কথা ও গানে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান স্মরণ- সংস্কৃতি সংবাদ
বাংলা লোকসঙ্গীতের প্রাণপুরুষ ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান। এদেশের লোকসঙ্গীতের চর্চা ও প্রসারে নিরন্তর কাজ করেছেন এই গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। ৩১ আগস্ট ছিলমরমিএইশিল্পীরবাইশতমপ্রয়াণবার্ষিকীশউপমহাদেশের প্রখ্যাত এই লোকসঙ্গীত শিল্পীকে শনিবার গান ও কথামালায় স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শুদ্ধ লোকসঙ্গীতের
প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত সাংস্কৃতিক সংগঠন লোকাঙ্গন। বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান ও আলোচনায় দুই পর্বে বিভক্ত ছিল অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনায় অংশ নেন মোমতাজ আলী খানের মেয়ে লোকসঙ্গীতশিল্পী রূপু খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন। সভাপতিত্ব করেন লোকাঙ্গনের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র শীল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামেন্দু মজুমদার বলেন, আজকের এই আয়োজনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান এখন পর্যন্ত তাঁর প্রতিভা অনুযায়ী স্বীকৃতি পাননি। এদেশের লোকসঙ্গীত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রাপ্য সম্মান পাননি। তিনি বাঙালীর জাগরণের জন্য গান রচনা করেছেন। মানুষকে লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছেন। শিল্পী হলেও তাঁর মধ্যে সব সময় সামাজিক দায়বদ্ধতা ছিল। তাঁর গান সংরক্ষণে সরকারীভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মাত্র ১৭ বছর বয়সে কলকাতায় প্রথম মোমতাজ আলী খানের গান রেকর্ড বের হয় এবং সেখানকার বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এই শিল্পী প্রথমে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পরে তা লোকসঙ্গীতে প্রয়োগ করেছেন। এ কারণে তাঁর লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা ছিল অনেক সমৃদ্ধ। লোকসঙ্গীতের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিক সংস্কৃতির চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি। তাই লোকসঙ্গীতের চর্চা বৃদ্ধি পেলে এদেশের সংস্কৃতিক ভুবন হবে প্রাণবন্ত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান ছিলেন এদেশের লোকসঙ্গীতের আইকন। কলকাতা থেকে গান শিখে আসা এই মানুষটি এদেশের লোকগানের বিকাশে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ওস্তাদ মোমতাজ আলী খানের লেখা ও সুর করা কিছু গানসহ বিভিন্ন লোকগীতি দিয়ে সাজানো হয় দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই লোকাঙ্গনের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া এত যতেœ গড়াইয়াছেন সাঁই’ গানটি। এরপর ছিল একক কণ্ঠে মাটির গানের পরিবেশনা। নারায়ণচন্দ্র শীলের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমায় খুন কইরাছে’। তুমি নিশীথে যাইও ফুলবনে ভোমরা গানটি পরিবেশন করেন শ্যামল কুমার শীল। লালনগীতি ঘরের চাবি পরের হাতে গেয়ে শোনান মৌমিতা মুমু। তুমি নি আমার বন্ধুরে গানটি পরিবেশন করেন শায়লা শারমীন। শামীম হোসেন গেয়ে শোনান ‘প্রাণের বন্ধুয়ারে’। মঞ্জু সাহার কণ্ঠে গীত হয় ‘গুন গুনাগুন গান গাহিয়া নীল ভোমরা যায়’। পাখি কইও বন্ধুয়ার নাগাল পাইলে গানটি গেয়ে শোনান অর্পিতা সরকার। মামুনুর রহমানের কণ্ঠে গীত হয় ‘পরান বন্ধে বানছে পরান’। প্রেমের মরা জলে ডোবে না গানটি পরিবেশন করেন ফয়েজ তুষার। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান খগেন্দ্রনাথ সরকার, সাইদুল ইসলাম, নিপা কর পাপিয়া, আফসানা জাফর। তাদের পরিবেশিত গানগুলো ছিল ‘চুন বেশি খাইলে মুখ পুইড়া যায়’, ‘নিরিখ বন্ধুয়ার দুই নয়ন’, ‘আমার আশায় থাকরে দিন’, ‘ভবে পর কোনদিন হয় না আপন।
শিশু সংগঠন ভোর হলোর প্রথম জাতীয় সম্মেলন
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা পথিকৃৎ নাট্যকার সেলিম আল দীনের স্বপ্নের রূপরেখায় গড়া শিশুদের সংগঠন ভোর হলো। শনিবার হয়ে গেল ক্ষুদে শিল্পীদের এই সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে সেগানে অনুষ্ঠিত প্রথম এ সম্মেলনে জড়ো হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের তিন শতাধিক শিশুশিল্পী। দিনব্যাপী এ আয়োজনে শিশুকিশোরদের নানা পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংগঠনের জাতীয় ও আঞ্চলিক কমিটি গঠনের পাশাপাশি ছিল আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা, সঙ্গীত পরিবেশনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মূকাভিনয়, অভিনয় ও নাচের পরিবেশনা।
সকালে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, অভিনেতা আফজাল হোসেন, লেখক আনিসুল হক, আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ ও হুমায়ুন কবীর হিমু।
উদ্বোধনের পর সকাল থেকেই চলে রেজিস্ট্রেশন পর্ব। এরপর বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় শিশুশিল্পীদের নানা পরিবেশনাভিত্তিক প্রতিযোগিতা। এসব পরিবেশনার মাধ্যমে শিশুদের সুকুমার চর্চাকে উৎসাহিত করতে ৬ বরেণ্য বাঙালীর নামে সনদ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতির ছয় মাধ্যমকে বেছে নেয়া এসব সনদ ছিলÑ মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলায় শহীদ জাহানারা ইমাম সনদ, কবিতা আবৃত্তিতে কবি সুফিয়া কামাল সনদ, সঙ্গীতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সনদ, চিত্রকলায় পটুয়া কামরুল হাসান সনদ, অভিনয়ে সেলিম আল দীন সনদ ও নাচে বুলবুল চৌধুরী সনদ। এ প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অভিনয়শিল্পী শিমুল ইউসুফ ও শতদল বড়–য়া। রাতে প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিশুশিল্পীদের হাতে এসব সনদ তুলে দেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামেন্দু মজুমদার বলেন, আজকের এই আয়োজনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান এখন পর্যন্ত তাঁর প্রতিভা অনুযায়ী স্বীকৃতি পাননি। এদেশের লোকসঙ্গীত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রাপ্য সম্মান পাননি। তিনি বাঙালীর জাগরণের জন্য গান রচনা করেছেন। মানুষকে লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছেন। শিল্পী হলেও তাঁর মধ্যে সব সময় সামাজিক দায়বদ্ধতা ছিল। তাঁর গান সংরক্ষণে সরকারীভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মাত্র ১৭ বছর বয়সে কলকাতায় প্রথম মোমতাজ আলী খানের গান রেকর্ড বের হয় এবং সেখানকার বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এই শিল্পী প্রথমে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পরে তা লোকসঙ্গীতে প্রয়োগ করেছেন। এ কারণে তাঁর লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা ছিল অনেক সমৃদ্ধ। লোকসঙ্গীতের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিক সংস্কৃতির চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি। তাই লোকসঙ্গীতের চর্চা বৃদ্ধি পেলে এদেশের সংস্কৃতিক ভুবন হবে প্রাণবন্ত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান ছিলেন এদেশের লোকসঙ্গীতের আইকন। কলকাতা থেকে গান শিখে আসা এই মানুষটি এদেশের লোকগানের বিকাশে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ওস্তাদ মোমতাজ আলী খানের লেখা ও সুর করা কিছু গানসহ বিভিন্ন লোকগীতি দিয়ে সাজানো হয় দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই লোকাঙ্গনের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া এত যতেœ গড়াইয়াছেন সাঁই’ গানটি। এরপর ছিল একক কণ্ঠে মাটির গানের পরিবেশনা। নারায়ণচন্দ্র শীলের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমায় খুন কইরাছে’। তুমি নিশীথে যাইও ফুলবনে ভোমরা গানটি পরিবেশন করেন শ্যামল কুমার শীল। লালনগীতি ঘরের চাবি পরের হাতে গেয়ে শোনান মৌমিতা মুমু। তুমি নি আমার বন্ধুরে গানটি পরিবেশন করেন শায়লা শারমীন। শামীম হোসেন গেয়ে শোনান ‘প্রাণের বন্ধুয়ারে’। মঞ্জু সাহার কণ্ঠে গীত হয় ‘গুন গুনাগুন গান গাহিয়া নীল ভোমরা যায়’। পাখি কইও বন্ধুয়ার নাগাল পাইলে গানটি গেয়ে শোনান অর্পিতা সরকার। মামুনুর রহমানের কণ্ঠে গীত হয় ‘পরান বন্ধে বানছে পরান’। প্রেমের মরা জলে ডোবে না গানটি পরিবেশন করেন ফয়েজ তুষার। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান খগেন্দ্রনাথ সরকার, সাইদুল ইসলাম, নিপা কর পাপিয়া, আফসানা জাফর। তাদের পরিবেশিত গানগুলো ছিল ‘চুন বেশি খাইলে মুখ পুইড়া যায়’, ‘নিরিখ বন্ধুয়ার দুই নয়ন’, ‘আমার আশায় থাকরে দিন’, ‘ভবে পর কোনদিন হয় না আপন।
শিশু সংগঠন ভোর হলোর প্রথম জাতীয় সম্মেলন
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা পথিকৃৎ নাট্যকার সেলিম আল দীনের স্বপ্নের রূপরেখায় গড়া শিশুদের সংগঠন ভোর হলো। শনিবার হয়ে গেল ক্ষুদে শিল্পীদের এই সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে সেগানে অনুষ্ঠিত প্রথম এ সম্মেলনে জড়ো হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের তিন শতাধিক শিশুশিল্পী। দিনব্যাপী এ আয়োজনে শিশুকিশোরদের নানা পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংগঠনের জাতীয় ও আঞ্চলিক কমিটি গঠনের পাশাপাশি ছিল আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা, সঙ্গীত পরিবেশনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মূকাভিনয়, অভিনয় ও নাচের পরিবেশনা।
সকালে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, অভিনেতা আফজাল হোসেন, লেখক আনিসুল হক, আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ ও হুমায়ুন কবীর হিমু।
উদ্বোধনের পর সকাল থেকেই চলে রেজিস্ট্রেশন পর্ব। এরপর বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় শিশুশিল্পীদের নানা পরিবেশনাভিত্তিক প্রতিযোগিতা। এসব পরিবেশনার মাধ্যমে শিশুদের সুকুমার চর্চাকে উৎসাহিত করতে ৬ বরেণ্য বাঙালীর নামে সনদ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতির ছয় মাধ্যমকে বেছে নেয়া এসব সনদ ছিলÑ মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলায় শহীদ জাহানারা ইমাম সনদ, কবিতা আবৃত্তিতে কবি সুফিয়া কামাল সনদ, সঙ্গীতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সনদ, চিত্রকলায় পটুয়া কামরুল হাসান সনদ, অভিনয়ে সেলিম আল দীন সনদ ও নাচে বুলবুল চৌধুরী সনদ। এ প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অভিনয়শিল্পী শিমুল ইউসুফ ও শতদল বড়–য়া। রাতে প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিশুশিল্পীদের হাতে এসব সনদ তুলে দেয়া হয়।
No comments