হাসপাতালে রোগী ফেলে ভোট উৎসব by তৌফিক মারুফ
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা যায় রোগীদের ভিড়। কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কেউ অপলক তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। সামনে একের পর এক চিকিৎসকের কক্ষ।
কোনোটির দরজা তালাবদ্ধ, কোনোটির দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে তখন হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক কেবল উপস্থিত। ডাক্তার কম, অথচ রোগী আসছে তো আসছেই।
ডেমরা থেকে আসা রোগী নাহার অনেকক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ ঝিমুনি কাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, 'হাসপাতাল খোলার দিন রোগী হালাইয়া ওনারা একখান ভোট পাতছে, এতই যদি ভোট করন লাগে, তাইলে ডাক্তারি ছাইড়্যা হেরা রাজনীতি করলেই তো পারে।'
কমবেশি এ রকম চিত্রই গতকাল দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল দেশের বড় হাসপাতালগুলোতে। আর এ রকম অবস্থা সৃষ্টি হয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। গতকাল ছিল এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিএমএ নির্বাচন ঘিরে গতকাল ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনাসহ সারা দেশেই দেখা গেছে হাসপাতাল ফাঁকা করে, রোগী ফেলে রেখে চিকিৎসকরা মেতে উঠেছেন ভোটের উৎসবে। সারা দেশে প্রায় ৩৩ হাজার চিকিৎসক ভোটার হিসেবে ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার সর্বোচ্চ- ১৩ হাজার ৩৩২ জন। ফলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের সামনে একজন নামকরা চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা হতেই বললেন, 'এই যে ভোট দিয়ে এলাম।' কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি চলে যান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রের চারপাশে ভোটার অর্থাৎ চিকিৎসকদের ভিড় বাড়তে থাকে। বেশির ভাগই আসেন হাসপাতালে রোগী ফেলে রেখে। কেউ বা মেডিক্যাল শিক্ষার ক্লাস ফেলে। সবাই আসেন ভোট দিতে। প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার এক পাশ আটকে দিয়ে চলে ভোটের কাজ। তাতে দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে রোগীদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই হাসপাতালের প্রভাবশালী কর্মকর্তা নিজেই একজন বড় প্রার্থী। তাহলে অন্য চিকিৎসকরা কী করবেন? শুধু তো ভোট দিয়ে ফিরে এলে হবে না, ভোটের জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত থাকাটাও তো তাঁদের কাছে খুব জরুরি। তাই হয়তো ভোট বাদ দিয়ে রোগী দেখতে আসার মতো সাহস অনেকেই পাননি।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগীদের ভিড় দেখা যায় অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। আবার অনেকে এসে নির্দিষ্ট চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরিবর্তে আরেকজন চিকিৎসা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আগেই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের পালা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। তাই কোনো সমস্যা হয়নি। তবে অন্য দিনের চেয়ে রোগীর সংখ্যা অর্ধেক ছিল।'
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক রাশেদুল হাসান বলেন, 'পালা করে চিকিৎসকরা ভোট দিতে গেছেন। তবু কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। বন্ধের দিনে ভোট করতে পারলে এমন সমস্যা হতো না।'
শুধু সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালেই নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও ছিল প্রায় একই ধরনের চিত্র। বিকেল ৪টায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মাসুদুল আলম তুষার কাকরাইল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে তাঁকে নেওয়া হয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সে সময় ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিলেন মাত্র একজন চিকিৎসক। তিনি রোগীর পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান। তুষারের তাৎক্ষণিক অর্থোপেডিক চিকিৎসকের দরকার হলেও এমন কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ফোন করে চিকিৎসকদের খোঁজ জানতে চাইলে সবাই বলেন, 'ভোট তো, একটু ব্যস্ত!'
সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেমের গেটের কাছে বসে ছিলেন নুরুল হক নামের এক বয়স্ক রোগী। বললেন, 'যেই স্যারের কাছে আইছি, হ্যায় নাহি ভোডে গেছে। কুনসুম আয় না আয় কইতে পারি না। এহন কী করমু হেইডা চিন্তা করতে আছেলাম।'
হাসপাতাল ছেড়ে বড়-ছোট সব চিকিৎসকই গতকাল ভিড় জমান জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে বিএমএ কার্যালয়ের সামনে। এর ফলে রোগীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হাসপাতাল ও অফিস খোলার দিন চিকিৎসকদের মতো পেশাজীবীরা রাজপথ বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করে ভোট উৎসবে মেতে ওঠায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুরো বিষয়টি উদ্ভট লাগছে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন আচরণ আশা করা যায় না। বিশেষ করে যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের এভাবে ভোটের নামে রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করা আইনগতভাবেও অন্যায়। আর চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালের রোগী দেখার দায়িত্ব ফেলে রেখে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকা চিকিৎসানীতিরও পরিপন্থী।'
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী এবং সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক নিজেও গতকালের পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, 'আসলেই ব্যাপারটি ভালো হয়নি। খোলার দিনে এ ভোটের আয়োজন না করে বন্ধের দিনে করলেই ভালো হতো।'
প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ভোটের তারিখ ও স্থান ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিএমএ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি চিকিৎসক হয়েও এমন অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এমনভাবে এটা আয়োজন করা ঠিক হয়নি। অন্য কোনো ভেন্যুতে খুব সহজেই এটা করা যেত, যেখানে চিকিৎসকদেরও ভোট দিতে সুবিধা হতো। আবার সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি হতো না।'
বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, 'আগে ভোটারসংখ্যা কম ছিল, তাই এত ব্যাপক আয়োজন ছিল না। তবে বর্তমান আয়োজকদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ছিল। এত উচ্চ মর্যাদার পেশাজীবী সংগঠনের কোনো আয়োজনে যদি মানুষের দুর্ভোগ হয় সেটা দুঃখজনক।'
এদিকে ভোটকেন্দ্রে বেশি সময় লাগায় চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ফিরতে অনেকটা দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক চিকিৎসক।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব ডা. আব্দুল গণি মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্যালট যেভাবে করা হয়েছে, তাতে প্রার্থী খুঁজে খুঁজে ভোট দিতে একেকজন ভোটারের দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়েছে।'
রোগী ও জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএর বর্তমান মহাসচিব (বিদায়ী কমিটির) অধ্যাপক ডা. মো. সারফুদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামীতে যাতে এমন পরিস্থিতি দেখা না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আসলেই বিষয়টি বুঝে ওঠা যায়নি।'
ডেমরা থেকে আসা রোগী নাহার অনেকক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ ঝিমুনি কাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, 'হাসপাতাল খোলার দিন রোগী হালাইয়া ওনারা একখান ভোট পাতছে, এতই যদি ভোট করন লাগে, তাইলে ডাক্তারি ছাইড়্যা হেরা রাজনীতি করলেই তো পারে।'
কমবেশি এ রকম চিত্রই গতকাল দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল দেশের বড় হাসপাতালগুলোতে। আর এ রকম অবস্থা সৃষ্টি হয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। গতকাল ছিল এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিএমএ নির্বাচন ঘিরে গতকাল ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনাসহ সারা দেশেই দেখা গেছে হাসপাতাল ফাঁকা করে, রোগী ফেলে রেখে চিকিৎসকরা মেতে উঠেছেন ভোটের উৎসবে। সারা দেশে প্রায় ৩৩ হাজার চিকিৎসক ভোটার হিসেবে ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার সর্বোচ্চ- ১৩ হাজার ৩৩২ জন। ফলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে।
সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের সামনে একজন নামকরা চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা হতেই বললেন, 'এই যে ভোট দিয়ে এলাম।' কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি চলে যান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রের চারপাশে ভোটার অর্থাৎ চিকিৎসকদের ভিড় বাড়তে থাকে। বেশির ভাগই আসেন হাসপাতালে রোগী ফেলে রেখে। কেউ বা মেডিক্যাল শিক্ষার ক্লাস ফেলে। সবাই আসেন ভোট দিতে। প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার এক পাশ আটকে দিয়ে চলে ভোটের কাজ। তাতে দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে রোগীদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই হাসপাতালের প্রভাবশালী কর্মকর্তা নিজেই একজন বড় প্রার্থী। তাহলে অন্য চিকিৎসকরা কী করবেন? শুধু তো ভোট দিয়ে ফিরে এলে হবে না, ভোটের জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত থাকাটাও তো তাঁদের কাছে খুব জরুরি। তাই হয়তো ভোট বাদ দিয়ে রোগী দেখতে আসার মতো সাহস অনেকেই পাননি।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগীদের ভিড় দেখা যায় অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। আবার অনেকে এসে নির্দিষ্ট চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরিবর্তে আরেকজন চিকিৎসা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আগেই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের পালা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। তাই কোনো সমস্যা হয়নি। তবে অন্য দিনের চেয়ে রোগীর সংখ্যা অর্ধেক ছিল।'
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক রাশেদুল হাসান বলেন, 'পালা করে চিকিৎসকরা ভোট দিতে গেছেন। তবু কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। বন্ধের দিনে ভোট করতে পারলে এমন সমস্যা হতো না।'
শুধু সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালেই নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও ছিল প্রায় একই ধরনের চিত্র। বিকেল ৪টায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মাসুদুল আলম তুষার কাকরাইল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে তাঁকে নেওয়া হয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সে সময় ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিলেন মাত্র একজন চিকিৎসক। তিনি রোগীর পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান। তুষারের তাৎক্ষণিক অর্থোপেডিক চিকিৎসকের দরকার হলেও এমন কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ফোন করে চিকিৎসকদের খোঁজ জানতে চাইলে সবাই বলেন, 'ভোট তো, একটু ব্যস্ত!'
সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেমের গেটের কাছে বসে ছিলেন নুরুল হক নামের এক বয়স্ক রোগী। বললেন, 'যেই স্যারের কাছে আইছি, হ্যায় নাহি ভোডে গেছে। কুনসুম আয় না আয় কইতে পারি না। এহন কী করমু হেইডা চিন্তা করতে আছেলাম।'
হাসপাতাল ছেড়ে বড়-ছোট সব চিকিৎসকই গতকাল ভিড় জমান জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে বিএমএ কার্যালয়ের সামনে। এর ফলে রোগীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তাতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হাসপাতাল ও অফিস খোলার দিন চিকিৎসকদের মতো পেশাজীবীরা রাজপথ বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করে ভোট উৎসবে মেতে ওঠায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুরো বিষয়টি উদ্ভট লাগছে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন আচরণ আশা করা যায় না। বিশেষ করে যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের এভাবে ভোটের নামে রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করা আইনগতভাবেও অন্যায়। আর চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালের রোগী দেখার দায়িত্ব ফেলে রেখে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকা চিকিৎসানীতিরও পরিপন্থী।'
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী এবং সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক নিজেও গতকালের পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, 'আসলেই ব্যাপারটি ভালো হয়নি। খোলার দিনে এ ভোটের আয়োজন না করে বন্ধের দিনে করলেই ভালো হতো।'
প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ভোটের তারিখ ও স্থান ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিএমএ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি চিকিৎসক হয়েও এমন অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এমনভাবে এটা আয়োজন করা ঠিক হয়নি। অন্য কোনো ভেন্যুতে খুব সহজেই এটা করা যেত, যেখানে চিকিৎসকদেরও ভোট দিতে সুবিধা হতো। আবার সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি হতো না।'
বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, 'আগে ভোটারসংখ্যা কম ছিল, তাই এত ব্যাপক আয়োজন ছিল না। তবে বর্তমান আয়োজকদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ছিল। এত উচ্চ মর্যাদার পেশাজীবী সংগঠনের কোনো আয়োজনে যদি মানুষের দুর্ভোগ হয় সেটা দুঃখজনক।'
এদিকে ভোটকেন্দ্রে বেশি সময় লাগায় চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ফিরতে অনেকটা দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক চিকিৎসক।
বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির মহাসচিব ডা. আব্দুল গণি মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্যালট যেভাবে করা হয়েছে, তাতে প্রার্থী খুঁজে খুঁজে ভোট দিতে একেকজন ভোটারের দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়েছে।'
রোগী ও জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএর বর্তমান মহাসচিব (বিদায়ী কমিটির) অধ্যাপক ডা. মো. সারফুদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামীতে যাতে এমন পরিস্থিতি দেখা না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আসলেই বিষয়টি বুঝে ওঠা যায়নি।'
No comments