গোলটেবিল বৈঠক- এইডস নিয়ে অপবাদ দূর করতে সঠিক তথ্য চাই
এইচআইভি বা এইডস রোগকে ঘিরে অপবাদ বা বৈষম্য দূর করার জন্য মানুষকে সঠিক তথ্য জানানো জরুরি। এইচআইভি বা এইডস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এইচআইভি সংক্রমণ, এমনকি তা থেকে একপর্যায়ে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও যথাযথ চিকিত্সা নিলে এখন ২০-৩০ বছর বেঁচে থাকা সম্ভব।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় প্রথম আলো ‘অপবাদ ও বৈষম্য—এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। আগামীকাল ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এ উপলক্ষে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অনেকেই বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এ দেশে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে কাজ চললেও এখনো এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা দুঃখজনক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়ছে। অপবাদ বা বৈষম্য এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, এইডস নিয়ে বিশ্বে যখন প্রথম কাজ শুরু হয়েছিল, তখনো আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। সেই আতঙ্ক এখনো আছে। এইচআইভি ও এইডসকে ঘিরে অপবাদ ও বৈষম্যের মূলে রয়েছে এই আতঙ্ক।
এইচআইভি আক্রান্ত বা এইডস রোগীদের চিকিত্সাব্যবস্থায় লক্ষণীয় অগ্রগতি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন অনেক ভালো ওষুধ পাওয়া যায়। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে এইডস নিয়ে মানুষ অনেক বছর বাঁচতে পারে।’ উদাহরণ দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯০ সালে এ দেশে শনাক্ত হওয়া দ্বিতীয় এইডস রোগী এখনো বেঁচে আছেন। তাঁর সন্তানের দেহে এইচআইভি নেই।
জাতীয় এইডস/ এসটিডি কার্যক্রমের লাইন ডিরেক্টর মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, তাঁরা এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় না, তা জানানোর জন্য প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহূত গ্লাস, থালা-বাসন বা কাপড় ব্যবহার করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহূত পুকুরে স্নান করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত চুষে মশা আরেকজনকে কামড়ালে বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করলে এইচআইভি ছড়ায় না।
এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘মুক্ত আকাশ’-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তি বলেন, পরিবারে ও সমাজে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা এখনো নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি চিকিত্সকদের মধ্যেও অযৌক্তিক আচরণের ঘটনা আছে। মুক্তি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিনি এইচআইভি সংক্রমিত এক অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। রোগী নিজে থেকে জানান তিনি এইচআইভি পজিটিভ। এ কথা জানার পর ওই চিকিত্সক অস্ত্রোপচারে রাজি হননি।
যেসব দেশে বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেখানে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা সেবা কম পায় বলে উল্লেখ করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, এ দেশের কিছু আইন সমকামী বা হিজড়াদের মতো এইচআইভি সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে। সালেহ আহমেদ জানান, তাঁদের কর্ম এলাকায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়ে আইনজীবীদের কাছে কেউ আসছে না। এ বিষয়ে ভারতের আদালতে একাধিক ইতিবাচক রায় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আইনি হাতিয়ার ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
বৈঠকে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দুই শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের একজন জেবিন আলম বলেন, কিশোর-কিশোরীরা সঠিক তথ্য জানার জন্য কার কাছে যাবে, তা ঠিক করতে পারে না। মো. আফতাব উদ্দিন নামের অন্যজন বলেন, পাঠ্যবইতে এইচআইভি ও এইডস বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অনেক শিক্ষকই শ্রেণীকক্ষে বিষয়টি পড়ান না।
একাধিক আলোচক পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে অপবাদ ও বৈষম্য দূর করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
ইউএনএফপিএর ফোকাল পয়েন্ট, এইচআইভি/ এইডসের খন্দকার এজাজুল হক বলেন, শুরুর দিকে বলা হতো সমকামীসহ ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণকারী ব্যক্তিদের এই রোগ হয়। এভাবেই অপবাদের বীজ বোনা হয়েছিল। ভয়ে অনেক সংক্রমিত মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখে, চিকিত্সাসেবা নেয় না বা পায় না। এ কারণে তাদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
ইউএনএইডসের সোশ্যাল মোবিলাইজেশন ও পার্টনারশিপ উপদেষ্টা মুনির আহমেদ বলেন, যদি ইতিবাচকভাবে তথ্য সরবরাহ করা যায়, তাহলে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে ভয় দূর হবে।
বেসরকারি এইটাম হাসপাতাল এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীদের চিকিত্সা দেয়। এর নির্বাহী পরিচালক জাহিদ মো. মাসুদ নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সঠিক তথ্য মানুষকে বৈষম্য থেকে রক্ষা করে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া শিকদার বলেন, যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলেই এই পেশার চর্চা ও চাহিদা শেষ হয়ে যায় না। পুরুষ সমকামী, হিজড়া, যৌনকর্মী ও ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করলে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়বে।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অনেকেই বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এ দেশে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে কাজ চললেও এখনো এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা দুঃখজনক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়ছে। অপবাদ বা বৈষম্য এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, এইডস নিয়ে বিশ্বে যখন প্রথম কাজ শুরু হয়েছিল, তখনো আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। সেই আতঙ্ক এখনো আছে। এইচআইভি ও এইডসকে ঘিরে অপবাদ ও বৈষম্যের মূলে রয়েছে এই আতঙ্ক।
এইচআইভি আক্রান্ত বা এইডস রোগীদের চিকিত্সাব্যবস্থায় লক্ষণীয় অগ্রগতি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন অনেক ভালো ওষুধ পাওয়া যায়। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে এইডস নিয়ে মানুষ অনেক বছর বাঁচতে পারে।’ উদাহরণ দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯০ সালে এ দেশে শনাক্ত হওয়া দ্বিতীয় এইডস রোগী এখনো বেঁচে আছেন। তাঁর সন্তানের দেহে এইচআইভি নেই।
জাতীয় এইডস/ এসটিডি কার্যক্রমের লাইন ডিরেক্টর মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, তাঁরা এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় না, তা জানানোর জন্য প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহূত গ্লাস, থালা-বাসন বা কাপড় ব্যবহার করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহূত পুকুরে স্নান করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত চুষে মশা আরেকজনকে কামড়ালে বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করলে এইচআইভি ছড়ায় না।
এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘মুক্ত আকাশ’-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তি বলেন, পরিবারে ও সমাজে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা এখনো নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি চিকিত্সকদের মধ্যেও অযৌক্তিক আচরণের ঘটনা আছে। মুক্তি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিনি এইচআইভি সংক্রমিত এক অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। রোগী নিজে থেকে জানান তিনি এইচআইভি পজিটিভ। এ কথা জানার পর ওই চিকিত্সক অস্ত্রোপচারে রাজি হননি।
যেসব দেশে বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেখানে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা সেবা কম পায় বলে উল্লেখ করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, এ দেশের কিছু আইন সমকামী বা হিজড়াদের মতো এইচআইভি সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে। সালেহ আহমেদ জানান, তাঁদের কর্ম এলাকায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়ে আইনজীবীদের কাছে কেউ আসছে না। এ বিষয়ে ভারতের আদালতে একাধিক ইতিবাচক রায় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আইনি হাতিয়ার ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
বৈঠকে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দুই শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের একজন জেবিন আলম বলেন, কিশোর-কিশোরীরা সঠিক তথ্য জানার জন্য কার কাছে যাবে, তা ঠিক করতে পারে না। মো. আফতাব উদ্দিন নামের অন্যজন বলেন, পাঠ্যবইতে এইচআইভি ও এইডস বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অনেক শিক্ষকই শ্রেণীকক্ষে বিষয়টি পড়ান না।
একাধিক আলোচক পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে অপবাদ ও বৈষম্য দূর করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
ইউএনএফপিএর ফোকাল পয়েন্ট, এইচআইভি/ এইডসের খন্দকার এজাজুল হক বলেন, শুরুর দিকে বলা হতো সমকামীসহ ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণকারী ব্যক্তিদের এই রোগ হয়। এভাবেই অপবাদের বীজ বোনা হয়েছিল। ভয়ে অনেক সংক্রমিত মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখে, চিকিত্সাসেবা নেয় না বা পায় না। এ কারণে তাদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
ইউএনএইডসের সোশ্যাল মোবিলাইজেশন ও পার্টনারশিপ উপদেষ্টা মুনির আহমেদ বলেন, যদি ইতিবাচকভাবে তথ্য সরবরাহ করা যায়, তাহলে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে ভয় দূর হবে।
বেসরকারি এইটাম হাসপাতাল এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীদের চিকিত্সা দেয়। এর নির্বাহী পরিচালক জাহিদ মো. মাসুদ নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সঠিক তথ্য মানুষকে বৈষম্য থেকে রক্ষা করে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া শিকদার বলেন, যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলেই এই পেশার চর্চা ও চাহিদা শেষ হয়ে যায় না। পুরুষ সমকামী, হিজড়া, যৌনকর্মী ও ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করলে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়বে।
No comments