হে আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
গত সপ্তাহে আশুলিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে ১১১ জন পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে ১৬ জন। একদিনে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে মুহ্যমান হয়ে যায় পুরো দেশ।
মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে গত মঙ্গলবার শোক দিবস পালন করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ ও জোহরের নামাজের পর মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়। এ ছাড়া নিহতদের আত্মার শান্তির জন্য অন্য ধর্মের উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনা হয়।
বিপদ থেকে আমরা বাঁচতে চাই। তবে সফল হই না। বিপদ কোনো সময় বলে-কয়ে আসে না বলে মানুষ বিপদ সম্বন্ধে প্রায়ই উদাসীন থাকে। তবে এটা ঠিক, কিছু বিপদের কারণ মনুষ্য সৃষ্টি আর কিছু প্রাকৃতিক। আশুলিয়ার অগি্নকাণ্ডের কথাই ধরা যাক। শোনা যাচ্ছে, এ কারখানা কাজের পরিবেশ উপযোগী ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে এই মৃত্যুকূপ তৈরি হলো। অন্যায়ভাবে যারা যেভাবে এই কারখানা তৈরিতে নূ্যনতম সহযোগিতা করেছে তাদের প্রত্যেকেই অপরাধী। দুনিয়ায় আইনের ফাঁক গলে পার পেলেও আল্লাহর কাছে এর হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। ঠিক তেমনি ফ্লাইওভারের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও বলা যায়। সেখানে যথাযথ নির্মাণ আইন মানা হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
একটি কঠিন বাস্তবতা হলো_ কোনো বিপদ দেখা দিলেই কেবল আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি; তার সাহায্য কামনা করি। অবস্থা এমন, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সফল করার জন্যই আমাদের সব আয়োজন। এই জীবনের পরে যে একটা স্থায়ী জীবন আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মতো সময় নেই। একটু চিন্তা করে দেখুন, মৃত্যু আমাদের সঙ্গী হয়ে ঘুরছে সারাক্ষণ, যে কোনো মুহূর্তে আমার-আপনার মৃত্যু হতে পারে। কী হবে তখন? কী জবাব দেব কবরে? কী জবাব দেব হাসরে? কী উত্তর হবে মিজানে? কীভাবে পার হবো পুলসুরাতের ঘাট? তারপরই তো রয়েছে জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। তাই আসুন, আমাদের জীবন এবং মৃত্যুর পরের স্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সফল করে গড়ে তোলার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করি।
শুধু বিপদ-আপদে আল্লাহর স্মরণ নয়। প্রয়োজন সর্বদা মনে আল্লাহর ভয়কে জাগ্রত রাখা। মৃত্যু সত্য। যার মনে এই ভাবনা বিরাজমান, সে কোনো অন্যায় কাজে জড়াবে না। তাহলে অন্তত মানুষ দ্বারা সৃষ্ট বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পাব। বিপদকালে যখন আমরা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকি না, তখন শান্তি অবস্থায় অন্তত কৃতজ্ঞতার জন্য হলেও তো তাকে স্মরণ করা উচিত। বিপদের সময় যিনি সাহায্য করতে পারেন, তিনি কি বিপদ যেন না হয়, তার ব্যবস্থা করতে পারেন না? মানুষের এই অভ্যাস সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের আহ্বান করো তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা।' _সূরা আল আরাফ : ১৯৪
এ আয়াতে 'আল্লাহ ব্যতীত' শব্দ দ্বারা ওই সব ব্যক্তি, উপায়-উপকরণ ও শক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়। সেটা যাই হোক, যেভাবেই হোক।
মনে রাখতে হবে, দোয়া একটি ইবাদত। বলা হয়, দোয়া ইবাদতের প্রাণ। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে। তার কাছে দোয়া না করা, সাহায্য না চাওয়া চরম অপরাধ। তবে দোয়া হতে হবে একনিষ্ঠ মনে। কোরআনে কারিমে সূরা মুমিনের ৬০নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, 'তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।' এভাবে কোরআনের অনেক স্থানে বলা হয়েছে, আমি বান্দার অত্যন্ত কাছে অবস্থান করি, বান্দা যখন আমাকে ডাকে আমি সে ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার চাচাতো ভাই হজরত ইবনে আব্বাসকে (রা.) নসিহত করেছিলেন, হে খোকা! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব। আল্লাহকে হেফাজত করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে হেফাজত করো, তুমি তাকে সামনে পাবে। যখন প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। যখন সাহায্য কামনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাবে। জেনে রেখ! পুরো জাতি যদি তোমাকে উপকার করতে একত্র হয় তবুও তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না। তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন। এমনিভাবে পুরো জাতি যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্র হয়, তবুও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে আল্লাহ যা তোমার বিপক্ষে লিখে রেখেছেন। কলম উঁঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর দফতর শুকিয়ে গেছে।' _তিরমিজি
এ হাদিসে আল্লাহকে হেফাজত করো বলে বোঝানো হয়েছে যে, একমাত্র তার কাছেই চাও, তার কাছেই প্রার্থনা করো; তার সঙ্গে কারও শরিক করো না। জীবনচলার পথে কত ধরনের বিপদ আমাদের সামনে আসে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সব ধরনের পাপের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ নারাজ হন এমন কোনো কাজ করা যাবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো। হে রাহমানির রাহিম! তুমি আমাদের ওপর দয়া করো। হে আল্লাহ! সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে তোমার রহমত ও দয়ার ছায়ায় ঢেকে নাও। হে আল্লাহ! আমাদের যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করো। ওগো দয়াময়! আমাদের তুমি নিরাপদে ও শান্তিতে রাখ। হে মাবুদ! আমরা তোমার কাছে সব ধরনের রুক্ষ আচরণ, স্বভাব, পাপের কাজ ও অভ্যাস থেকে মুক্তি চাচ্ছি। অযাচিত লোভ, কঠোরতা, দুনিয়া ও খ্যাতিপ্রীতি থেকে মুক্তি চাচ্ছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রার্থনা কবুল করো ও আমাদের হেফাজত করো। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
muftianaet@gmail.com
বিপদ থেকে আমরা বাঁচতে চাই। তবে সফল হই না। বিপদ কোনো সময় বলে-কয়ে আসে না বলে মানুষ বিপদ সম্বন্ধে প্রায়ই উদাসীন থাকে। তবে এটা ঠিক, কিছু বিপদের কারণ মনুষ্য সৃষ্টি আর কিছু প্রাকৃতিক। আশুলিয়ার অগি্নকাণ্ডের কথাই ধরা যাক। শোনা যাচ্ছে, এ কারখানা কাজের পরিবেশ উপযোগী ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে এই মৃত্যুকূপ তৈরি হলো। অন্যায়ভাবে যারা যেভাবে এই কারখানা তৈরিতে নূ্যনতম সহযোগিতা করেছে তাদের প্রত্যেকেই অপরাধী। দুনিয়ায় আইনের ফাঁক গলে পার পেলেও আল্লাহর কাছে এর হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। ঠিক তেমনি ফ্লাইওভারের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও বলা যায়। সেখানে যথাযথ নির্মাণ আইন মানা হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
একটি কঠিন বাস্তবতা হলো_ কোনো বিপদ দেখা দিলেই কেবল আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি; তার সাহায্য কামনা করি। অবস্থা এমন, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সফল করার জন্যই আমাদের সব আয়োজন। এই জীবনের পরে যে একটা স্থায়ী জীবন আছে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মতো সময় নেই। একটু চিন্তা করে দেখুন, মৃত্যু আমাদের সঙ্গী হয়ে ঘুরছে সারাক্ষণ, যে কোনো মুহূর্তে আমার-আপনার মৃত্যু হতে পারে। কী হবে তখন? কী জবাব দেব কবরে? কী জবাব দেব হাসরে? কী উত্তর হবে মিজানে? কীভাবে পার হবো পুলসুরাতের ঘাট? তারপরই তো রয়েছে জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। তাই আসুন, আমাদের জীবন এবং মৃত্যুর পরের স্থায়ী জীবনকে সুন্দর ও সফল করে গড়ে তোলার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করি।
শুধু বিপদ-আপদে আল্লাহর স্মরণ নয়। প্রয়োজন সর্বদা মনে আল্লাহর ভয়কে জাগ্রত রাখা। মৃত্যু সত্য। যার মনে এই ভাবনা বিরাজমান, সে কোনো অন্যায় কাজে জড়াবে না। তাহলে অন্তত মানুষ দ্বারা সৃষ্ট বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পাব। বিপদকালে যখন আমরা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকি না, তখন শান্তি অবস্থায় অন্তত কৃতজ্ঞতার জন্য হলেও তো তাকে স্মরণ করা উচিত। বিপদের সময় যিনি সাহায্য করতে পারেন, তিনি কি বিপদ যেন না হয়, তার ব্যবস্থা করতে পারেন না? মানুষের এই অভ্যাস সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের আহ্বান করো তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা।' _সূরা আল আরাফ : ১৯৪
এ আয়াতে 'আল্লাহ ব্যতীত' শব্দ দ্বারা ওই সব ব্যক্তি, উপায়-উপকরণ ও শক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়। সেটা যাই হোক, যেভাবেই হোক।
মনে রাখতে হবে, দোয়া একটি ইবাদত। বলা হয়, দোয়া ইবাদতের প্রাণ। তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে। তার কাছে দোয়া না করা, সাহায্য না চাওয়া চরম অপরাধ। তবে দোয়া হতে হবে একনিষ্ঠ মনে। কোরআনে কারিমে সূরা মুমিনের ৬০নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, 'তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।' এভাবে কোরআনের অনেক স্থানে বলা হয়েছে, আমি বান্দার অত্যন্ত কাছে অবস্থান করি, বান্দা যখন আমাকে ডাকে আমি সে ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার চাচাতো ভাই হজরত ইবনে আব্বাসকে (রা.) নসিহত করেছিলেন, হে খোকা! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব। আল্লাহকে হেফাজত করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে হেফাজত করো, তুমি তাকে সামনে পাবে। যখন প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। যখন সাহায্য কামনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাবে। জেনে রেখ! পুরো জাতি যদি তোমাকে উপকার করতে একত্র হয় তবুও তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না। তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন। এমনিভাবে পুরো জাতি যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্র হয়, তবুও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে আল্লাহ যা তোমার বিপক্ষে লিখে রেখেছেন। কলম উঁঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর দফতর শুকিয়ে গেছে।' _তিরমিজি
এ হাদিসে আল্লাহকে হেফাজত করো বলে বোঝানো হয়েছে যে, একমাত্র তার কাছেই চাও, তার কাছেই প্রার্থনা করো; তার সঙ্গে কারও শরিক করো না। জীবনচলার পথে কত ধরনের বিপদ আমাদের সামনে আসে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সব ধরনের পাপের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ নারাজ হন এমন কোনো কাজ করা যাবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো। হে রাহমানির রাহিম! তুমি আমাদের ওপর দয়া করো। হে আল্লাহ! সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে তোমার রহমত ও দয়ার ছায়ায় ঢেকে নাও। হে আল্লাহ! আমাদের যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করো। ওগো দয়াময়! আমাদের তুমি নিরাপদে ও শান্তিতে রাখ। হে মাবুদ! আমরা তোমার কাছে সব ধরনের রুক্ষ আচরণ, স্বভাব, পাপের কাজ ও অভ্যাস থেকে মুক্তি চাচ্ছি। অযাচিত লোভ, কঠোরতা, দুনিয়া ও খ্যাতিপ্রীতি থেকে মুক্তি চাচ্ছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রার্থনা কবুল করো ও আমাদের হেফাজত করো। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
muftianaet@gmail.com
No comments