পুরুষরা এগিয়ে আসুন by মো. শরিফুল ইসলাম
একটি সুশীল, আদর্শ ও উন্নত সমাজ গঠনে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীরও যে বিরাট ভূমিকা রয়েছে_ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষ সমাজ মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
নারীরা সমাজ ও পরিবারে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে। যৌতুক, পাচার, এসিড নিক্ষেপ, যৌন নির্যাতন, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, অযত্ন-অবহেলা, বাল্যবিবাহ, বঞ্চনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উলি্লখিত প্রতিটি নির্যাতনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুরুষের সংশ্লিষ্টতা যেমন রয়েছে, তেমনি পুরুষই পারে এ সব নির্যাতন প্রতিরোধ করতে। তাই শরৎচন্দ্রের ভাষায়, 'নারীর সম্মান-অসম্মানের মূল্য নির্ভর করে পুরুষের ধারণার উপর।'
নারী নির্যাতনের মধ্যে 'যৌতুক' একটি প্রধান সমস্যা। যৌতুক হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি একটি আর্থিক নির্যাতনের নামান্তর মাত্র। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করা বা যৌতুকের দাবি করা মানে নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করা। নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া। তাই নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করার এ হীন মানসিকতা দূর করতে পারলেই যৌতুক নিয়ে যে নির্যাতন হয় তা বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব। যৌতুককে নারী নির্যাতনের মূল ভিত্তি বলা যেতে পারে। কেননা, যৌতুক নিয়ে প্রাথমিকভাবে মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে তা শারীরিক নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ এমনকি তা একজন নারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেখানে যৌতুক নারীর জন্য একটি অভিশাপ, সেখানে পুরুষের একটি শব্দ_ 'না' অর্থাৎ যৌতুককে না বললেই নারী সমাজ যৌতুকের এ ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
নারী নির্যাতনের আরেকটি ঘৃণিত রূপ হচ্ছে যৌন নির্যাতন। আমাদের যুবসমাজ এ ধরনের নির্যাতনে লিপ্ত হওয়ার আগে কখনোই কি মনে করে না যে, তাদের নিজেরও মা-বোন আছে? যদি তারা এতটুকু সাধারণ বিশ্বাস অন্তরে লালন করত, তাহলে পুরুষ শাষিত এ সমাজের নারীরা অন্তত যৌন নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেত। আমাদের পুরুষ সমাজের মানসিকতাকে উন্নত করা ও এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও ঘৃণাবোধই পারে এ নির্যাতনের দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একটি সুষ্ঠু নারীনীতি প্রণয়ন করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ যাবত প্রণীত চারটি নারীনীতির একটিও নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রথমে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দিতে হবে। তবে অনেকেই ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারীর প্রাপ্য অংশকে অস্বীকার করেন। জ্ঞানপাপীদের এ ব্যাখ্যা পরিহার করতে হবে। কেননা, যখন একজন নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে তখন বিয়ের পরে যেমন স্বামীর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করতে হবে না, তেমনি বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানের করুণার পাত্র হয়ে মানসিক বা অন্য কোনো উপায়ে নির্যাতিত হতে হবে না। তাই একজন বাবা অথবা স্বামীই পারেন তার মেয়ে এবং স্ত্রীর সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে।
এবার বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের সমাজে এখনও বিয়ে হয় পুরুষের ইচ্ছায়। এখানে নারীর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। তাই পুরুষরা যদি অল্প বয়সের মেয়েদের বিয়ে করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে বাল্যবিবাহের মতো নির্যাতন আর অভিশাপ থেকে আমাদের নারী সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব।
উলি্লখিত প্রতিটি নির্যাতনের সঙ্গে পুরুষের সংশ্লিষ্টতা যেমন লক্ষণীয়, তেমনি এগুলো প্রতিরোধেও পুরুষের ভূমিকা স্পষ্ট। বাবার বাড়ি থেকেই একটি মেয়ের বঞ্চনার পর্ব শুরু। লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি ব্যক্তিস্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়। বিয়ের পর শুরু হয় বঞ্চনার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে দেখা যায়, মেয়েটি স্বামীর বাড়িতে দাসীর মতো কাজ করছে, মুখ বুজে সহ্য করছে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। এ পরিস্থিতিতে একজন পুরুষ বা স্বামীই পারে এ করুণ অবস্থা থেকে একজন নারী অর্থাৎ তার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে। তবে তখন যদি স্বামী এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে তো তার স্ত্রীর জীবন হবে কণ্টকাকীর্ণ। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা যায়। রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি 'হৈমন্তী' গল্পে দেখা যায়, গল্পের নায়ক অপুর মৌনতার কারণে গল্পের নায়িকা হৈমন্তীর অকাল মৃত্যু হয়। হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য যে কয়টি কারণ মুখ্য ছিল, তার মধ্যে অপুর মৌনতা একটি। তাই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, স্বামী নামের ওই পুরুষটির প্রতিরোধী ভূমিকাই পারে একজন নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে।
মৌনতা, যৌতুক, পারিবারিক বঞ্চনা, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে নারীর অধিকার নিশ্চিত ও নারী শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরুষরাই পারে আমাদের সমাজকে নারী নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করতে। তবেই এ দেশ হবে একটি আদর্শ স্থান, বৈষম্যহীন পবিত্র ভূমি ও সম্ভাবনার দেশ। হ
নারী নির্যাতনের মধ্যে 'যৌতুক' একটি প্রধান সমস্যা। যৌতুক হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি একটি আর্থিক নির্যাতনের নামান্তর মাত্র। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করা বা যৌতুকের দাবি করা মানে নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করা। নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া। তাই নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করার এ হীন মানসিকতা দূর করতে পারলেই যৌতুক নিয়ে যে নির্যাতন হয় তা বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব। যৌতুককে নারী নির্যাতনের মূল ভিত্তি বলা যেতে পারে। কেননা, যৌতুক নিয়ে প্রাথমিকভাবে মানসিক নির্যাতন থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে তা শারীরিক নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ এমনকি তা একজন নারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেখানে যৌতুক নারীর জন্য একটি অভিশাপ, সেখানে পুরুষের একটি শব্দ_ 'না' অর্থাৎ যৌতুককে না বললেই নারী সমাজ যৌতুকের এ ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
নারী নির্যাতনের আরেকটি ঘৃণিত রূপ হচ্ছে যৌন নির্যাতন। আমাদের যুবসমাজ এ ধরনের নির্যাতনে লিপ্ত হওয়ার আগে কখনোই কি মনে করে না যে, তাদের নিজেরও মা-বোন আছে? যদি তারা এতটুকু সাধারণ বিশ্বাস অন্তরে লালন করত, তাহলে পুরুষ শাষিত এ সমাজের নারীরা অন্তত যৌন নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেত। আমাদের পুরুষ সমাজের মানসিকতাকে উন্নত করা ও এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও ঘৃণাবোধই পারে এ নির্যাতনের দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একটি সুষ্ঠু নারীনীতি প্রণয়ন করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ যাবত প্রণীত চারটি নারীনীতির একটিও নারীর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রথমে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দিতে হবে। তবে অনেকেই ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারীর প্রাপ্য অংশকে অস্বীকার করেন। জ্ঞানপাপীদের এ ব্যাখ্যা পরিহার করতে হবে। কেননা, যখন একজন নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে তখন বিয়ের পরে যেমন স্বামীর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করতে হবে না, তেমনি বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানের করুণার পাত্র হয়ে মানসিক বা অন্য কোনো উপায়ে নির্যাতিত হতে হবে না। তাই একজন বাবা অথবা স্বামীই পারেন তার মেয়ে এবং স্ত্রীর সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে।
এবার বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের সমাজে এখনও বিয়ে হয় পুরুষের ইচ্ছায়। এখানে নারীর সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। তাই পুরুষরা যদি অল্প বয়সের মেয়েদের বিয়ে করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে বাল্যবিবাহের মতো নির্যাতন আর অভিশাপ থেকে আমাদের নারী সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব।
উলি্লখিত প্রতিটি নির্যাতনের সঙ্গে পুরুষের সংশ্লিষ্টতা যেমন লক্ষণীয়, তেমনি এগুলো প্রতিরোধেও পুরুষের ভূমিকা স্পষ্ট। বাবার বাড়ি থেকেই একটি মেয়ের বঞ্চনার পর্ব শুরু। লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি ব্যক্তিস্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়। বিয়ের পর শুরু হয় বঞ্চনার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে দেখা যায়, মেয়েটি স্বামীর বাড়িতে দাসীর মতো কাজ করছে, মুখ বুজে সহ্য করছে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। এ পরিস্থিতিতে একজন পুরুষ বা স্বামীই পারে এ করুণ অবস্থা থেকে একজন নারী অর্থাৎ তার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে। তবে তখন যদি স্বামী এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে তো তার স্ত্রীর জীবন হবে কণ্টকাকীর্ণ। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা যায়। রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি 'হৈমন্তী' গল্পে দেখা যায়, গল্পের নায়ক অপুর মৌনতার কারণে গল্পের নায়িকা হৈমন্তীর অকাল মৃত্যু হয়। হৈমন্তীর মৃত্যুর জন্য যে কয়টি কারণ মুখ্য ছিল, তার মধ্যে অপুর মৌনতা একটি। তাই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, স্বামী নামের ওই পুরুষটির প্রতিরোধী ভূমিকাই পারে একজন নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে।
মৌনতা, যৌতুক, পারিবারিক বঞ্চনা, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে নারীর অধিকার নিশ্চিত ও নারী শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরুষরাই পারে আমাদের সমাজকে নারী নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করতে। তবেই এ দেশ হবে একটি আদর্শ স্থান, বৈষম্যহীন পবিত্র ভূমি ও সম্ভাবনার দেশ। হ
No comments