কুষ্টিয়ায় ওয়াসীমকে হয়রানি-রোকেয়ার মৃত্যুর দায় কে নেবে?
মামলা নেই, অভিযোগ নেই, এজাহার নেই, তবু পথিমধ্যে সাধারণ মানুষকে আটকে তল্লাশি ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হয়রানিমূলক হেফাজতের ঘটনা অহরহই ঘটে। এমনই হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের।
আত্মীয়ের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যাওয়ার সময় রাতে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে মারাত্মক আহত করেছিল। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু পরে প্রকৃত ঘটনা জানা গিয়েছিল এবং ব্যাপক সমালোচনার মুখে দায়ী পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। ঢাকার আবদুল কাদের বা কুষ্টিয়ার ওয়াসীমরা অহরহই এমন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা দিন-রাত সাধারণ মানুষকে তল্লাশি করে চলেছে, এমন দৃশ্য এখন চোখ সওয়া হয়ে গেছে। এ কথা সত্য, পুলিশের এমন অভিযানের প্রতি আইনের সায় রয়েছে। সন্দেহভাজন যে কাউকে তল্লাশি, গ্রেফতার ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত গোয়েন্দা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পথচারীদের ধরে ধরে কেন এমন হয়রানি করতে হবে, তা বোধগম্য নয়। আবার সে তল্লাশির মাধ্যমে বারবার কেন নিরপরাধ মানুষই হয়রানি ও গ্রেফতারের শিকার হবেন তা বোঝাও কষ্টকর। অপরাধ দমনে ও অপরাধী চিহ্নিতকরণে পুলিশের দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব থাকার কথা। কে সাধারণ পথচারী, কে সন্ত্রাসী তা বোঝার দক্ষতা অর্জিত হওয়া উচিত। তারও চেয়ে বড় কথা, সংগঠিত ও বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী অপরাধীদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পুলিশের নখদর্পণে থাকার কথা। কিন্তু সেসব কাজে না লাগিয়ে পুলিশ কেন সাধারণ মানুষকে ধরে? অভিযোগ, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে টুপাইস কামানোর উদ্দেশ্যেই এমন করা হয়। বুধবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ওয়াসীম। তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী হাসপাতালে ছিলেন। জরুরি চিকিৎসা ও রক্তের প্রয়োজনে ওয়াসীম দ্রুত পেঁৗছাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার পথ রোধ করে। টহলভ্যানে উঠিয়ে আটকে রাখে। অনেক দেরিতে হাসপাতালে পেঁৗছে ওয়াসীম আর বাঁচাতে পারেননি রোকেয়াকে। সন্তান জন্ম নিলেও মার মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হলো, পুলিশ কেন ওয়াসীমের যাত্রায় দেরি করিয়ে দিল? কেন এমন হয়রানির ঘটনা বারবার ঘটছে? ওয়াসীমের স্ত্রীর মৃত্যুর দায় কে নেবে? আমরা আশা করি, এমন হয়রানির ঘটনা না ঘটুক। পুলিশ আরেকটু মানবিক আচরণ করুক। আর হাসপাতালেও চিকিৎসার্থীর স্বজনদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। এটুকু মানবিক আচরণ কি খুব বড় চাওয়া?
No comments