রাজবাড়ীতে ফতোয়া-বাউলরাও ধর্মান্ধতার শিকার?

রাজবাড়ীতে ২৮ জন বাউলের আধ্যাত্মবাদী সাধনাকে ইসলাম ধর্মর্বিরোধী আখ্যা দিয়ে বয়োবৃদ্ধ সাধকদের মাথার চুল কেটে নেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। মসজিদের ইমামসহ কিছু লোকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কতিপয় নেতাও এই হীন কর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে এবং এ কারণে মামলা দায়েরে বিলম্ব ঘটে।


বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মামলা ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরও পুলিশ দোষীদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ বাউল সম্প্রদায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার প্রতীক এবং তারা সব মানুষকেই সমান জ্ঞান করে বিশ্ব চরাচরের সকল আত্মার মধ্যে একের সাধনা করে। আর এটা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির আবহমানকালের ধারা। তাই বাউলদের ওপর আক্রমণ বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের সমতুল্য। এ ধরনের ঘটনা পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি বা কেউ ঘটানোর কথা চিন্তাও করেনি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছরে আমাদের সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে মৌলবাদী ধারণা এতটাই বদ্ধমূল হয়েছে যে, এখন রাজবাড়ীর মতো এককালের প্রগতিশীল চিন্তা ও আন্দোলনের জেলায় লালন ফকিরের উত্তরসূরি সাধকদের চুল কেটে দিয়ে তওবা করানোর মতো স্পর্ধা দেখাতে পারে এ সমাজেরই একদল লোক। এ ঘটনায় আমরা একাধারে বিস্মিত ও আতঙ্কিত। এভাবে জাতীয় সংস্কৃতির ওপর যদি আঘাত আসতে থাকে আর আমরা যদি তা বিনা প্রতিবাদে হজম করে যাই, তাহলে একদিন ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে বাঙালির সব অর্জনকেই নস্যাৎ করে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু হতে পারে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের পরিচয় একটাই_ তারা দেশ ও দশের দুশমন। মৌলবাদেরই আরেক রূপ হলো ফতোয়া দিয়ে মানুষকে পশ্চাৎমুখী ধ্যান-ধারণা মেনে নিতে বাধ্য করা। রাজবাড়ীর পাংশা থানার হাবাসপুর ইউনিয়নের চর রামনগর গ্রামে বাউল মতের বার্ষিক অনুষ্ঠান যারা পণ্ড করেছে এবং যারা বাউলদের চুল কেটে নেওয়াসহ নানাভাবে নাজেহাল করেছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এই প্রগতিবিরোধী শক্তির বিষদাঁত শুরুতেই ভেঙে দেওয়া না গেলে পরে পস্তাতে হতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.