধ্বে রাখার ঘোষণা দিলেই হবে। অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত নয়। প্রয়োজনে বিচার বিভাগ এর ন্যায্যতা যাচাই করে আরেকটা সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা হয়তো একটু অতিরঞ্জিত। তবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে মিসর আরেকটি ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত। এটি এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার লড়াই, যে দেশটি কি না প্রায়ই বাকি মধ্যপ্রাচ্যকে পথ দেখায়।
এ পর্যন্ত পথচলা
গণবিপ্লবে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। মোবারক থেকে মুরসিতে উত্তরণের অন্তর্বর্তী সময়টি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করছিল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদ। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে কম টালবাহানা করেনি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের এই পরিষদ। মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে পরিষদ এক অন্তর্বর্তী সাংবিধানিক অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও সেনাবাহিনীর বাজেট বিষয়ে সামরিক কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। বলতে গেলে, প্রেসিডেন্টকে তাদের কথায়ই চলতে হতো। কিন্তু বেসামরিক নেতা মুরসির সাহসী ভূমিকা সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বানচাল করে দেয়। জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে মুরসি জেনারেলদের ক্ষমতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসেন। গত ১২ আগস্ট সামরিক পরিষদের অন্তর্বর্তী অধ্যাদেশ বাতিল হয়ে যায়। এরপর প্রেসিডেন্ট মুরসি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ হোসেইন তানতাউয়িসহ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠান। এরপর থেকে প্রশাসন পুরোটাই মুরসির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
কেবল তাহরির স্কয়ারই নয়, বলতে গেলে সারা মিসরেই এখন মুরসির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এ ডিক্রি মুরসির জন্য একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক জুয়া। সম্প্রতি ফিলিস্তিন-শাসিত গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়ান মুরসি। বলা হচ্ছে, সেই সাফল্যে উৎসাহিত হয়েই দেশে নিজের ক্ষমতা আরও সুসংহত করার উদ্যোগ নেন তিনি। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দিনই (২২ নভেম্বর) এ কাজ করেন মিসরীয় প্রেসিডেন্ট। তাঁর এই উদ্যোগের মধ্যে অনেকেই দেখছেন অতি আত্মবিশ্বাস এমনকি রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার ছাপ।
মিসরের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ও সাধারণ মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলছে, এ হচ্ছে মুরসির একচ্ছত্র ক্ষমতা বাগানোর মতলব। বিচার বিভাগকে থোড়াই কেয়ার করে মুরসিই যদি সব ক্ষমতার মালিক বনে যান, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের কী দরকার ছিল? তাহলে হোসনি মোবারককেই বা দোষ দিয়ে লাভ কী? বিরোধী নেতা মোহাম্মদ এল বারাদি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ডিক্রি দিয়ে মুরসি ‘এ যুগের ফারাও’ অর্থাৎ প্রাচীন মিসরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সম্রাটে পরিণত হচ্ছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট মুরসি জোরালো কণ্ঠে বলছেন, এ ডিক্রি জারি করে ক্ষমতার রাস আরও শক্ত করার কোনো খায়েশ তাঁর নেই। তাঁর এ প্রয়াস বরং বিপ্লবের সাফল্য ও দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য।
বলা হচ্ছে, মুরসি বিশেষ করে চেয়েছেন যাতে আদালত আবার সংবিধান প্রণয়নরত গণপরিষদ ভেঙে দিতে না পারেন। আদালত সেদিকেই এগোচ্ছিলেন বলে খবর রটেছিল। আর তা হলে মিসরের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা গুরুতর রকমের ধাক্কা খেত। আদালতের বিচারকদের বেশির ভাগই মোবারকের আমলের নিয়োগ পাওয়া। এসব নিয়োগ রাজনৈতিক না হলেও জনগণের ধারণা, তাঁরা এখনো মোবারক সরকারের প্রতি অনুগত।
বরখাস্ত হওয়া প্রধান অভিশংসকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাঁর বদলে নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধান অভিশংসক ঝটিকাবেগে ক্ষমতাচ্যুত মোবারক, তাঁর পরিবার ও সরকারের লোকজনের কথিত দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত নতুন করে শুরু করেন। মোবারক সরকারের সময়কার দুর্নীতি এবং বিপ্লবের সময় প্রাণ হারানো বিক্ষোভকারীদের হত্যার বেশ কিছুসংখ্যক মামলার ব্যাপারে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মিশ্র ফলাফল। এতে করে অভিশংসকের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হোসনি মোবারক নিজে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ডিক্রি জারি ও প্রধান অভিশংসককে বরখাস্ত করা উভয় বিষয়ে মুরসি অনেকের সমর্থন পাবেন। কিন্তু যেভাবে তিনি কাজটি করেছেন, সমালোচনা হচ্ছে সেটা নিয়েই। অন্য কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বৈরতান্ত্রিকভাবে ডিক্রিটা জারি করেন মুরসি। বিষয়টি হোসনি মোবারকের কথাই মনে করিয়ে দেয়। সত্যি বলতে, তিনি নিজের হাতে যে ক্ষমতা নিয়েছেন, মোবারকও কখনো এত ক্ষমতা নেননি। মুরসির হাতে এখন নজিরবিহীন, প্রায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব।
আর বিশেষ করে বিচার বিভাগকে পাশ কাটানোর ঘটনা ১৯৫৪ সালে ‘ফ্রি অফিসারদের’ ক্ষমতা দখলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ফ্রি অফিসাররাই মিসরের বেসামরিক প্রশাসনের ছদ্মাবরণে ছয় দশকের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন। এ কারণেই মিসরীয়দের অনেকের আশঙ্কা, মুরসির আসল উদ্দেশ্য বিপ্লবকে রক্ষা করা নয়, তা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের হাত শক্তিশালী করা। সুনির্দিষ্ট করে একটি সন্দেহও প্রকাশ করা হয়েছে। তা হলো, গণপরিষদকে দিয়ে একটি ইসলামপন্থী সংবিধান রচনা করিয়ে নেওয়া। সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত গণপরিষদে ইসলামপন্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আর এ কারণেই মুরসির এ উদ্যোগ দেশে এমন তিক্ত এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক বিভেদের সূত্রপাত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি সংকট দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক পক্ষে থাকবে ইসলামপন্থীরা, অন্য পক্ষে একসঙ্গে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী ও সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানরা। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত এটি সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
তবে সমস্যা সমাধানে মুরসিও বসে নেই। সংকট নিয়ে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মুরসিকে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই সংকট কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন কাজ নয়। তিনি যে ডিক্রি জারি করেছেন, তা সংশোধন করে কেবল বিচার বিভাগকে এর ঊর্ধ্বে রাখার ঘোষণা দিলেই হবে। অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত নয়। প্রয়োজনে বিচার বিভাগ এর ন্যায্যতা যাচাই করে আরেকটা সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা হয়তো একটু অতিরঞ্জিত। তবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে মিসর আরেকটি ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত। এটি এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার লড়াই, যে দেশটি কি না প্রায়ই বাকি মধ্যপ্রাচ্যকে পথ দেখায়।
এ পর্যন্ত পথচলা
গণবিপ্লবে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। মোবারক থেকে মুরসিতে উত্তরণের অন্তর্বর্তী সময়টি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করছিল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিষদ। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে কম টালবাহানা করেনি শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের এই পরিষদ। মুরসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে পরিষদ এক অন্তর্বর্তী সাংবিধানিক অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও সেনাবাহিনীর বাজেট বিষয়ে সামরিক কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। বলতে গেলে, প্রেসিডেন্টকে তাদের কথায়ই চলতে হতো। কিন্তু বেসামরিক নেতা মুরসির সাহসী ভূমিকা সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বানচাল করে দেয়। জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে মুরসি জেনারেলদের ক্ষমতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসেন। গত ১২ আগস্ট সামরিক পরিষদের অন্তর্বর্তী অধ্যাদেশ বাতিল হয়ে যায়। এরপর প্রেসিডেন্ট মুরসি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ হোসেইন তানতাউয়িসহ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠান। এরপর থেকে প্রশাসন পুরোটাই মুরসির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
No comments