নিন্দিত নরকে by রাজীব হাসান
অনেকের কাছেই যিনি ছিলেন বড় অনুপ্রেরণা, ডোপপাপে আজ তিনি সব হারিয়েছেন। সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রংকে নিয়ে লিখেছেন রাজীব হাসান মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যু সংবাদ ব্যথিত করল পুরো বিশ্বকে। শুধু নামেই নয়, এই দুই আমস্ট্রংয়ের কীর্তির মধ্যেও আছে মিল।
এক আর্মস্ট্রং ধূলিধূসর চন্দ্রপৃষ্ঠে এঁকে দিয়েছিলেন প্রথম পদচিহ্ন। আরেক আর্মস্ট্রংয়ের কীর্তি চাঁদে মানুষের প্রথম পা রাখার মতোই। গত ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটিতে মারা গেছেন নিল আর্মস্ট্রং; আর প্রায় একই সময় ভক্তদের হূদয় থেকে মৃত্যু হয়েছে ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের!
একটা মানুষকে আপনি দেবতাজ্ঞানে অনেক দিন পূজা দিলেন। তাঁকে আদর্শ মেনে বিশ্বের লাখো লাখো কিশোর-তরুণ বেড়ে উঠতে থাকল। অনেকের ঘরে শোভা পেতে থাকল তাঁর পোস্টার। কিন্তু একদিন হুট করে সেই সাজানো পৃথিবী টলে উঠল। দেবতার আসন থেকে তিনি নিক্ষিপ্ত হলেন ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে! এ যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির কোনো আখ্যান!
আরও অনেকের ঠিক মনের কথাটাই বলেছেন স্টেফানি রাইস। অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিকজয়ী সাঁতারু বলেছেন, ‘ল্যান্স আমার কাছে ছিল বড় এক অনুপ্রেরণা। আমি জানি না, এখন কী ভাবব।’
শুধু সাইক্লিং নয়, সাইক্লিংয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আর্মস্ট্রং বিশ্বের সব ক্রীড়াবিদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন প্রেরণার প্রতিমূর্তি। এই তো কিছুদিন আগে ক্যানসারে আক্রান্ত যুবরাজ সিং তন্ময় হয়ে পড়েছেন আর্মস্ট্রংয়ের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জিতে আসার গল্প নিয়ে লেখা আত্মজীবনী ইট’স নট অ্যাবাউট দ্য বাইক: মাই জার্নি ব্যাক টু লাইফ।
সত্যিই ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের জীবনের মধ্যে ছিল অবিশ্বাস্য এক আখ্যান। ১৯৯৬ সালে শরীরে ধরা পড়েছিল ক্যানসার। বয়স তখন মাত্র ২৫। টগবটে এক যুবকের পুরো পৃথিবী টলে উঠেছিল চিকিৎসকদের কথায়। কারণ, ক্যানসার ধরা পড়েছে তৃতীয় পর্যায়ে। ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর। আক্রান্ত হয়েছে ফুসফুস, উদর আর মস্তিষ্ক। তাঁর অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৪০ শতাংশ!
সেই আর্মস্ট্রং শুধু বেঁচে ফেরেননি, সেই আর্মস্ট্রং শুধু ক্যানসারকেই জেতেননি, জিতেছেন সাইক্লিংয়ের সবচেয়ে মর্যাদার আসর ট্যুর ডি ফ্রান্স। তা-ও রেকর্ড সাত-সাতবার, যে কীর্তি করে দেখাতে পারেনি আর কেউই।
ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের কারণেই সাইক্লিংয়ের পরিচিতি ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। খেলাটি অচেনা কিংবা জনপ্রিয় নয়—এমন দেশের অনেক মানুষও শুধু তাঁর কীর্তির কারণেই জানতেন ল্যান্স আর্মস্ট্রং নামটি।
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে এমন কীর্তি গড়ায় আর্মস্ট্রং হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের অনেক মানুষের আশার বাতিঘর। তাঁর জীবনের গল্প চরম হতাশাবাদীকেও নতুন প্রেরণার রেখা দেখিয়েছে। যুবরাজেরা তাঁর আত্মজীবনী পড়ে পেয়েছেন ক্যানসার নামের ঘাতকব্যাধির সঙ্গে লড়াই করার প্রেরণা। কিন্তু সেই আর্মস্ট্রংয়ের শরীরে যে আরও একটি রোগের ঘুণপোকায় ধরেছে, কে তা জানত!
ল্যান্স আর্মস্ট্রংকে নিয়ে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন প্রচ্ছন্নভাবে হলেও ছিল। বেশ কয়েকবার উঠেছে ডোপ নেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু এবার পার পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০০৯ ও ২০১০ সালে নেওয়া তাঁর রক্তের নমুনায় ইপিওর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পারফরম্যান্সবর্ধক এই ড্রাগ নেওয়ার জন্য গত জুন মাসে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্রের ডোপিং-বিরোধী সংস্থা ইউএসএডিএ।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে আইনি লড়াইয়ে যান আর্মস্ট্রং। কিন্তু সেই লড়াই থেকে নিজেই পিছু হটেন গত মাসের শেষাশেষি। পরাজয় অনিবার্য জেনেই হয়তো! ফলে ইউএসএডিএর সাজা কার্যকর হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালের ১ আগস্ট থেকে যা কিছু অর্জন করেছেন, সেই ট্যুর ডি ফ্রান্সের রেকর্ড টানা সাতটি শিরোপাসহ আরও অসংখ্য প্রাইজমানি, সবই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাঁকে। এত দিনে, এত পরিশ্রমে গড়া সামাজ্য শেষ পর্যন্ত বালুকাবেলার খেলাঘরই হয়ে গেল!
আর্মস্ট্রং এখনো সরাসরি দোষ স্বীকার করেননি; কিন্তু নৈতিক জোরটা হারিয়ে যে ফেলেছেন, সেটা স্পষ্ট। সমস্যা হলো, এখনো অনেক মানুষ তাঁকে দেবতার আসনেই রাখতে চান। এখনো তাঁর নিজ হাতে গড়া আর্মস্ট্রং ফাউন্ডেশন ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক মানুষের শেষ অবলম্বন। বেঁচে থাকার আশার নোঙর। আর্মস্ট্রং আমাদের সত্যিই এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন। আমরা কোন মানুষকে বেছে নেব? জেনে-বুঝেও যিনি আমাদের সঙ্গে, আমাদের বিশ্বাস আর ভালোবাসার সঙ্গে প্রতারণা করে ডোপ নিয়েছেন, তাঁকে? নাকি সেই আর্মস্ট্রংকে, যিনি হাল ছেড়ে মৃত্যুর প্রহর গোনা মানুষটির কানেও আশার, সম্ভাবনার কানমন্ত্র পড়িয়ে দেন—তাঁকে!
একটা মানুষকে আপনি দেবতাজ্ঞানে অনেক দিন পূজা দিলেন। তাঁকে আদর্শ মেনে বিশ্বের লাখো লাখো কিশোর-তরুণ বেড়ে উঠতে থাকল। অনেকের ঘরে শোভা পেতে থাকল তাঁর পোস্টার। কিন্তু একদিন হুট করে সেই সাজানো পৃথিবী টলে উঠল। দেবতার আসন থেকে তিনি নিক্ষিপ্ত হলেন ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে! এ যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির কোনো আখ্যান!
আরও অনেকের ঠিক মনের কথাটাই বলেছেন স্টেফানি রাইস। অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিকজয়ী সাঁতারু বলেছেন, ‘ল্যান্স আমার কাছে ছিল বড় এক অনুপ্রেরণা। আমি জানি না, এখন কী ভাবব।’
শুধু সাইক্লিং নয়, সাইক্লিংয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আর্মস্ট্রং বিশ্বের সব ক্রীড়াবিদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন প্রেরণার প্রতিমূর্তি। এই তো কিছুদিন আগে ক্যানসারে আক্রান্ত যুবরাজ সিং তন্ময় হয়ে পড়েছেন আর্মস্ট্রংয়ের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে জিতে আসার গল্প নিয়ে লেখা আত্মজীবনী ইট’স নট অ্যাবাউট দ্য বাইক: মাই জার্নি ব্যাক টু লাইফ।
সত্যিই ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের জীবনের মধ্যে ছিল অবিশ্বাস্য এক আখ্যান। ১৯৯৬ সালে শরীরে ধরা পড়েছিল ক্যানসার। বয়স তখন মাত্র ২৫। টগবটে এক যুবকের পুরো পৃথিবী টলে উঠেছিল চিকিৎসকদের কথায়। কারণ, ক্যানসার ধরা পড়েছে তৃতীয় পর্যায়ে। ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর। আক্রান্ত হয়েছে ফুসফুস, উদর আর মস্তিষ্ক। তাঁর অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৪০ শতাংশ!
সেই আর্মস্ট্রং শুধু বেঁচে ফেরেননি, সেই আর্মস্ট্রং শুধু ক্যানসারকেই জেতেননি, জিতেছেন সাইক্লিংয়ের সবচেয়ে মর্যাদার আসর ট্যুর ডি ফ্রান্স। তা-ও রেকর্ড সাত-সাতবার, যে কীর্তি করে দেখাতে পারেনি আর কেউই।
ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের কারণেই সাইক্লিংয়ের পরিচিতি ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। খেলাটি অচেনা কিংবা জনপ্রিয় নয়—এমন দেশের অনেক মানুষও শুধু তাঁর কীর্তির কারণেই জানতেন ল্যান্স আর্মস্ট্রং নামটি।
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে এমন কীর্তি গড়ায় আর্মস্ট্রং হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের অনেক মানুষের আশার বাতিঘর। তাঁর জীবনের গল্প চরম হতাশাবাদীকেও নতুন প্রেরণার রেখা দেখিয়েছে। যুবরাজেরা তাঁর আত্মজীবনী পড়ে পেয়েছেন ক্যানসার নামের ঘাতকব্যাধির সঙ্গে লড়াই করার প্রেরণা। কিন্তু সেই আর্মস্ট্রংয়ের শরীরে যে আরও একটি রোগের ঘুণপোকায় ধরেছে, কে তা জানত!
ল্যান্স আর্মস্ট্রংকে নিয়ে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন প্রচ্ছন্নভাবে হলেও ছিল। বেশ কয়েকবার উঠেছে ডোপ নেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু এবার পার পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০০৯ ও ২০১০ সালে নেওয়া তাঁর রক্তের নমুনায় ইপিওর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পারফরম্যান্সবর্ধক এই ড্রাগ নেওয়ার জন্য গত জুন মাসে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্রের ডোপিং-বিরোধী সংস্থা ইউএসএডিএ।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে আইনি লড়াইয়ে যান আর্মস্ট্রং। কিন্তু সেই লড়াই থেকে নিজেই পিছু হটেন গত মাসের শেষাশেষি। পরাজয় অনিবার্য জেনেই হয়তো! ফলে ইউএসএডিএর সাজা কার্যকর হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালের ১ আগস্ট থেকে যা কিছু অর্জন করেছেন, সেই ট্যুর ডি ফ্রান্সের রেকর্ড টানা সাতটি শিরোপাসহ আরও অসংখ্য প্রাইজমানি, সবই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাঁকে। এত দিনে, এত পরিশ্রমে গড়া সামাজ্য শেষ পর্যন্ত বালুকাবেলার খেলাঘরই হয়ে গেল!
আর্মস্ট্রং এখনো সরাসরি দোষ স্বীকার করেননি; কিন্তু নৈতিক জোরটা হারিয়ে যে ফেলেছেন, সেটা স্পষ্ট। সমস্যা হলো, এখনো অনেক মানুষ তাঁকে দেবতার আসনেই রাখতে চান। এখনো তাঁর নিজ হাতে গড়া আর্মস্ট্রং ফাউন্ডেশন ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক মানুষের শেষ অবলম্বন। বেঁচে থাকার আশার নোঙর। আর্মস্ট্রং আমাদের সত্যিই এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন। আমরা কোন মানুষকে বেছে নেব? জেনে-বুঝেও যিনি আমাদের সঙ্গে, আমাদের বিশ্বাস আর ভালোবাসার সঙ্গে প্রতারণা করে ডোপ নিয়েছেন, তাঁকে? নাকি সেই আর্মস্ট্রংকে, যিনি হাল ছেড়ে মৃত্যুর প্রহর গোনা মানুষটির কানেও আশার, সম্ভাবনার কানমন্ত্র পড়িয়ে দেন—তাঁকে!
No comments