বন্দরের এনসিটি ইস্যু- মহিউদ্দিন-লতিফ বাগ্যুদ্ধ by একরামুল হক
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ইস্যুতে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে চলছে বাগ্যুদ্ধ। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এনসিটি টার্মিনালের দরপত্রের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
একটি বিশেষ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্ত শিথিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্দোলন শুরু করেছেন।
অন্যদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর আন্দোলনের মুখে বন্দর ইস্যুতে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে গত সপ্তাহে ঢাকায় বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ এম এ লতিফ। সাংসদ লতিফ বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের উপদেষ্টা।
অবশ্য বন্দর ইস্যুতে একদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং অন্যদিকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের দিকে স্থানীয় সাংসদ এম এ লতিফ অবস্থান নেওয়ায় দলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দলীয় নেতারা মনে করছেন।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে সাংসদ লতিফের ঐক্যকে মহিউদ্দিন চৌধুরী আমলেই নিচ্ছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের যতই প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন চট্টগ্রাম বন্দরকে মাফিয়া চক্রের কাছে জিম্মি হতে দেওয়া হবে না।’
তিনি সাইফ পাওয়ার টেক নামের একটি কোম্পানিকে ‘মাফিয়া চক্র’ অভিহিত করে বলেন, ‘এই কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আন্দোলন করেই মাফিয়া চক্রকে রুখে দেওয়া হবে।’
সাংসদ এম এ লতিফ পাল্টা জবাব দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজের ইচ্ছায় কিছু করছেন না। “আহাদ-মাহফুজচক্র” তাঁকে প্ররোচিত করছে। এই চক্র বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে “আহাদ-মাহফুজ” রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছেন। এই আন্দোলনে বন্দর ব্যবহারকারীরা ভীত নয়।’
সাংসদ এম এ লতিফ আরও বলেন, ‘এনসিটি নিয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আরও তিন মাস আগে। মহিউদ্দিন চৌধুরী দরপত্র গ্রহণের তিন দিন আগে আন্দোলনে নেমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাঁর একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণে বন্দরের উন্নয়ন ভেস্তে যেতে পারে। সাইফ পাওয়ার টেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করা মেনে নেওয়া যায় না। আমি বুঝি দেশের স্বার্থ আর নৈতিকতা। অযৌক্তিক কথাবার্তা আমরা মানব কেন?’
জবাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি দেশের নাগরিক। চোখের সামনে একটা বড় অন্যায় হয়ে যাবে—সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। আমি অতীতেও বন্দর নিয়ে আন্দোলন করেছি। আবার অন্যায় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমি মাঠে নেমেছি। ভবিষ্যতেও সব ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। তবুও অযৌক্তিক কোনো কাজ করতে দেব না।’
আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্রকাশ্যে বাগ্যুদ্ধ প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী সংগঠনের সবচেয়ে প্রবীণ নেতা। তিনি নানা বিষয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে দলের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বন্দর ইস্যুতে তিনি যে দাবি উত্থাপন করেছেন এর বেশির ভাগের গ্রহণযোগ্যতা এবং যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি। তবে এই দাবিগুলোর গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না তা আরও যাচাই-বাছাই করে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আছে।’
ইব্রাহিম হোসেন আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং এম এ লতিফের বাগ্যুদ্ধ সংগঠনে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমার মনে হয় না। তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নাগরিক হিসেবে বন্দর নিয়ে কথা বলছেন।’
No comments